logo
আপডেট : ১৬ মে, ২০২৩ ১২:২৭
সৈয়দপুর পৌরসভার কসাইখানার বেহাল দশা
মো. মাইনুল হক, নীলফামারী

সৈয়দপুর পৌরসভার কসাইখানার বেহাল দশা

সৈয়দপুর পৌরসভার কসাইখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু জবাই করা হচ্ছে

নীলফামারীর প্রথম শ্রেণির সৈয়দপুর পৌরসভার কসাইখানা (কিলখানা) বেহাল দশায় রয়েছে। পর্যাপ্ত জায়গার সংকট, চারপাশে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনার স্তুপ, মোটর চুরির ফলে পানির স্বল্পতা, কুকুর ও কাকের উপদ্রব, খোলা জায়গায় রোদ-বৃষ্টিতে দুর্ভোগ। এসব নানা সমস্যার কারণে চরম জটিলতায় পশু জবাইয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কসাইদের। দীর্ঘদিন থেকে এ পরিস্থিতি বিরাজ করলেও সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।

 

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জবাই ও খালগিরি করা হচ্ছে। এ কারণে গোশতে নোংরা লেগে থাকাসহ কুকুর ও কাকের থাবায় রোগজীবাণু মিশছে। সেইসাথে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় রোগাক্রান্ত, গর্ভবতী ও অসুস্থ পশু জবাই করে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ভোক্তার হাতে পৌঁছাচ্ছে গোশত, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর ও আশংকাজনক। এ থেকে পরিত্রাণে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

 

সরেজমিনে সৈয়দপুর শহরের নয়াবাজার সুরকী মহল্লার ভাগাড় এলাকায় কিলখানায় গেলে দেখা যায়, মূল শেডের ভেতরে ও বাইরের খোলা চত্বরে গাদাগাদি করে ১০টি গরু জবাই করে চামড়া ছিলার কাজ করছে কসাইরা। মেঝেতে রক্ত, গোবরের একটা স্তর তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই চলছে গোশত কাটার কর্মযজ্ঞ। পাশেই গরুর ভুঁড়ি, চামড়া ও গোশতের উচ্ছিষ্ট ফেলা হয়েছে। সেগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে কাক আর দলে দলে কুকুরের হুরাহুরি।

 

এসবসহ ভাগাড়ের ময়লা-আবর্জনা মাড়িয়ে কাক-কুকুর ছোটাছুটি করছে শেডের ভেতরে-বাইরের চত্বরে। সেখানে আস্ত চামড়া ছেলা গরু আর গোশতের বড় বড় অংশের উপরে নোংরা পায়ে বসে ঝিল্লি টেনে ছেঁড়ায় ব্যস্ত কাক।

 

একইভাবে কুকুরেরা সুযোগ বুঝে দাঁত বসাচ্ছে গোশত কামড়ে খাওয়ার জন্য। কখনো কখনো পুরো রান বা অন্য কোনো কাটা অংশ কয়েকটা কুকুর মিলে কামড়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করছে। অথচ এসব যেন তোয়াক্কাই করছে না গোশত ব্যবসায়ীরা। এমনকি সেগুলো না ধুয়েই তারা ওই অবস্থাতেই গোশত রিকশা, ভ্যান ও অটোতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে বাজারে দোকানে।

 

এ দৃশ্য নিত্যদিনের। এমন মন্তব্য করে জবাই করার জন্য গরু নিয়ে চত্বরের সামনে অপেক্ষমাণ কসাইরা জানান, ছোট বড় মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৮০টি গরু জবাই হয় এই কিলখানায়। কিন্তু জায়গা না থাকায় একসাথে ৫-৮টির বেশি পশু জবাই সম্ভব হয় না। এ সময় অন্য কসাই বা পশু মালিকদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

 

তা ছাড়া একটি পশু জবাই, চামড়া ছিলা ও বিভিন্ন অংশ পৃথক করা এবং ভুঁড়ি পরিষ্কার করতে গড়ে ন্যূনতম আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা সময় লাগে। পানি স্বল্পতার কারণে গোশত ধোয়া আর রক্ত পরিষ্কার করতে আরো বেশি সময় লাগছে। ফলে সব গরুর খালগিরি শেষ করতে সময় লেগে যায় কমপক্ষে প্রায় ৫-৭ ঘণ্টা। এতে ভোর ৫টায় শুরু করলেও সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা বেজে যায়। শুক্রবার হলে তো আরো সমস্যার সৃষ্টি হয়। কারণ এইদিন দ্বিগুণ পশু আসে।

 

একজন বলেন, এরপরও আমরা এখানে পশু জবাই করতে আনি। সারাবছর অনেক কষ্ট করে কাজ করি। বর্ষায় এই ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়। এখন রোদে পুড়ছি আর তখন পানিতে ভিজে রক্ত, কাদা আর নোংরা ময়লায় একাকার হয়ে পড়ে শেডসহ বাইরের অংশ। কিলখানা থেকে রাস্তা পর্যন্ত ময়লায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এরমধ্যেই গরু আনা, জবাই করা ও গোশত নিয়ে যাওয়া কি যে অসহনীয় দুর্ভোগের ব্যাপার তা না দেখলে বলে বোঝানো মুশকিল।

 

জানা গেছে, ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার কসাইখানা নিতে হয়েছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। সিন্ডিকেট করে একটি চক্র এভাবে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ যদি সঠিক দরে ইজারা দেয়া হতো তাহলে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে কিলখানার উন্নয়ন করতে পারত ইজারাদার। অথবা সব টাকা যদি পৌরসভার তহবিলে জমা হতো তাহলে সেই টাকাতেও কাজ করা যেত। কিন্তু টাকা ঠিকই ব্যবহৃত হয়েছে, তবে তা চলে গেছে ব্যক্তিগত পকেটে।

 

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর গোশত ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও কিলখানার ইজারদার মো. নাদিম কোরাইশীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, নিজের টাকাই তুলতে পারছি না। সেখানে সেবা কি দিব? ইজারার টাকা দিয়েই তো উন্নয়ন করতে পারে পৌরসভা। কিন্তু বর্তমান পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো কাজই করছে না। অথচ শেডের পরিধি বাড়ানোসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান খুবই জরুরি।

 

তিনি আরো বলেন, কসাইদের কষ্টের কথা ভেবে সব সদস্যের যৌথ স্বাক্ষরে একাধিকবার লিখিত আবেদন জানিয়েছি পৌর মেয়রকে। কিন্তু তিনি বারবার আশ্বাস দিলেও কিছুই করেননি। কোনোরকম ভ্রুক্ষেপ নেই কারো। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নিয়জিত কর্তৃপক্ষও নিয়মিত আসেন না। উন্নয়ন না করায় ঠিকমতো তদারকি করতেও পারছে না।

 

ভোরের আকাশ/নি