logo
আপডেট : ১৫ মে, ২০২৩ ১২:১৩
এবার আম উৎপাদন বেশি হলেও আকারে ছোট
রাজশাহী ব্যুরো

এবার আম উৎপাদন বেশি হলেও আকারে ছোট

রাজশাহীর একটি আমের বাগানে প্রচুর আম ধরেছে কিন্তু আকারে ছোট

রাজশাহীতে গত বছরের তুলনায় এবার আম উৎপাদন বেশি হলেও আকারে ছোট। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় আমের আকার ছোট হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফল গবেষণাকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।

 

বৈজ্ঞানিক ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। গুটিও সেভাবে হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় আকারে ছোট।

 

সাধারণত গাছে আমের সংখ্যা বেশি থাকলে আকার ছোট হয় এমনটি জানালেন রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম।

 

তিনি বলেন, ‘এবার প্রতি গাছে আমের সংখ্যা বেশি। সময়মতো বৃষ্টি হলে কিছু ঝরে যেতো, বাকিগুলো দ্রুত বড় হতো। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে আকার ছোট হয়ে গেছে।’

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত বছর এক হাজার কোটি টাকার আম বিক্রি হয়। এবার দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। গত বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। এ বছর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ৫৮ হাজার টন উৎপাদন হবে। এর মধ্যে ৩০০ টন বিদেশে রপ্তানি হবে।

 

গত বছর ১৩ মে থেকে গুটি আম পাড়া শুরু হয়েছিল। তবে এবার ৪ মে থেকে এ আম পাড়া শুরু করে ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। গত পাঁচ বছর ধরে আম পাড়ার সময়সীমা বেধে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। যদিও এবার ১০ দিন আগে থেকে আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

 

আম চাষিরা জানিয়েছেন, আগাম কিছু আম পরিপক্ক হলেও বেশিরভাগ এখনো অপরিপক্ক। পরিপক্কতা বলতে আঁটি পরিপক্ক হওয়াকে বুঝিয়ে থাকেন চাষিরা। কারণ আঁটি পরিপক্ক হওয়ার আগে আম পাড়লে পাকে না। কেমিক্যাল দিয়ে পাকাতে হয়। এ জন্য অনেক সময় কাটার পর দেখা যায় আঁটি সাদা কিংবা কাঁচা।

 

তাই পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত আম পাড়তে চান না চাষিরা। এ অবস্থায় ঘোষিত ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডারে ৪ মে থেকে গুটি আম পাড়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ চাষি এখনো অপেক্ষা করছেন। কারণ গুটি আম পরিপক্ক হতে আরো দু’একদিন লাগবে।

 

চাষিদের অভিযোগ, এবার আম পাড়ার সময় নির্ধারণে তড়িঘড়ি করেছে জেলা প্রশাসন। বেশিরভাগ বাগানের আম না পাকতেই ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে। এক্ষেত্রে বাগান পর্যবেক্ষণ ও চাষিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়নি। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, একাধিক বাগানের আম পেকেছে।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ছিল, চাষিরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন। সে জন্য সমন্বয় সভা করে আম পাড়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে চাষিদের।

 

পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটে কথা হয় ভাল্লুকগাছি গ্রামের আম চাষি জয়নাল হোসেনের সঙ্গে।

 

তিনি বলেন, ‘এবার আমের আকার ছোট। ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার প্রকাশের পর গুটি আম পেড়েছেন কয়েকটি বাগানের চাষিরা। তবে তা খুবই কম এবং নতুন লাগানো গাছের আম। পুরোনো গাছের গুটি আম পরিপক্ক হয়নি। একই অবস্থা গোপালভোগ ও খিরশাপাতসহ অন্য আমের। এগুলো কেটে দেখেছি, কেবল আঁটি হয়েছে, তা সাদা। এগুলো দিয়ে আচারো হবে না। কারণ আচার বানাতেও কিছুটা পরিপক্কতা লাগে।’

 

রাজশাহী-চাঁপাই এগ্রো ফুড প্রোডিউসারের প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ারুল হক। তার ৫০ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করেন। আগে তাদের মতো চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করে ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার করা হতো। তারা বাগানের প্রকৃত অবস্থা অনুযায়ী মতামত দিতেন। কিন্তু এবার তারা ডাক পাননি জেলা প্রশাসনের সভায়। কৃষি কর্মকর্তারা কয়েকজন চাষির মতামতের ওপর ভিত্তি করে আম পাড়ার দিন নির্ধারণ করেন। এ অবস্থায় কেউ কেউ আম পেড়ে দেখেন কাঁচা।

 

আম পাড়ার সময় নির্ধারণের সভায় চাষিদের প্রতিনিধি ছিলেন উল্লেখ করে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেখানে ১০ মের পর আম পাড়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু কৃষি বিভাগ ও জেলা প্রশাসন আগেই আম পাড়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কেন এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তারাই ভালো জানেন।’

 

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, সভায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন চারঘাট এবং বাঘার কিছু বাগানের আম পরিপক্ক হয়েছে। তাই আলোচনা শেষে গুটি আম পাড়ার জন্য ৪ মে নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

চাষি ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে আম পাড়ার সময় বেধে দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।

 

তিনি বলেন, ‘পরিপক্ক হলেই আম পাড়া যাবে। আবহাওয়ার তারতম্য অনুযায়ী, যার আম যখন পরিপক্ক হবে, তখন পাড়বেন। কারো সমস্যায় পড়ার কথা নয়।’

 

ভোরের আকাশ/নি