পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এখন কোনো দেশ আর একা চলতে পারে না। এ কারণেই পুরো বিশ্বটাই এখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা এখন একই সঙ্গে বাংলাদেশের এবং গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্ধা। মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির বিশ্বায়নে এখন চাইলেও কোনো দেশ বা কোনো দেশের নাগরিক একা চলতে পারে না।
এ বাস্তবতায় বাংলাদেশের উন্নয়ন, অর্জন, অগ্রগতি এগিয়ে চলার সঙ্গে বিশ্বকে সম্পৃক্ত করা, বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের আরো সমৃদ্ধ করা বিশেষ করে প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, জ্ঞান, বিজ্ঞান, অর্থনীতিসহ সামগ্রিক কাজে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহযোগিতা, সমর্থন অপরিহার্য।
এ বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সফর অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। প্রধানমন্ত্রী জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর করেছেন। প্রথমে জাপানের পর তিনি ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এরপর ব্রিটেনে রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর এই তিন দেশ সফরে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা, সম্মান, গুরুত্ব বেড়েছে।
বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, বলিষ্ট নেতৃত্বে, বিগত করোনা মহামারি মোকাবিলা, জলবায়ু অভিঘাত এবং এর ক্ষতি হ্রাস, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থায় অত্যন্ত সফল এবং বিচক্ষনতার সঙ্গে সামাল দিয়ে বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করায় বাংলাদেশ এখন বিশ্ব নেতাদের আগ্রহের এবং আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশকে আরো বিনিয়োগ, উন্নয়নবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে শেখ হাসিনার সরকার বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টার্নেল নির্মাণ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, সেতুর ওপর রেললাইন নির্মাণ, পায়রাবন্দর নির্মাণ, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ, মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, রাজধানীতে মেট্রোরেল চালুসহ বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
প্রতিকূলতা ও বাধা ডিঙিয়ে শেখ হাসিনার সরকার এসব উন্নয়ন সাধন করায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত, সম্মানিত ও আলোচিত। এ কারণে দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় নিয়ে যেতে প্রয়োজন শেখ হাসিনার নেয়া উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগীদের আরো বেশি অংশগ্রহণ, আরো বেশি বিনিয়োগ, আরো বেশি সম্পৃক্ততা। এই মিশন বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফর করেন জাপানে।
সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ভারত সফরে গিয়ে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বাংলাদেশ ও ভারতকে ঘিরে তাঁর সরকারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এবং বাংলাদেশের বিশাল বাজারকে কেন্দ্র করে দেশটি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কিছু রাজ্যের সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে।
জাপান এই খাতে বিনিয়োগ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারে। জাপান বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র এবং তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেশি। জাপান এই অঞ্চলের বাজারকে কাজে লাগাতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী জাপান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে যুক্তরাজ্য সফরে রয়েছেন। ২৫ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত এই তিন দেশ সফর করছেন তিনি। সফরের আগের দিন ২৪ এপ্রিল প্রথমবারের মতো জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের দেয়া ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সম্পর্কে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে কৃষি, মেট্রোরেল, শিল্প, জাহাজ পুনঃচক্রায়ন, শুল্ক, প্রতিরক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আটটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
প্রসঙ্গত: জাপান বাংলাদেশের অন্যমত বিনিয়োগ ও উন্নয়ন অংশীদার। জাপান সফল শেষে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র যান বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ও সহযোগিতার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। ৪ মে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়বেন। সেখানে ৮ মে পর্যন্ত ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে আমাদের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদার এবং প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তিনি সেখানে বিনিয়োগকারীদের এক অনুষ্ঠানে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য একটি মসৃণ ও অনুমানযোগ্য সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদনশীল অংশীদার হবে।’
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী কিছু অর্থনৈতিক দেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপিসহ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একটি উদীয়মান প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। তিনটি মানদন্ডেই যোগ্যতা অর্জন করে আমরা জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণ লাভ করেছি।
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে, আমাদের দারিদ্র্য হার ১৮.৭%-এ নেমে এসেছে, চরম দারিদ্র্য দ্রুত হ্রাস পেয়ে ৫.৬%-এ নেমে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারি, ইউরোপে যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্তে¡ও এই সাফল্য এসেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংক প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের উন্নয়নের সাফল্য তুলে ধরেছেন এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বৈশ্বিক ঋণদাতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার জন্য আমাদের উৎসাহব্যঞ্জক যাত্রায় বিশ্বব্যাংক আমাদের সঙ্গে থাকবে।
