logo
আপডেট : ৫ মে, ২০২৩ ১০:৩৬
সরকার পতনের ‘এক দফা’য় বিএনপি
এম সাইফুল ইসলাম

সরকার পতনের ‘এক দফা’য় বিএনপি

এম সাইফুল ইসলাম: ১০ দফার দাবি থেকে সরে এসে সরকার পতনের ‘এক দফা’র আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হওয়া দলগুলোর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেয়া মতামতের ভিত্তিতে এক দফার পথে হাঁটতে যাচ্ছে বিএনপি। বৈঠক সূত্র বলছে ১০ দফা দাবি মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। তাই এখন সরকার পতনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।

 

বিএনপি ও দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলের নেতারা বলছেন ১০ দফা দাবিই তাদের মূল দাবি। তবে সরকার তাদের দাবি মেনে নেয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকায় সেখান থেকে সরে এসে তারা সরকার পতনের এক দফার দিকে যাচ্ছে। আগামীতে ‘এক দফা’ আদায় তাদের মূল লক্ষ্য।

 

জানা গেছে, ২০২২ সালের জুনের পর থেকে বিএনপি অনেকটাই শান্তিপূর্ণ টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে। ইস্যুভিত্তিক এসব কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের রাজপথমুখী করার চেষ্টা করে আসছে দলটি। কর্মসূচি পালনে সরকারি দল ও পুলিশের কঠোর মনোভাবের মধ্যেও কর্মসূচিতে রাজপথে অবস্থান করে আসছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। দলটি এখন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে বর্তমান সরকারের পতনের বিকল্প কিছু দেখছে না। বিএনপির সামনে রাজপথ ছাড়া আপাতত কোনো পথ খোলা নেই বলে মনে করছেন খোদ দলটির নেতাকর্মীরা।

 

সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৮ মাস বাকি থাকায় ক্রমেই আন্দোলনের গতিও বাড়াচ্ছে তারা। জানা গেছে, গত বছরের মে মাসের পর থেকেই ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে মাঠে আছে বিএনপি। বিশেষ করে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে মাঠে বিএনপি। একই সঙ্গে ভোটাধিকার হরণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ইস্যুও রয়েছে। বিএনপি এসব ইস্যুতে মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, এমনকি ইউনিট ও হাটবাজারে কর্মসূচি পালন করেছে।

 

দলটির গত বছরের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির ১৬ দিনের কর্মসূচি। এছাড়া ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়ে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ করে। এসব সমাবেশের বেশিরভাগেই নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল। ত

 

বে আলোচনার তুঙ্গে ছিল গত বছর ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ। নয়াপল্টনে সমাবেশ করাকে কেন্দ্র করে গত বছর ৭ ডিসেম্বর বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশ ও নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কয়েকশ নেতাকর্মী গ্রেপ্তারসহ নানান ঘটনার জন্ম হয় ওই সমাবেশ ঘিরে।

 

অবশেষে গত বছর ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠের সমাবেশ থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে বিএনপি।

 

এসব দাবির প্রতি বিএনপিসহ তাদের সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হওয়া দলগুলো একাত্মতা ঘোষণা করে। জাতীয়তাবাদী সমমনা ১২ দল, গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ কয়েক সংগঠন এখন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে আন্দোলনে যুক্ত।

 

এছাড়া আলাদা কর্মসূচি নিয়ে অলি আহমদের এলডিপিও মাঠে আছে। ১০ দফার প্রতি সমর্থন থাকলেও জামায়াতে ইসলামী রয়েছে কৌশলী অবস্থায়। এসব দল বা সংগঠন ধারাবহিকভাবে ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে বিএনপির সঙ্গে লগাতার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে। বিভাগীয় সভাবেশের পর দলটি জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কয়েক দফায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

 

বিএনপি এবার পবিত্র মাহে রমজানেও মাঠে ছিল। দলটি রমজান মাসজুড়ে কর্মসূচি দিয়ে জোরালোভাবে রাজপথে ছিল। এবার ঈদের পর দলটি সরকার পতনের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি নিয়ে সমমনাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে। গত ২৯ এপ্রিল গণফোরাম ও এনপিপির সঙ্গে বৈঠকের মধ্যদিয়ে বিএনপি সমমনাদের সঙ্গে নতুন করে বৈঠকের সূচনা করে। এরপর গণতন্ত্র মঞ্চ ও ১২ দলীয় জোটসহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি।

 

বুধবার এলডিপির সভাপতি কর্নেল অলি আহমদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। এসব বৈঠকে সরকার পতনের ‘এক দফা’র বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ১০ দফার দাবিগুলো সরকার যে সহজে মানবে না, তা বুঝতে পেরে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এখন ১০ দফার পরিবর্তে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে যেতে চায়। সে লক্ষ্যে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঠিক করতেও এসব বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণাপত্রও ঠিক করা হয়েছে এবারের বৈঠকে। কর্মসূচিও চূড়ান্ত করা হচ্ছে বৈঠকে। চলতি সপ্তাহ বা আগামী সপ্তাহের প্রথমদিকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।

 

সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে সমমনাদের বেশিরভাগ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামে আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি ও দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে দল এখন আন্দোলনে। আগামীতে দেশপ্রেমিক সব শক্তি বর্তমান সরকারের পতনের এক দফার বিকল্প দেখছে না। এই দাবিতে আগামীতে প্রয়োজনীয় সব কর্মসূচিও দেয়া হবে।

 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, দেশের মানুষকে রক্ষায় বর্তমান সরকারের পতনের কোনো বিকল্প নেই। সরকার পতনের দাবি আমাদের ১০ দফার অন্যতম দফা হলেও সেটি এখন এক দফায় পরিণত হতে চলেছে।

 

বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত থাকা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীরপ্রতীক ভোরের আকাশকে বলেন, আগামীতে আমাদের দফা একটাই, সেটি হলো শেখ হাসিনা সরকারের পতন। সে লক্ষ্যে বিএনপির সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। কর্মসূচিও আসছে শিগগিরই।

 

বিষয়টি নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের বড় দাবি দেশের মানুষের জন্যে ভোটাধিকার ফিরেয়ে আনা। সেজন্য নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই, যা বর্তমান সরকারের আমলে সম্ভব নয়। আন্দোলনকারী দলগুলোর দাবিও মানবে না আওয়ামী লীগ। তাই ১০ দফার বড় দফা হচ্ছে বর্তমান সরকারের পতন। সে লক্ষ্যে বিএনপির নেতৃত্বে আমরা কর্মসূচি পালন করছি। আগামীতে নতুন কর্মসূচিও আসছে। একইসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণাপত্র ঠিক করা হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি