logo
আপডেট : ১৭ মে, ২০২৩ ১৯:৪৭
নাইকো দুর্নীতি মামলায়
অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার আবেদন
নিজস্ব প্রতিবেদক

অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার আবেদন

নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তারপক্ষে আইনজীবী বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

 

গত ১৯ মার্চ নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালতে আগামী ২৩ মে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। এ অবস্থায় অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এর আগে অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন একই মামলার আরো দুই আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধু হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও ব্যবসায়ী সেলিম ভুঁইয়া।

 

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, নাইকো কোম্পানিকে কাজ দেয়ার মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুটি মামলা হয়। একটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, অন্যটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা নাইকো মামলাটি ২০০৯ সালে হাইকোর্টে বাতিল হয়। আর প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা চলমান রেখেছে সরকার।

 

গত ১৯ মার্চ কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৯ নম্বর (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন। খালেদা জিয়া ছাড়া মামলার অপর সাত আসামি হলেন- তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্র্যাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। এদের মধ্যে সেলিম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ওইদিন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আর কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, মীর ময়নুল হক ও কাশেম শরীফ শুরু থেকেই পলাতক।

 

এছাড়া মামলার আসামি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় মামলার দায় থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

 

কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি করার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়া, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর মামলার কার্যক্রমের ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দীর্ঘদিন এই মামলার বিচার কাজ বন্ধ ছিল। দুদকের আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আদেশ দেয়ার পর অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

 

নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় মামলায় বিচার শুরু হলো। এর আগে দুটি মামলায় (জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলা ও জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলা) তার কারাদণ্ড হয়েছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়। এরপর রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। এই আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর এক রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছর কারাদণ্ড দিয়ে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষনা করে নিম্ন আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন।

 

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কারাগার থেকে তাকে বিএসএমএমইউ-তে প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা করানো হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের আবেদনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তার সাজা ছয়মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তি দেয় সরকার। ২০২০ সালের ২৪ মার্চ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারার ক্ষমতাবলে সরকার শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তির আদেশ দেয়। পরদিন ২৫ মার্চ তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। সেই থেকে তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

 

ভোরের আকাশ/আসা