logo
আপডেট : ১৪ মে, ২০২৩ ১১:৫০
শোধনাগার থাকতে ও পয়ঃবর্জ্য ফেলছে ড্রেনে, বাড়ছে পরিবেশ দূষণ
মো. মাইনুল হক, নীলফামারী

শোধনাগার থাকতে ও পয়ঃবর্জ্য ফেলছে ড্রেনে, বাড়ছে পরিবেশ দূষণ

ভ্যাকুট্যাক থেকে মানববর্জ্য এভাবেই ড্রেনে ফেলা হচ্ছে

আমেরিকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়াটার এইডের অর্থায়নে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশালাকৃতির শোধনাগার থাকতেও বাসাবাড়ি থেকে সংগৃহীত পয়ঃবর্জ্য ড্রেনে ফেলছে স্বয়ং পৌর কর্তৃপক্ষ।

 

এতে পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার পরিবর্তে ব্যাপক দূষণ হচ্ছে। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে জনভোগান্তি সৃষ্টি করছে আর বর্জ্য শোধনাগারটিকে অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, শোধনাগারের ভ্যাকুট্যাক ব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থ পকেটস্থ করতে একটি সিন্ডিকেটের প্রশ্রয়ে এমনটা ঘটছে। ফলে পৌর পরিষদসহ তদারকি সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা নির্বিকার থাকায় ক্রমেই এ অবস্থা আরো প্রকট হচ্ছে। নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার হিউম্যান ফেসকল ট্রিটমেন্ট প্লান্টে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

 

সরেজমিনে বুধবার সকাল ৭টায় শহরের নতুনবাজার সুরকি মহল্লার ভাগার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ওই প্ল্যান্টে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের প্রধান গেটের সামনেই একটি ভ্যাকুট্যাক থেকে মানববর্জ্য (মলমূত্র) বাইরের ড্রেনে ফেলা হচ্ছে। বিভিন্ন বাসাবাড়ির টয়লেটের সেপটি ট্যাঙ্ক থেকে সংগ্রহ করা

 

এসব বর্জ্য ট্রিটমেন্টের (শোধনের) জন্য প্লান্টের ভেতরে পন্ডে না দিয়ে এখানে উন্মুক্ত জায়গায় কেন ফেলছেন জানতে চাইলে ভ্যাকুট্যাক চালক সানু বলেন, গেট বন্ধ এবং লোকজনও নেই তাই ড্রেনেই ফেলছি। মাঝে মাঝেই এমনটা করতে হয়।

 

এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন থেকে নিয়মিত ড্রেনেই এসব বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে সকালের দিকেই এ কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা। এতে এ পথে চলাচল দুরূহ হয়ে পড়েছে। তার ওপর চলতি মাসের প্রচন্ড রোদ ও তাপে খোলা জায়গার এই ময়লা আরো পচনে অসহনীয় দুর্গন্ধে চরম অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকা। প্লান্টে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ রোধের পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে বসেছে। ফলে কথা উঠেছে প্লান্ট যেন অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

 

একটি বিশ্বস্ত সূত্র মতে, একটি সিন্ডিকেট চালককে দিয়ে কিছু কিছু টয়লেটের বর্জ্য সংগ্রহ করে সার্ভিস চার্জের টাকা নিজেরা পকেটস্থ করতে প্লান্টের বাইরে গোপনে ড্রেন বা অন্যকোনো খোলা জায়গায় ফেলছে। এতে পৌরসভার রেজিস্টারে এ সংক্রান্ত তথ্য যেমন থাকছে না, তেমনি পৌর অ্যাকাউন্টে কোনো অর্থও জমা হচ্ছে না। এভাবে দিনের পর দিন চলছে। আয়কৃত অর্থ চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যদের হাতে। ফলে বৈধ রাজস্ব হারাচ্ছে পৌরসভা।

 

পৌরসভার সচিব সাইদুজ্জামানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, প্লান্টের পন্ডসগুলো উপচে পড়েছে, তাই সংগৃহীত বর্জ্য অন্যত্র মজুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারপরও ড্রেনে ফেলা ঠিক হয়নি। বিষয়টি দেখছি।

 

তিনি আরো বলেন, প্লান্ট তদারকি কর্মচারীরা সময়মতো না থাকায় হয়তো ড্রেনে ফেলেছে। তবে মেয়রের সঙ্গে দেখা করলে ভালো হয়। তিনিই এ বিষয়ে সঠিক বলতে পারবেন।

 

নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম বলেন, কোনোভাবে পয়ঃবর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে ফেলা যাবে না। এতে পরিবেশ দূষণ ঘটবে। আমাদের অগোচরে হয়তো এমনটা হয়েছে। তিনি তাৎক্ষণিক খোঁজখবর নেন এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি করেন। এতে ইনচার্জ সামাদ ড্রাইভার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

 

তদারকি সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের সৈয়দপুর শাখা ম্যানেজার নজরুল ইসলাম তফাদার বলেন, বর্জ্য যদি বাইরে কোথাও ফেলা হয় তা পৌরসভার দায়। আমাদের প্লান্টে কোনো সমস্যা নেই। তারপরও কেন বাইরে ফেলছে তা আমরা জানি না। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জন কেয়ারটেকার নিয়োজিত। গেট বন্ধ থাকার অভিযোগ সঠিক নয়।

 

আর যদি বন্ধও থাকত তাহলে মোবাইলে আমাদের বা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত ছিল। তা না করে মিথ্যা অজুহাতে ড্রেনে ফেলায় বিষয়টি গোঁজামিল বলেই মনে হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

 

এ ব্যাপারে পৌর মেয়রের মন্তব্য জানতে পৌরসভায় গেলে মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী মিটিংয়ে আছেন অজুহাতে সংবাদকর্মীদের এড়িয়ে যান। অথচ তিনি তার কার্যালয়ে একাকি অবস্থান করছিলেন। পরে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক জিয়া বলেন, সাবেক মেয়র মরহুম অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ওয়াটার এইডের অর্থ সহায়তায় ও এসকেএস ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এই প্লান্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।

 

এটি দেখতে ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, এমপি, সচিবরা এসেছিল। যাতে তারাও এমন প্লান্ট করতে পারে।

 

তিনি বলেন, প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই শোধনাগার সৈয়দপুরের সম্পদ। এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন মানববর্জ্যরে কুফল থেকে পরিবেশ রক্ষা করা যাবে, তেমনি এ থেকে উৎপাদিত জৈবসার কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটাবে। পাশাপাশি পৌরসভার আয়ও হবে।

 

অথচ এটা রেখে উন্মুক্ত স্থানে মানব বর্জ্য ফেলে দূষণ ঘটানো অবিবেচনা প্রসূত কাজ।

 

ভোরের আকাশ/নি