logo
আপডেট : ১৫ মে, ২০২৩ ১৭:০০
আম রপ্তানির বাধা পেরোতে চান চাষিরা
নওগাঁ প্রতিনিধি

আম রপ্তানির বাধা পেরোতে চান চাষিরা

দেশে অন্যতম আম উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় যে পরিমান আম উৎপাদন হয়, তার তুলনায় রপ্তানির পরিমান খুব সামান্য। বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আম চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, রপ্তানি না বাড়ালে আমের কাক্সিক্ষত দাম পাবেন না চাষিরা। তাতে ভালো আম উৎপাদনে আগ্রহ ধরে রাখা কঠিন হবে।

 

গত এক দশকে নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আম উৎপাদন বেড়েছে। ফলে দেশের বাজারে কাক্সিক্ষত মূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। রপ্তানি বাড়াতে না পারলে আম নিয়ে এ উৎসাহ ধরে রাখা যাবে না। এ অবস্থায় নওগাঁর আমচাষিরা রপ্তানির বাধাগুলো দূর করার পাশাপাশি সরকার কাছ থেকে আধুনিক উদ্যোগ আশা করছেন। পাশাপাশি নওগাঁ থেকে আরও বেশি আম রপ্তানি করার জন্য রপ্তানিকারদের আহ্বান জানান চাষিরা।

 

সোমবার নওগাঁর সাপাহারে বেসরকারি সংগঠন ঘাসফুলের আয়োজনে ‘পরিবেশগত সনদ ও রপ্তানিকারদের এনগেজমেন্ট’ কর্মশালায় আম রপ্তানির ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু বাধার কথা তুলে ধরেন আমচাষিরা। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় নওগাঁর সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলায় সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি) বাস্তবায়নে করছে ঘাসফুল।

 

সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রপ্তানি উপযোগী আম উৎপাদনের জন্য কৃষকদের দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাকেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

 

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ঢাকার শ্যামপুরের সেন্ট্রাল প্যাক হাউসের উপ-পরিচালক এস এম খালিদ সাইফুল্লাহ। কর্মশলায় বাংলাদেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিই) প্রতিনিধি ও রপ্তানিকারক আবুল হোসাইন ও নাজমুল হায়দার ভুঞাঁ আম রপ্তানির ওপর চাষিদের উদ্দেশে নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।

 

কর্মশালায় উপস্থিত আমচাষিরা আম রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধার কথা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, আম রপ্তানির জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে, আম দূষণমুক্ত বা নিরাপদ করা ও আমের পচনরোধের জন্য এ অঞ্চলে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট (ভিএইচটি) প্লান্ট নেই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নওগাঁয় একটি ভিইচটি প্লান্ট স্থাপন করা প্রয়োজন।

 

আবার আম বাছাইয়ের জন্য প্যাকিং হাউস ও সহজে সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টাইন) সনদ পাওয়ার জন্য নওগাঁ কৃষি বিভাগের সঙ্গ নিরোধ শাখা স্থাপন করা দরকার। এছাড়া রপ্তানির জন্য কৃষি বিভাগের কাছ থেকে পরিবেশগত সনদপত্র পাওয়ার জন্য অন্য ঝামেলা পোহাতে হয়। আম রপ্তানির এসব বাধা দূর করা হলে নওগাঁ থেকে আরও বেশি আম রপ্তানি করে কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মধ্যে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারবে।

 

আমচাষি বকুল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে গত বছর যে পরিমাণ আম রপ্তানি হয়েছে তার অর্ধেকই হলো আম্রপালি জাতের আম। রপ্তানি হওয়া আম্রপালি আমের প্রায় ৭০ ভাগই নওগাঁর। অথচ এসব আম রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নামে বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে।

 

এর অন্যতম কারণ হলো নওগাঁর আমচাষিদের পরিবেশগত সনদপত্র না থাকা। রপ্তানিকারকেরা বিভিন্ন আড়ৎ থেকে আম কিনে সেগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর আম চাষিদের সনদপত্র দিয়ে বিদেশে রপ্তানি করেছেন। আমাদের দাবি, রপ্তানিকারকেরা যাতে সরাসরি আমাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করে আম রপ্তানি করে। নিরাপদ আম রপ্তানির ক্ষেত্রে আম সকল শর্ত মানতে রাজি আছি।’

 

আমচাষি সোহেল রানা, ‘গত বছর নওগাঁর সাপাহারেই বিভিন্ন বাগানে উত্তম পদ্ধতি চর্চা করে প্রায় ৩০০ মেট্রিক টনের বেশি আম চাষ হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের কাছ থেকে রপ্তানিকারকেরা কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে আম রপ্তানি করেছেন মাত্র ৪০ মেট্রিক টন। নওগাঁ থেকে কম আম রপ্তানি হওয়ার বড় কারণ হচ্ছে, এ অঞ্চলে একটি ভিএইচটি প্লান্ট ও প্যাকিং হাউস না থাকা। ভিএইচটি প্লান্ট ও প্যাকিং হাউস না থাকার কারণে এখান থেকে ঢাকার শ্যামপুরে নেওয়ার পথে অনেক আম নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য রপ্তানিকারকেরা এখান থেকে আম নিতে চায় না।’

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নওগাঁয় চলতি মৌসুমে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর নওগাঁ থেকে ৪০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। এবার ৩০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এজন্য কৃষকরা যাতে উত্তম কৃষি চর্চা করে আম উৎপাদন করে সেজন্য তাঁদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

 

ঢাকার শ্যামপুরের সেন্ট্রাল প্যাক হাউসের উপ-পরিচালক এসএম খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, রপ্তানির আম দূষণমুক্ত করতে হয়। না হলে আম ফেরত আসার ঝুঁকি থাকে। এতে রপ্তানিকারকেরা বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়ে থাকে।

 

এছাড়া দেশের সুনামও ক্ষুন্ন হয়ে থাকে। এজন্য যেসব কৃষক আম রপ্তানি করতে চান তাঁদের উচিত, উত্তম কৃষি পদ্ধতি চর্চা করে। আমচাষিরা তাঁর বাগানে কখন কি সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন সেটা কৃষি বিভাগকে জানাতে হবে। তা না করলে ঢাকার প্যাকিং হাউসে গিয়ে কৃষকদের পাঠানো অনেক আম বাছাইয়ে গিয়ে বাদ পড়ে যায়।

 

এতে রপ্তানিকারক ও কৃষক উভয়েই লোকসানের মুখে পড়েন। এজন্য অনেক আমচাষি রপ্তানি উপযোগী আম চাষ করতে গিয়ে উৎসাহ হারান। আম রপ্তানির এসব বাধা কাটাতে সরকার রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর আম রপ্তানির জন্য এ অঞ্চলে অন্তত একটি করে ভিএইচটি প্লান্ট ও প্যাকিং হাউস স্থাপনের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি