অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার মুল অংশ আঘাত হানে মিয়ানমার উপকূলে। বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটুয়ের উপর দিয়ে মোখা স্থলভাগ অতিক্রম করে। এস সময় মোখার প্রচন্ড আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে যায় মিয়ানমারের উপকূলীয় এই রাজ্যে। এর প্রভাবে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষয়ক্ষতির খবর গেছে। দেশটির সেনাবহিনীর প্রকাশ করা ছবিতে দেখা গেছে রাখাইন রাজ্যের থানদউয়ে বিমানবন্দরে একটি ভবন ধসে পড়েছে। সেখানকার বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার ভেঙ্গে পড়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানায় ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়ে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার উপকূলে আঘাত হানে অতি প্রবল প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে মায়ানমারে ১৪ বছরের এক কিশোরের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ঝড়ে গাছ পড়ে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়।
জানা গেছে, স্থানীয় সময় রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে উপকূলে উঠে আসে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি। মিয়ানমারের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার। মোখার প্রভাবে শহরের কয়েকটি মোবাইল টাওয়ার ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গার বিদ্যুৎ খুঁটি ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, হালকা ভবনগুলো ঝড়ের তাণ্ডবে কাঁপছে। মিয়ানমার নাউ-এর প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রবল বৃষ্টি হয়েছে রাখাইনে। পানি বাড়তে থাকায় ভূমিধস ও বন্যার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের আবাসিক ও মানবিক সমন্বয়কারী রামানাথন বালাকৃষ্ণান জানান, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। রাখাইনের উপকূলীয় শহর সিটুয়েসহ কয়েকটি শহরে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে আবহাওয়া বিভাগ। এরই মধ্যে মিয়ানমার উপকূলের কয়েক লাখ বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়েছেন। আতঙ্কে সময় কাটছে তাদের। রাখাইন রাজ্যের সিটুয়ে, কিয়াউকফিউ, মংডু, রাথেডাং, মাইবোন, পাউকতাও এবং মুনাং শহরে দুর্যোগ সতর্কতা জারি করেছে বেসামরিক জাতীয় ঐক্য সরকার।
তবে বিবিসি খবরে বলা হয় ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার বেগে তাণ্ডব চালায় মোখা। ঝড়ের সঙ্গে ছিল প্রবল বৃষ্টি। মায়ানমারের সিটুয়ের উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, বিভিন্ন এলাকায় প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাঁদের উদ্ধারকাজে ব্যাহত হচ্ছে। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। মায়ানমারে একটি টেলিকম টাওয়ার ভেঙে পড়েছে। প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে বেশ কিছু বাড়ি। চারদিকে লন্ডভন্ড অবস্থা। সিতওয়া এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। বিশেষত, কক্সবাজারে ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। স্থানীয় পত্রিকার বরাতেক জানা গেছে প্রবল ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে বাড়তে শুরু করে পানির প্রবাহ। এ কারণে রাজধানীতে হাঁটু পানি জমে গেছে। বাসিন্দারা জরুরি সাহায্যের আবেদন জানায় কর্তৃপক্ষের দেয়া বিভিন্ন নম্বরে।
মিয়ানমারে বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, দুপুর ১২টার পর থেকেই বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়া বাড়তে শুরু করে। এর প্রভাবে বিভিন্ন জায়গায় বসতবাড়ি বিশেষ করে টিনের বাড়িঘর এবং অস্থায়ী আবাস ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। অনেক বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে ঝড়ে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই দেশটিতে, ওয়াইফাই সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইন্টারনেট সংযোগের জন্য এখন শুধু মোবাইল ডাটাই কাজ করছে মিয়ানমারে।
মিয়ানমারের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রবিবার সকালে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি রাখাইন উপকূলে আঘাত হানে, সকাল থেকেই সেখানে দমকা হাওয়াসহ থেকে থেকে বৃষ্টি হয়। রাজ্যের ৭টি শহরের বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ মাইল রেকর্ড করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যের রাসায়ে পর্বতের একজন বাসিন্দা বলেন, "পুরো রাসায়ে পর্বতের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তারা সবাই শহরে চলে গেছেন। গ্রামে বৃষ্টি তেমন নেই। তবে অনেক বাতাস বইছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রবল বাতাসে পুরনো গাছ মাটিতে আছড়ে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঠের ঘরবাড়ি। সিটুয়ের হাঁটতে গিয়ে মনে হচ্ছে বাতাস আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। এরমধ্যে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা। প্রবল বাতাসে টেলিকম টাওয়ার ধসে পড়তে দেখা যায়। এতে সিটুয়ের ইন্টারনেট সংযোগ ও টেলিফোন লাইন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটে কোন মানুষজন নেই। হাতে গোনা কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মীদের লাইফ ভেস্ট পরে মোটর সাইকেল চালাতে দেখা গিয়েছে। দেশটির দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ আশেপাশের শহরে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মিয়াকু শহরে টহল দিচ্ছে সামরিক বাহিনী। এদিকে, মোখায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে মিয়ানমারে কর্তব্যরত জাতিসংঘ।
ভোরের আকাশ/আসা