জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত তিন দশকে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ও নদী ভাঙন সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদগুলো লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।
গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এক দিকে যেমন সমুদ্র পৃষ্টের তলদেশ উচু হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে নদ-নদীর নাব্যতা হারিয়ে গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সমুদ্রের পানি উপকূলীয় এলাকায় উপচে পড়ছে। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে।
১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর সুন্দরবন উপকূলে প্রলয়ংকরী সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম কক্সবাজার অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ সামুদ্রিক ঝড়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনার উপকূলে সিডরের তান্ডব এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে খুলনা, সাতক্ষীরা উপকূলে আইলা ও ২০২০ সালের ২০ মে আম্ফানের ভয়াবহ জলোচ্ছাসে গোটা উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে।
এর সঙ্গে নতুন মাত্রায় নদী ভাঙন যোগ হয়ে লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। খুলনার কয়রা, দাকোপ ও সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় প্রতিনিয়ত বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। অব্যহত নদী ভাঙন কেড়ে নিচ্ছে শত শত একর কৃষি জমি, বসত ভিটা, চিংড়ি ঘের ও রাস্তাঘাট।
এ সকল এলাকায় দিন যতই পার হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ততই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকে জমি জায়গা হারিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। দাতা সংস্থা ও জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও দুর্যোগের ঝুঁকিহ্রাস কমাতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। জলবায়ু ফান্ডের অর্থায়নে সরকার উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
সরকারের পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলো এনজিওদের মাধ্যমে বাঁধ সংস্কার, কাঁচা রাস্তা নির্মাণ, ঝড় সহনশীল ঘর তৈরি, পয়নিষ্কাশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, গভীর-অগভীর নলকূপ স্থাপন, রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টিং প্রকল্প বাস্তবায়নের মতো গুরুত্বপূর্ন কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে।
বেসরকারি সংস্থা গুলো দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ঝড় জলোচ্ছাস জনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে রেহাই পাবে।
সম্প্রতি সরকারের পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীর কিনার ড্যাম্পিং করে বেড়িবাঁধে ব্লক বসানোর কারণে নদী ভাঙন অনেকটা কম হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ রক্ষায় বিশ্ব ব্যাংকের বাস্তবায়নাধীন চলমান প্রকল্প চালু থাকলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছাসের ক্ষয়ক্ষতি থেকে এ অঞ্চলের জনসাধারণের জানমাল অনেকটা রক্ষা করা সম্ভব হবে।
জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা ও জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো. আব্দুল করিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন। সরকার ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতির দিকটি বিবেচনায় এনে টেকসই প্রকল্প হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক বিপর্যায়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ও নদী ভাঙন উপকূলীয় জনপদগুলো লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।
সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ১ হাজার ১৭২ কোটি টাকা একনেকের সভায় অনুমোদন দিয়েছেন। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলেই কাজ শুরু হবে।
ভোরের আকাশ/নি