logo
আপডেট : ১০ মে, ২০২৩ ১০:৪৪
ভোটযুদ্ধ শুরু গাজীপুর সিটিতে
শাহীন রহমান

ভোটযুদ্ধ শুরু গাজীপুর সিটিতে

শাহীন রহমান: গাজীপুর সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটযুদ্ধ শুরু করেছেন। মঙ্গলবার এই সিটির প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতীক পেয়েই জনসংযোগে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা।

 

আগামী ২৫ মে এই সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাচাই-বাছাই শেষে এই সিটিতে মেয়র পদে চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন। এদের মধ্যে ৫ জন রয়েছেন দলীয় প্রার্থী। পাশাপাশি তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

 

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারদলীয় প্রার্থী হওয়ার কারণে এই সিটিতে প্রথম থেকেই শক্ত অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। তবে বিএনপির দলীয় প্রার্থী না থাকলেও স্থানীয় বিএনপি নেতার ছেলে সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও বিএনপি বড় অংশের ভোট তার বাক্সেই পড়বে।

 

এছাড়া প্রার্থিতা ফিরে না পেলেও এই সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বড় প্রভাব রয়েছে। তিনি সদ্য সাবেক মেয়র এই সিটির। তার প্রার্থিতা বাতিল করা হলে মা জায়েদা খাতুন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দ নিয়েই তারা ভোটে নেমে পড়েছেন।

 

এই সিটির সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা আগেই বাতিল করা হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল যাচাই-বাছাইয়ে ঋণখেলাপির অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এর পর ইসি গঠিত আপিল বিভাগের দ্বারস্থ হন জাহাঙ্গীর আলম। সেখানেও তার আবেদন খাজির করা হলে আদালতের শরণাপন্ন হন। অবেশেষে হাইকোর্টও তার রিট খারিজ করে দিয়েছে।

 

এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছেন। তবে আপিল বিভাগে তার আপিল খারিজ হলে তিনি আর ভোট করতে পারবেন না। তবে তার মা জায়েদা চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাকে ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। তবে জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থিতা ফিরে না পেলে ভোটের মাঠে তার মা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে প্রভাব বিস্তার করবেন।

 

সকাল ১০টায় গাজীপুর নগরীর বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব পদের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। এতে ৮ জন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩৯ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৭৭ জন প্রার্থীর মধ্যেও প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম।

 

আইন অনুযায়ী দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লা খান স্বভাবতই নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। এটা আওয়ামী লীগের নির্বাচনের জন্য ইসি নিবন্ধিত দলীয় প্রতীক।

 

এছাড়াও মেয়র পদে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল), গণফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম (মাছ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাত পাখা), জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী রাজু আহম্মেদ (গোলাপ ফুল)।

 

তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ইসির বরাদ্দকৃত প্রতীক দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি ছাড়াও বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি বরাদ্দ পেয়েছেন ‘হাতি’ প্রতীক। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশীদ পেয়েছেন ‘ঘোড়া প্রতীক’। তবে এই নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ না নেয়ায় দলটির দলীয় প্রতীক ধানের শীষ বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

 

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ার কারণে বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে মাঠে অবতীর্ণ হয়েছেন।

 

তবে ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও বিএনপিদলীয় ভোট তার বাক্সে যাবে। ফলে তাকে এই নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর আজমত উল্লা খান সহজেই বৈতরণী পার হতে পারছেন না। পাশাপাশি জাহাঙ্গীর শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ফিরে না পেলে তার অনুসারীদের ভোট তার মায়ের পক্ষে যাবে। এক্ষেত্রেও আজমত উল্লা খান চ্যালেঞ্জর মধ্যে পড়তে হবে।

 

এদিকে প্রতীক বরাদ্দ কার্যক্রম শুরুর আগে প্রার্থীদের প্রতি নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম।

 

আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত সোমবার ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৭৮ জন এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৪৩ জনসহ মোট ৩২৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

 

নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০ ভোটকেন্দ্রে তিন হাজার ৪৯৭টি ভোট কক্ষ থাকবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন এবং নারী ভোটার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন।

 

নির্বাচনে ৪৮০ জন পিসাইডিং অফিসার, তিন হাজার ৪৯৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ছয় হাজার ৯৯৪ জন পোলিং অফিসারসহ ১০ হাজার ৯৭১ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা থাকবেন।

 

তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এতে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। গাজীপুর সিটির সর্বশেষ ভোট হয়েছে ২০১৮ সালের ২৭ জুন।

 

নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। সাধারণ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয় ১১ মার্চ থেকে। আইন অনুযায়ী ভোটগ্রহণ করতে হবে মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে।

 

তবে জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসার কারণে আগেই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি