logo
আপডেট : ৭ মে, ২০২৩ ১১:৩১
বিএনপির এক দফা আন্দোলন ছাড় দেবে না আ.লীগ
নিখিল মানখিন

বিএনপির এক দফা আন্দোলন
ছাড় দেবে না আ.লীগ

নিখিল মানখিন: বিএনপির এক দফার আন্দোলন সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করবে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার পতন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে এক দফা আন্দোলন করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। বিএনপিকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির বিপরীতে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের আচরণ অনুযায়ী শক্তি প্রয়োগ করবে দলটি। অভিনব নানা কৌশলে মাঠ দখলে রাখবে তারা।

 

দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নিজ নিজ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অটল থাকার মাঝে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাতের শঙ্কার গন্ধ পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল। তারা বলছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী লীগকে চাপে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনের আগেই নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করছে তারা। সরকার পতন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে এক দফা আন্দোলন করার পরিকল্পনা করছে দলটি। এজন্য আগে থেকে পর্যায়ক্রমে কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা। একই ধরনের কর্মসূচিতে আছে সমমনা আরো অনেক দল। এসব দলকে নিয়ে চলমান যুগপৎ আন্দোলনকে এক দফার আন্দোলনে পরিণত করে দাবি আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির। দলটির বিভিন্ন সূত্রের দাবি এক দফার আন্দোলন সফল করতে এখন পর্যায়ক্রমে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এক দফার আন্দোলন হবে চূড়ান্ত আন্দোলন। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

 

এদিকে, আওয়ামী লীগের শীর্য পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ভোরের আকাশকে বলেন, বিএনপিসহ সব বিরোধী দলের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চাপ সামাল দিয়ে সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে অনড় রয়েছে দলটি। বিএনপির এক দফা দাবি মানতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কিন্তু সাংবিধানের বাইরে গিয়ে বিএনপির কোনো দাবিই আমলে আনা হবে না। উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই হবে আগামী নির্বাচন। এ নিয়ে বিএনপি আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে রাজপথেই তাদের মোকাবিলা করা হবে।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি আগামী মে ও জুনে সরকারবিরোধী আন্দোলন আরো জোরদার করতে পারেÑ এমন তথ্য আছে সরকারের কাছে। আর এ সময়টাতেই দেশের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিটির মানুষ ভোট উৎসবে মেতে উঠবে। মেয়র ও কাউন্সিলর পদ ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অন্তত দেড় মাস সিটি করপোরেশন এলাকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। এ সময় চাইলেও বিএনপি এসব সিটিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে সুবিধা করতে পারবে না।

 

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের আকাশকে বলেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত যেকোনো ইস্যুতে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটা উপলক্ষ হয়ে এসেছে। ভোটের আগ পর্যন্ত এসব সিটির প্রতিটি থানা-ওয়ার্ড দলীয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকবে। চাইলেও বিএনপি পাঁচ সিটিতে ভোট পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে পারবে না।

 

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ভোট হচ্ছে নিজ দলকে সংগঠিত করা এবং প্রতিপক্ষকে মাঠছাড়া করার সহজ পথ। ফলে সিটি করপোরেশনের ভোট বর্জন করে বিএনপি আসলে কিছু অর্জন করতে পারবে না।

 

বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলা করার বার্তা দিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ এবং তার ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনগুলো। গত ২৯ এপ্রিল বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আন্দোলনে যারা ব্যর্থ, তারা সন্ত্রাস করবে। নির্বাচন করতে দেবে না- সেই দুঃসাহস দেখিয়ে লাভ নেই। তারা নির্বাচন বানচালের নামে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।

 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করবে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিমাগারে। বিএনপির মাথায় এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত। কোনো লাভ হবে না, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর এদেশে ফিরবে না।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটাতে বিএনপির এক দফা আন্দোলন কখনো সফলতার মুখ দেখবে না। বিএনপির আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে আগামী নির্বাচন। এ নিয়ে বিএনপি আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে রাজপথেই তাদের মোকাবিলা করা হবে বলে জানান সুজিত রায় নন্দী।

 

আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, বিএনপি অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার অপচেষ্টা করলে দাঁতভাঙা জবাব দেবে আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির বিপরীতে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের আচরণ অনুযায়ী শক্তি প্রয়োগ করবে দলটি।

 

সম্প্রতি রাজধানীর ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের সামনের সড়কে আয়োজিত এক সমাবেশে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, বিএনপি যখনই রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়, মানুষ আতঙ্কে থাকে, ভয় পায়, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এ কারণেই যুবলীগ রাজপথে থেকে সাধারণ মানুষকে সাহস দেয়। যখনই তারা কর্মসূচি দেবে, যুবলীগও রাজপথে থাকব। বাংলাদেশকে রুখে দিতে বিএনপি-জামায়াত যে ষড়যন্ত্র করছে, তার প্রতিবাদ করতে, দাঁতভাঙা জবাব দিতে যুবলীগই যথেষ্ট। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত যুবলীগ সারা দেশে রাজপথে থাকবে।

 

ভোরের আকাশ/আসা