আসুন আমরা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যৌথ আস্থার চেতনায় একসঙ্গে কাজ করি।’ তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের সঙ্গে যৌথভাবে ৫০ বছরের বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারিত্ব উপলক্ষে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন. এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকা লোকদের উন্নয়নের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। ‘এটি বাংলাদেশকে একটি সহনশীল ও সমৃদ্ধ ভ‚মিতে পরিণত করার জন্য আমাদের সরকারের সংকল্পের প্রতিফলন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিন্ন শত্রু হচ্ছে দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং আমরা এগুলো কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত বিশ্রাম নেব না।’
তিনি মনে করেন, এ ফটো প্রদর্শনী একসঙ্গে কী অর্জিত হয়েছে এবং কি কাজ রয়ে গেছে তা স্মরণ করিয়ে দেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রদর্শনীটি সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার গুরুত্বও তুলে ধরেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুস্থ মানুষের মধ্যে যে ধরনের হাসি দেখতে চেয়েছিলেন এ প্রদর্শনীতে তা প্রতিফলিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, আমরা বাণিজ্য বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ উৎপাদনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাই’। বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় সাপেক্ষ ৫৩টি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ অর্থ এ পর্যন্ত ব্যাংকের দেয়া ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান ও ঋণের অংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানব পুঁজি গঠনে আমাদের কর্মক্ষমতা অবকাঠামো মেগা-প্রকল্পে আমাদের বিনিয়োগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশের নিজস্ব আর্থিক ও কারিগরি সংস্থান দিয়ে ৬.১ কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার লক্ষণ। বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা, বিনামূল্যে, সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বিদ্যুৎ সুবিধা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। ‘
আমরা সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, শিশু কল্যাণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, নগর উন্নয়ন, টেকসই শিল্পায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই।’ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সুযোগ দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংককে অর্থায়ন বাড়ার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী কিছু অর্থনীতির দেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপিসহ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একটি উদীয়মান প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। তিনটি মানদন্ডেই যোগ্যতা অর্জন করে আমরা জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণ লাভ করেছি।
নিজস্ব অর্থায়নে আমাদের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি, যা এখন আঞ্চলিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির। তার সরকার মেট্রোরেলও নির্মাণ করেছে, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বন্দরের অবকাঠামো উন্নত করেছি। এতে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সংযোগ বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গর্বিত যে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) দ্বারা প্রত্যায়িত বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি সবুজ পোশাক কারখানার মধ্যে ৫৩টি বাংলাদেশে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে ‘স্বল্পোন্নত’ থেকে ‘উন্নয়নশীল’ দেশে পরিণত হবে। এর জন্য, আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং রপ্তানি ভিত্তি প্রসারিত করতে আমাদের সমর্থন প্রয়োজন হবে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ২০২২ সালে, আমাদের দারিদ্র্য হার ১৮.৭%-এ নেমে এসেছে, চরম দারিদ্র্যের দ্রুত হ্রাস পেয়ে ৫.৬%-এ নেমে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারি, ইউরোপে যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এসব সাফল্য এসেছে।
অবশ্য বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতির পালাবদলে এখন বিশ্বময়ে পরিস্থিতি বদল হয়েছে। কৌশলগত কারণে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের যতটুকু দরকার যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের আরো বেশি দরকার।
সুতরাং, এই সফরের মাধ্যমে পশ্চিমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো উন্নত হবে। জাপান বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে জাপানের আরো বেশি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে। জাপানের বিনিয়োগ পরিকল্পনার মধ্যে একটি শিল্পাঞ্চল তৈরিসহ বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন ও বন্দর তৈরিতে বিনিয়োগ রয়েছে।
শিল্পাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য তারা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানে বাজারজাত করতে চায়। এজন্য তারা যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তুলতে চায়। দেশের তিনটি অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে জাপান। এর মধ্যে আছে মাতারবাড়ি এলাকায় নতুন একটি বাণিজ্যিক বন্দর। এই বন্দরের সঙ্গে ত্রিপুরাসহ ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল সংযুক্ত হবে।
জাপান সফরে প্রধানমন্ত্রী একটি বিনিয়োগ সম্মেলন, স্থানীয় বাংলাদেশিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানসহ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় কয়েকজন জাপানি বন্ধুর হাতে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এখানে মনে রাখা দরকার আমরা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ অনুযায়ী চলব।
১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাপান সফরকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমরা দুই দেশই এশীয়। এশিয়াতে শান্তি, প্রগতি এবং স্থিতিশীলতার প্রশ্নে আমাদের দুই দেশের লক্ষ্যও এক। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে জাপানের মতোই আমরা সমন্বিত নিয়মশৃঙ্খলার পক্ষপাতী।
ভাষা, সংস্কৃতি এবং জাতিগত উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে জাপানের জনগণের মতোই আমরা ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ। মানুষ হিসেবে প্রধামন্ত্রীর এই সফরে বাংলাদেশ বিশ্বে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হলো। এটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য গর্বের ও মর্যাদার।
লেখক: উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক ভোরের আকাশ এবং সাধারণ সম্পাদক-বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম। [email protected]
ভোরের আকাশ/নি