চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দেশের কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। ধান রোপন থেকে শুরু করে কর্তন এবং ঘরে তোলা পর্যন্ত সবখানেই এখন ব্যবহার হচ্ছে প্রযুক্তি। এতে করে ফসল উৎপাদনে সময় এবং অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য বলছে, জেলায় এ বছর ৩৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে লক্ষমাত্র বিপরীতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৪৯ হেক্টর জমিতে। কিন্তু ধান কাটার শুরুতেই বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। একসঙ্গে সকল ধান পেকে যাওয়ায় শ্রমিক সংকটে পড়তে হয় তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে রিপার এবং কম্বাইন্ড হারভেস্টারের ব্যবহার কৃষকের কাজকে সহজ করে তোলে।মাগুরা সদরের মঘীর মাঠে গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ মাঠ জুড়ে দোল খাচ্ছে বোরো ধান। কাদাযুক্ত মাঠে কোথাও কোথাও জমে আছে পানি।
মাঠে কেউ ধান কাটছেন, কেউবা বাঁধছেন আটি আবার কেউ মাথায় করে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। এই মাঠেই দ্রæত ধান ঘরে তুলতে ধান কাটা হচ্ছে দুইটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দ্বারা। এই মেশিন ধান কেটে সঙ্গে সঙ্গে ভরে দিচ্ছেন বস্তায়। ফলে একদিকে যেমন ধান মাড়াই করার ঝামেলা থাকছে না অন্যদিকে দূর হচ্ছে শ্রমিক সংকট।জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে জেলায় ৩৬টি রিপার এবং ৩০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ব্যবহার হচ্ছে।
৫০ শতাংশ সরকারি প্রনোদনায় পাওয়া এসব রিপার এবং কম্বাইন্ড হারভেস্টার থেকে সুফল পাওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।সরকারি প্রনোদনায় পাওয়া কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মালিক মোঃ মশিউর রহমান জানান, মাঠ সমতল হলে একটা মেশিন দ্বারা ঘন্টায় প্রায় দেড় একর জমির ধান কাটা সম্ভব।
জায়গা বুঝে কোথাও এক একর জমির ধান কাটতে ৫ হাজার কোথাও ৪ হাজার বা কোথাও সাড়ে তিন হাজার টাকা নেয়া হয়। তিনি আরো জানান, শ্রমিক দিয়ে দিয়ে ধান কাটতে গেলে সময় ও অর্থ দুইটাই বেশি লাগে। কিন্তু এই মেশিনের মাধ্যমে ধান কর্তন করা হলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়।
কৃষক মিলন হোসেন বলেন, মেশিন দিয়ে ধান কাটালে বিচালির (খড়) অনেকটা ক্ষতি হয়। তবুও সামনে যেহেতু দুর্যোগের সময় মাঝেমাঝে বৃষ্টি হচ্ছে যে কারণে মেশিন দিয়ে প্রায় চার একর জমির ধান কাটিয়ে নিলাম। কেননা এখন সকল মাঠে একসঙ্গে ধান পেকে যাওয়ায় শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া মেশিন দিয়ে ধান কাটলে ধান মাড়াই এর ঝামেলা থাকে না, একবারে মেশিন থেকেই ধান বস্তা ভরে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যায়।
অপর কৃষক লিমন শেখ বলেন, অনেক টাকা খরচ করে ধান লাগিয়েছি। সামনে দুর্যোগের সময় এখন যদি ধান ঘরে না তুলতে পারি সারা বছর অসুবিধায় পড়তে হবে। যে কারণে দ্রুত মেশিন দিয়ে ধান কেটে নিচ্ছি। খড়ের হয়তো কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে, তবে ধানটা তো ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে। যদি দুর্যোগের মুখে পড়ি তাহলে ধান খড় দুটাই হারাতে হবে।
যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের বৃষ্টি বা শিলা বৃষ্টি হতে পারে যে কারণে কৃষকদেরকে ধান কাটার মেশিন ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে জেলা কৃষি বিভাগ। মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সুফি মোঃ রফিকুজ্জামান বলেন, বর্তমানে মাগুরায় মোট ৩৬টি রিপার এবং ৩০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন রয়েছে। যেহেতু এখন ঝড় বৃষ্টির সময় আমরা কৃষকদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি বৈরী আবহাওয়া ফসল রক্ষায় এই মেশিনগুলোর যথার্থ ব্যবহার করার জন্য।
এছাড়া চাষাবাদে এসব আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সময় এবং অর্থের সাশ্রয় হওয়ায় কৃষকদের সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে এসব রিপার এবং কম্বাইন্ড হারভেস্টার সংগ্রহ আরো সহজ করে তোলা হচ্ছে। এতে করে প্রযুক্তির সফল ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিকাজ আরো সহজ হয়ে উঠবে। পতিত জমির পরিমাণও কমে আসবে।
ভোরের আকাশ/নি