logo
আপডেট : ৪ মে, ২০২৩ ১১:২৯
স্থিতিশীলতার আভাস দিচ্ছে পুজিবাজার
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ

স্থিতিশীলতার আভাস দিচ্ছে পুজিবাজার

টানা পতনের পর সম্প্রতি পুঁজিবাজার চিত্র কিছুটা বদলেছে। সূচকের পাশাপাশি বাড়ছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। পাশাপাশি লেনদেন রয়েছে বেশ সন্তোষজনক অবস্থায়। এতে বদলেছে বিনিয়োগকারীদের মানসিক অবস্থা। পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার আভাস দিচ্ছে, এমনটিই ভাবছেন তারা। ফলে দুর্বল কোম্পানি ছেড়ে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারে ফিরছেন তারা।

 

সম্প্রতি টানা দশ দিন বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর বিনিয়োগকারীরা এখন হিসাব করে বিনিয়োগ করছেন।

 

সাম্প্রতিক বাজারচিত্রে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাজার ভালো থাকায় তারা এখন বহুজাতিক, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ মৌলভিত্তিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করছেন। আর বিনিয়োগকারীরা ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠায় দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা কমেছে। বিষয়টিকে পুঁজিবাজারের জন্য ভালো লক্ষণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এদিকে সম্প্রতি ‘জেড’ ও দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের চেয়ে ভালো মানের শেয়ারের ক্রেতা-বিক্রেতা বেশি দেখা যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, তারা স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে তারা বহুজাতিক, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ভালো মানের কোম্পানি বেছে নিচ্ছেন।

 

এ প্রসঙ্গে কথা হয় বিনিয়োগকারী শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ভালো মানের কোম্পানির শেয়ারদর অনেক কম। এসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো। সে কারণে আমার পোর্টফোলিওতে এ ধরনের শেয়ার বেশি। আর দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হলে অবশ্যই ভালো মানের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিত। জেড ও দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগে লাভের চেয়ে ঝুঁকির শঙ্কা বেশি।

 

অন্যদিকে গতিশীল বাজারে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাজারের এসব পরিস্থিতিতে এখান থেকে কারসাজি চক্র সুবিধা নিতে চায়। সেজন্য বিনিয়োগকারীদের সজাগ থাকা দরকার। তাই এ বাজার থেকে কেউ যাতে সুবিধা নিতে না পারে, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর রাখা দরকার।

 

তারা বলেন, দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বেশিরভাগ সময় ঠকেন বিনিয়োগকারীরা। দর বৃদ্ধি দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানির প্রতি আকৃষ্ট হন। তাদের কেউ কেউ হয়তো মুনাফা করেন। তবে লোকসানই হয় বেশি।

 

অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোকসানে বেশি পড়ছেন। ২০১০ সালের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, সে সময় যারা জেড ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনেছিলেন, পরে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের মাথায় রাখা দরকার। ভালো শেয়ারের সঙ্গে থাকলে ঝুঁকি যেমন কম, তেমনি মুনাফার সম্ভাবনাও বেশি। তাই ভালো মানের কোম্পানির সঙ্গে থাকা উত্তম।

 

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজার যখন ভালো থাকে তখন দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা বেশি ঘটে। এতে জড়িত থাকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। তারা নানাভাবে এসব শেয়ারের দর বাড়াতে চান। আর একসময় শেয়ারগুলো চড়া দরে অন্যের কাছে বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে যান। তাই এসব ঝুঁকি এড়াতে ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ নিরাপদ।

 

একই প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজার ভালোর দিকে যাচ্ছে এটা সুখবর। তবে ‘ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সব সময়ই কিছু লোক সুবিধা নিতে চায়। তারা এমনভাবে বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলে যে, তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন না, যে কারণে তারা অতিমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করতে দুবার ভাবেন না। বেশিরভাগ সময় তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তাই এ বিষয়টি মাথায় রেখেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’

 

তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগকারীরা ভালো মানের শেয়ারে ফিরে এলে তা বাজার ও বিনিয়োগকারী সবার জন্য ভালো।

 

ভোরের আকাশ/নি