logo
আপডেট : ৪ মে, ২০২৩ ১১:৪০
রাস্তা কেটে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা, বিপাকে স্থানীয়রা
বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ

রাস্তা কেটে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা, বিপাকে স্থানীয়রা

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার তিল্লী ইউনিয়নের এই রাস্তাটি কেটে ফেলায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লী ইউনিয়ন পরিষদে এমপি কোটার বিশেষ বরাদ্দের একটি রাস্তা রাতের আধারে কে বা কারা কেটে ফেলেছে। এতে স্থানীয়দের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন তারা।

 

এ ঘটনা জানতে পেরে ইউপি চেয়ারম্যান শরীফুল ইসলাম ধলা ১০ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদে একটি বিচার বসিয়ে বরকত আলী ও হযরত আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে রাস্তা মেরামত করে দেয়ার মুচলেকা শর্তে ছেড়ে দেয় হয়। বিচারের পর উল্টো প্রশাসনের কাছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।

 

জানা যায়, গত ১৮-১৯ অর্থবছরে এমপি কোটার বিশেষ বরাদ্দের একটি সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে চরতিল্লী বাজার থেকে আইজুদ্দিন মাদবরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়। রাস্তাটি নির্মাণ করে তিল্লী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোরসালিন বাবু। নির্মিত রাস্তাটি স¤প্রসারণ করে কবরস্থান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন বর্তমান চেয়ারম্যান।

 

কিন্তু পরবর্তীতে বর্তমান চেয়ারম্যান আসায় প্রকল্পটির কাজ থেমে যায় নানা জটিলতায়। নতুন রাস্তা নির্মাণ করতে ঘরবাড়ি স্থাপনা ভাঙাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা থাকায় ওই প্রকল্পের কাজ থেমে যায়। এখানে বসবাসরত জনসাধারণ একে অপরের উঠান পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে। কারো সঙ্গে বিরোধ হলে তার সীমানা বন্ধ করে দেয়। চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। নির্মিত রাস্তার শেষ প্রান্তে পশ্চিম পার্শে হাসান আলী এক বছর আগে তার সীমানায় টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে চলাচলের পথ আটকে দেয়।হাসান আলী তার জায়গা বেড়া দিয়ে আটকের পর থেকেই বিরোধের সৃষ্টি।

 

সম্প্রতি হাসান আলী রাস্তার পাশে একটা জমিতে মাটি দিয়ে ভরাটের উদ্যোগ নেয়। কিছু মাটি দূর থেকে গাড়ি করে এনে ফেলেন। হাসান আলী সরকারি রাস্তা ব্যবহার করে মাটি ফেলবেন আর অন্যদের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেবেন এই ঈর্ষা থেকে হাসান আলীর চাচা বরকত আলী, হাসানের প্রতিবেশী হযরত আলীসহ কয়েকজন রাতের আঁধারে সরকারি রাস্তাটি কেটে মাটি সরিয়ে ফেলেন। রাস্তাটি হাসান আলীর চাচা বরকতের জমির ওপর দিয়েই নির্মিত হয়েছে। সরকারি রাস্তা নিজের জমির ওপর দিয়ে গেলেও যে কাটা যায় না এ ব্যাপারে তারা অজ্ঞ।

 

ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি জানার পর রহমত, হযরতসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মেম্বার আতোয়ার রহমানের মাধ্যমে নির্দেশ দেন যারা এ রাস্তা কেটেছে তারা যেন অতি দ্রুত এ রাস্তা মেরামত করে দেন। নতুবা আইনের আশ্রয় গ্রহণ করা হবে। লোকেরা বিষয়টিকে কর্ণপাত না করায় গত ১০ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে চৌকিদার তমছের হোসেন, ইজ্জত আলী, শুকুর আলী মাধ্যমে দোষীদের ডেকে নিয়ে বিচারে বসেন।

 

বিচারে অন্যান্য ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বরকত ও হযরত আলী স্বীকার করেন তারা রাস্তাটি কেটেছেন। তাদের সঙ্গে আরো লোক ছিল। কিন্তু অন্য কেউ এ দোষ অস্বীকার করে। চেয়ারম্যান দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাইলে পরিবারের লোকজন চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়ে রাস্তাটি মেরামত করে দেবেন মর্মে একটি মুচলেকা দিয়ে আসেন।

 

বিচারে উপস্থিত ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য সিদ্দিকুর রহমান, ৫নং ওয়ার্ডের আলহাজ, মহিলা ইউপি সদস্য নুরজাহান, ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান, সাইফুল ইসলাম বাদল, ডা. জসীম উদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা সোহেল মোল্লা সবাই বলেন, বিচারে মারধর কিংবা অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, কবরস্থান পর্যন্ত প্রস্তাবিত রাস্তার পশ্চিম পাশে হাসান আলী, আবুল হোসেন, লাবলু, হুরমত আলী, কামরুল, নুরু মিয়া, সবুরের বাড়ি। পূর্ব পাশে আজিম উদ্দিন, সহিমুদ্দিন, আজাহার, দেলোয়ার হোসেন, আখের আলী, শহীদ কাজী, সুমন কাজী। তাদের কিছু না স্থাপনা ভাঙা কিংবা অন্যত্র সরিয়ে দেয়া আর কিছু গাছপালা কর্তন করতে হবে। উপরোক্ত ব্যক্তিদের জায়গার ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করার কথা ছিল। এদের সাথে দশ-পনেরো ঘরের বাসিন্দারা হাসান আলীর দেয়া বেড়ার ফাঁক দিয়ে চলাচল করে।

 

বিচারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হয়। হযরত আলীর পেছনে হাত বাঁধা ছবি। হাত বাঁধা ছবিকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যানের নামে বিভিন্ন মিথ্যা, অপ্রীতিকর ও মানহানিকর সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

 

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান শরীফুল ইসলাম ধলা বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল মিথ্যা ও সাজানো ছবি ব্যবহার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। হযরত আলীকে দিয়ে আমাকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে এমন একটি নাটক সাজিয়েছে। বিচারে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

 

ভোরের আকাশ/নি