logo
আপডেট : ৪ মে, ২০২৩ ১৩:৫৬
ছয়টি মেশিনই নষ্ট, ক্যান্সার হাসপাতালে রেডিও থেরাপি বন্ধে মৃত্যুঝুঁকিতে রোগীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক

ছয়টি মেশিনই নষ্ট, ক্যান্সার হাসপাতালে রেডিও থেরাপি বন্ধে মৃত্যুঝুঁকিতে রোগীরা

পাঁচটি মেশিন আগে থেকেই নষ্ট ছিলো। একটি মেশিনে দেওয়া হতো রেডিও থেরাপি।সেটিও নষ্ট হওয়ায় ঈদের পর থেকে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত ক্যানসার প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে’ বন্ধ রয়েছে রেডিও থেরাপি। সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি।

 

এই হাসপাতালের রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, সব রেডিয়েশন মেশিন নষ্ট থাকায় এখানকার রোগীরা ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছে। সময়মতো রেডিও থেরাপি না পাওয়ায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে। এসব রোগীদের বেশির ভাগই গরিব। তাঁদের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয়বহুল চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া ঢাকায় অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালেও এ সেবা নেই।

 

নামপ্রকাশ না করা শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন জানান, একসময় প্রতিদিন প্রায় ৭০০ থেকে ৮৫০ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হতো, এখন সেবা বন্ধ। অথচ প্রায় প্রত্যেক ক্যানসার রোগীর চিকিৎসার একপর্যায়ে রেডিও থেরাপির প্রয়োজন হয়।

 

তারা জানান, এখানে কোবাল্ট-৬০ মেশিনে একবার থেরাপি পেতে রোগীর ব্যয় মাত্র ১০০ টাকা। অন্যদিকে লিনিয়ার মেশিনের থেরাপি পেতে দিতে হয় ২০০ টাকা। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালে রেডিয়েশন থেরাপির প্লানিং ফি ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা।

 

অর্থাৎ একজন রোগীকে রেডিও থেরাপির একটি কোর্স সম্পন্ন করতে যদি ছয়বার থেরাপি নিতে হয়, তাহলে ব্যয় হবে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে একই সেবা পেতে রোগীকে গুনতে হয় কমপক্ষে ৮৭ হাজার টাকা (কোবাল্ট মেশিনে থেরাপি নিতে)। প্রতি এক্সপোজার আড়াই হাজার টাকা করে, এর সঙ্গে প্লানিং বাবদ ২৫ হাজার টাকা। একই থেরাপি লিনিয়ার মেশিনে নিতে হলে রোগীকে গুনতে হবে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা। প্রতি এক্সপোজার সাড়ে তিন হাজার টাকা করে, এর সঙ্গে প্লানিং বাবদ আছে আরও ৩৫ হাজার টাকা।

 

ক্যান্সারের রোগীদের রেডিও থেরাপি দেওয়া জন্য এই হাসপাতালে দুটি কোবাল্ট ও চারটি লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন রয়েছে। এরমধ্য ৫ টি মেশিনই বেশ আগে থেকেই নষ্ট।

 

হাসপাতালের রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানে লিনিয়ার এক্সিলারেটর-১ ও ২ এবং কোবাল্ট-১ ও ২ কনডোমোনেশনের (মেরামত অযোগ্য) অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। চার নম্বর লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিনটিও প্রায় এক বছর ধরে নষ্ট। বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে একটি রেডিয়েশন মেশিন দিয়ে দৈনিক ১০০ থেকে ১১০ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হতো। তবে ঈদের পর থেকে সেই সেবা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের প্রতিদিনই আশ্বাস দিয়ে হয়রানি করছে।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এ মেশিনটি ঠিক করতে দেড় কোটি টাকা প্রয়োজন।

 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নিজামুল হকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, ‘একটি রেডিয়েশন মেশিনের সার্ভিস ওয়ারেন্টির মেয়াদ এখনো আছে। মেশিন নষ্ট হলে ওই কোম্পানির দায়িত্ব সেটি ব্যবহার উপযোগী করা। কেন এখনো ঠিক হয়নি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’

 

ভোরের আকাশ/নি