logo
আপডেট : ১৬ মে, ২০২৩ ১০:৪৬
বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পায় দেশের উপকূল
অ্যান্টিসাইক্লোনিক সার্কুলেশন মোখাকে মিয়ানমারে ঠেলে দেয়
শাহীন রহমান

অ্যান্টিসাইক্লোনিক সার্কুলেশন মোখাকে মিয়ানমারে ঠেলে দেয়

শাহীন রহমান: ঘূর্ণিঝড় মোখা যে তুলনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সে তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কমই। দেশের সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের দক্ষিণ উপকূলে প্রচন্ড বেগে আঘাত হানলে এর মূল অংশ চলে যায় মিয়ানমারের রাখাইন উপকূল দিয়ে। ফলে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে বেঁচে গেছে দেশের উপকূল। বিপরীতে মিয়ানমারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।

 

কিন্তু কেন ঘূর্ণিঝড় মোখা ক্রমেই আরো উত্তর-পূর্বদিকে সরে গিয়ে মিয়ানমারের ওপর আঘাত হানল। অবশ্য এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে।

 

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটি কারণে এটি বাংলাদেশের ভূখন্ড থেকে সরে গেছে। যার অন্যতম কারণ হলো অ্যান্টিসাইক্লোনিক সিস্টেম। সহজ করে বললে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের বিপরীতমুখী বায়ুর চাপ।

 

বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই অ্যান্টিসাইক্লোনিক সার্কুলেশন ক্রমাগত ঘূর্ণিঝড় মোখাকে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঠেলে উত্তর-পূর্বদিকে নিয়ে গেছে। ফলে এটি দেশের সামান্য অংশ ছুঁয়ে গেছে। বাকি প্রভাব পড়ছে মিয়ানমারের ওপরে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে ক্রমেই বাংলাদেশ, মিয়ানমারের দিকে এগিয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। তারপর অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে আছড়ে পড়ে মিয়ানমারের সিটুয়েতে। দেশের অন্য অংশে এর প্রভাব তেমন পড়েনি।

 

কারণ স্পষ্ট করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের বিপরীতমুখী বেগ বা ‘অ্যান্টিসাইক্লোনিক সার্কুলেশন’ই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে দেশে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারেনি মোখা।

 

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, বেশ কয়েকািট কারণে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব দেশে পড়েছে অনেক কম।

 

তিনি জানান, যখন সাগরে ঘূর্ণিঝড় মোখার সৃষ্টি হয়, তখনই এর বিপরীত পাশে অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিম অংশে এই অ্যান্টিসাইক্লোনিক সার্কুলেশন বা বিপরীতমুখী বায়ুর উচ্চচাপ প্রবল ছিল। এই চাপের কারণে ঘূর্ণিঝড় ক্রমাগত উত্তর-পশ্চিম অংশ থেকে সরে গেছে। এটি আরো উত্তর-পূর্বে সরে গিয়ে মিয়ানমারের মূল অংশে আঘাত করেছে।

 

পাশাপাশি তিনি বলেন, একই সময়ে পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহ সক্রিয় ছিল।

 

এছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা যে সময় আঘাত হানে, সে সময়ে সাগরে ভাটার টান ছিল। ফলে বড় ধরনের জলোচ্ছাসের সৃষ্টি হতে পারেনি। স্বাভাবিক ঝড়ের মতোই ছিল এর আঘাত।

 

যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ের মূল কেন্দ্রে একটি অংশ সেন্টমার্টিনের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। ফলে সেখানে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর বাইরে টেকনাফের দক্ষিণ অংশে বেশ ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। তবে শক্তির বিচারে মোখা বিধ্বংসী রূপ নিলেও এবার একজনেরও প্রাণহানি হয়নি।

 

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সোমবার নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।

 

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে কারো প্রাণহানি হয়নি। তবে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা ও প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের ১২ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।

 

ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের দুই হাজার বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজার ঘরবাড়ির। তবে প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়েছে। অন্য কোনো জেলায় মোখার প্রভাব পড়েনি। ফসলেরও ক্ষতি হয়নি। কেউ মারা যাননি। আহত হয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা মূল আঘাত হেনেছে মিয়ানমারে। এর কেন্দ্রের একটি অংশ বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপের ওপর দিয়ে গেছে। তবে সাগর থেকে মাটিতে এসে মোখা অনেকটা দুর্বল হয়ে যায়। এ কারণে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

 

রোববার ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর বেলা ২টা ২০ মিনিটে সেন্টমার্টিনে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ রেকর্ড করা হয় ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার। দেশের অন্য উপকূলীয় এলাকায় বাতাসের গতি ছিল এর চেয়ে অনেক কম। ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার পরপরই মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ফেলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে সবাই ঘরে ফিরে গেছে।

 

সোমবার থেকে উপকূলের জনজীবন সম্পূর্ণ স্বাভাবকি হয়েছে।

 

এদিকে ঘূর্ণিঝড় বিদায় নিলেও দেশে অন্য অংশে এখনো বৃষ্টি তেমন হয়নি। ফণে গরমের অস্বস্তি রয়েই গেছে।

 

তবে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, দু-একদিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল।

 

তারা জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখার জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে জলীয় বাষ্প বাতাসে ঢুকতে পারেনি। ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার পর বঙ্গোপসাগর থেকে আবার জলীয় বাষ্প সঞ্চার হওয়া শুরু হয়েছে। যার জেরে দ্রুত তৈরি হবে মেঘমালা। বাড়বে বৃষ্টির সম্ভাবনা।

 

তারা জানান, জলীয় বাষ্পের পাশাপাশি একটি নিম্ন চাপ অক্ষরেখারও প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। ফলে বুধবার থেকে ঝড়বৃষ্টি শুরু হতে পারে। টানা চলতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি