এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার: ঘূর্ণিঝড় মোখার সতর্কতা অমান্য করে সৈকতে গোসলে ব্যস্ত হাজারো পর্যটক। অন্যদিকে উপকূলে ফিরে আসেনি ২ হাজার মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার। গভীর বঙ্গোপসাগরে প্রথমে লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ এরপর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া ‘মোখা’ বর্তমানে যে গতিতে এগোচ্ছে, সেভাবে এগিয়ে চললে রোববার এটি কক্সবাজার উপকূলে মারাত্মকভাবে আঘাত হানবে। সে কারণে কক্সবাজারসহ দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সব উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার সব সাইক্লোন শেল্টার ও বিদ্যালয়সহ ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নগদ ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ৪৯০ টন চাল, সাত টন শুকনো খাবার, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন মজুত রাখা হয়েছে।
শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা নয়ন জানিয়েছেন, উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩টি শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে আগামী এক সপ্তাহ সাগর উত্তাল থাকবে। গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে মোখা যে গতিতে এগোচ্ছে, সেভাবে এলে কক্সবাজারে আঘাত হানতে পারে। কক্সবাজার উপকূলে এখন ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখানো হয়েছে। এই সংকেত আরো বাড়তে পারে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবশ্য কক্সবাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মোখার প্রভাবে সাগর কিছুটা উত্তাল হলেও স্বচ্ছ আকাশ আর তীব্র দাবদাহ বিরাজ করছে কক্সবাজারে। সৈকতে লাল পতাকা টানানো হয়েছে। হাঁটুপানির নিচে পর্যটকদের নামতে দিচ্ছেন না লাইফগার্ড কর্মীরা। তারপরও কিছু পর্যটক এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সৈকতে গোসলে নামছেন।
কক্সবাজার পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, তীব্র দাবদাহের পাশাপাশি সাগর উত্তাল হয়ে উঠছে। পর্যটকদের হাঁটু পানির নিচে নামতে দেয়া হচ্ছে না। যারা অমান্য করছেন, তাদের বুঝিয়ে সমুদ্র থেকে তুলে দিচ্ছেন লাইফগার্ড কর্মীরা হচ্ছে।
এদিকে উপকূলে ফিরে আসছে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাগরে মাছ শিকার না করে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছেন কক্সবাজারের জেলেরা। এরই মধ্যে উপকূলে নোঙর করেছে প্রায় তিন হাজার মাছ ধরার ট্রলার।
বাঁকখালী নদীর মোহনায় দেখা যায়, সাগরে মাছ শিকারে যেতে উপকূলে ট্রলারে মজুত করা হয়েছিল রসদ। সব প্রস্তুতি শেষে জেলেরাও উঠেছিলেন ট্রলারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সাগরে মাছ শিকারে যাননি তারা। বাঁকখালী নদীর মোহনায় ফিরছে একের পর এক মাছ ধরার ট্রলার। জেলেরা বলছেন, সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় ফিরে এসেছেন তারা।
এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি মোহাম্মদ আলী বলেন, সাগর উত্তাল হয়ে ওঠার পাশাপাশি বাতাস বেড়েছে। তাই মাছ শিকার না করে ২১ জেলে নিয়ে উপকূলে ফিরে এসেছি।
জেলে মোহাম্মদ নাছির বলেন, জীবন বাঁচানোর জন্য উপকূলে অবস্থান করতে হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেটে গেলে আবারো সাগরে মাছ শিকারে যাব।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, যে ট্রলারগুলো এখনো সাগরে মাছ শিকার করছে তারা সংকেত বাড়লে উপকূলে ফিরে আসবে। এরই মধ্যে কক্সবাজার উপকূলে নোঙর করেছে প্রায় তিন হাজার ট্রলার। এখনো সাগরে আছে দুই হাজারের মতো ট্রলার। আজ বা কালকের মধ্যে এসব ট্রলারও উপকূলে নোঙর করবে।
ভোরের আকাশ/আসা