বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জঃ আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে, ঢাক ঢোল ঝাঝর বাজে। বাঙালির ঐতিহ্য ঢোল, ঢোলের নান্দনিক ব্যবহার স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম।
বাঙালির ভোর শুরু হতো সুর ও বাদ্যযন্ত্রের তালে, সে সুর আর গান এখন মিলিয়ে যাচ্ছে যান্ত্রিক জীবনের কোলাহলে।
ঢাক-ঢোলের শব্দের যে সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করে তা বাঙালির একান্ত নিজের সুর। সেই লালিত সুরে পড়েছে নেতিবাচক ছায়া। অবশ্য সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল এবং প্রবাহমান। ফলে নতুন বাদ্যযন্ত্র স্থান করে নেবে পুরাতনের জায়গায় এটাই স্বাভাবিক।
ঢাক-ঢোল মিশ্রিত সংগীতের জন্য হৃদয় ব্যাকুল হলেও একদিন সত্যিই বিলীন হয়ে যাবে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের সুর।
বংশপরম্পরায় আবহমান গ্রামবাংলায় লোকজ জ্ঞানে ও সৃজনশীলতায় কারিগররা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে তৈরি করে চলেছে নানা বাদ্যযন্ত্র। তাদের নেই কোনো উন্নত প্রযুক্তি, আধুনিক প্রশিক্ষণ, সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা। তবুও পাল্লা দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি খচিত বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে কোনোরকমে টিকে আছে।
বর্তমানে এসব দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের গুণী বাদকের অভাব এ শিল্পটাকে বিলীনের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তেমনি বাদ্যকারদের সঙ্গে সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগররা হারিয়ে যাচ্ছে।
বিচিত্র পেশার ভিড়ে দেশজ বাদ্যযন্ত্র তৈরির পেশায় অর্থের প্রাচুর্যতা নেই। সংসার নামক যন্ত্রটা আর চলে না। বংশানুক্রমে এ পেশা পরিবর্তন করে নতুন পথের দিকে আজকের প্রজন্ম। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের বাঙালির ঐতিহ্য।
মানিকগঞ্জের ধানকোড়ার উত্তর খল্লী গ্রামের দুই ভাই গোপাল চন্দ্র মনিদাস ও মঙ্গল চন্দ্র মনিদাস ধরে রেখেছেন বংশপরম্পরার এ পেশা। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বুণে চলছেন বাঙালির হৃদয়ের সেই সুরের বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজ। আরো অনেক সঙ্গী ছিল তাদের এই কাজের। পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দুইজনই ধরে রেখেছেন এ পেশা। তাদের পরবর্তীতে পরিবারে আর কেউ আসবে না এ পেশায়। গোপাল চন্দ্র মনিদাস জানান, করোনাকালে বাদ্যকাররা অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় আর আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আগের ঢাক-ঢোলের চাহিদা কমে গেছে। ভালো মানের বাদ্যকারও এখন নেই। যেহেতু বাদ্যকার কমে গেছে বাদ্যযন্ত্রের চাহিদাও নাই। বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় তাদের কদর কমে গেছে। বাপ দাদার পেশা আর নেশার কারণে ধরে রেখেছেন বাদ্যযন্ত্র তৈরির এ পেশাটিকে।
গোপাল আর মঙ্গল মণিদাস টিকিয়ে রেখেছেন দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরির বাঙালির এ ঐতিহ্যকে। তাদের পর হয়তো বিলীন হয়ে যাবে এ পেশাটি।
ভোরের আকাশ/মি