logo
আপডেট : ১৮ মে, ২০২৩ ১১:০০
শ্রমের হাটে অপেক্ষায় থাকেন শ্রম বিক্রেতারা
বাবলুর রহমান বারী, রংপুর

শ্রমের হাটে অপেক্ষায় থাকেন শ্রম বিক্রেতারা

রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর এলাকায় শ্রমজীবী মানুষেরা

ভোরের সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর নগরীর চারপাশ থেকে বাইসাইকেলে চড়ে বেলের ক্রিং ক্রিং শব্দ বাজিয়ে জড়ো হতে থাকেন কিছু মানুষ শাপলা চত্বর এলাকায়। গায়ে জীর্ণ পোশাক, সাইকেলে ঝুলানো আছে কোদাল, ডালি, মাটি খোঁড়ার খন্তা, শাবল, আবার কারো কাছে বাঁশ কাটার দা ও করাত। এসেছেন শ্রমের হাটে।

 

অপেক্ষা নিজেকে বিক্রি করার, তবে পণ্য হিসেবে নয়, শ্রমিক হিসেবে। রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর এলাকায় ভোর বেলায় এমন চিত্র দেখা যায়।

 

রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, বাঁশের কাজ করা কারিগরসহ বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষ আসেন কাজের সন্ধানে। তবে শ্রমের হাটে আসা অনেকে বিক্রি হলেও কিছু থেকে যায় অবিক্রিত। কাজ পেলে মুখে হাসি ফোটে হাটে আসা শ্রমিকদের, আর কাজ না পেলে মলিন মুখে ফিরে যান ঘরে, অপেক্ষা করতে হয় পরবর্তী দিনের জন্য।

 

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগেও ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে হতদরিদ্ররা পরিবারের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতেই আজও নিজেকে বিক্রি করেন শ্রমের হাটে। তাদের কিনতে আসেন অনেক প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার ও ব্যক্তি মালিকেরা।

 

মঙ্গলবার ভোরবেলায় সরেজমিনে ঘুরে কথা হয় দূর-দূরান্ত থেকে নগরীতে কাজের সন্ধানে আশা দিনমজুর শাহাদাত হোসেন, বাদশা মন্ডল, আনছার আলী, জব্বার আলী, মকবুল হোসেন, মইদুল ইসলাম ও মজিবর মিয়ার সঙ্গে।

 

রংপুরের সাহেবগঞ্জ এলাকা থেকে আশা রাজমিস্ত্রি মজিবর মিয়া বলেন, আজ দুদিন যাবত তিনি কোনো কাজ পাচ্ছেন না। কাজ হলে দৈনিক হাজিরা পান ৫৫০ টাকা। বর্তমানে ইট বালু রড সিমেন্ট সবকিছুর দাম বেশি। অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছেন।

 

ব্যক্তিগতভাবে কেউ বাড়িঘর নির্মাণ কিংবা সংস্কারের কাজ করছেন না। তাই কাজের অভাব। কাজ না পেলে বাড়ি ফিরে যেতে হবে খালি হাতে। ফিরে গেলে পরিবারকে নিয়ে খাবেন কি?

 

তাই তিনি কাজ পাওয়ার অপেক্ষায় বসে আছেন।

 

শ্রমের হাটে এসেছেন রংপুর নগরীর হাজির হাট এলাকা থেকে দিনমজুর আনসার আলী। সঙ্গে এনেছেন কোদাল ও ডালি। মাটি কাটা কিংবা বালু তোলার কাজ করবেন। গত দুদিন বালু তোলার কাজ করে ৪৫০ টাকা হাজিরা পেয়েছেন।

 

তিনি বলেন, গ্রামে এখনো সেইভাবে ধান কাটার কাজ শুরু হয় নাই। ধান কাটার কাজ শুরু হলে গ্রামে ধান কাটার কাজ করবেন। তাই ঘরে বসে না থেকে শহরে এসেছেন কাজ করার জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ পাননি, তবে কাজের অপেক্ষায় আছেন তিনি।

 

রংপুরের মডার্ন মোড় এলাকার আশরাতপুর গ্রাম থেকে বাঁশের কাজ করার জন্য এসেছেন বাদশা মন্ডল। সঙ্গে এনেছেন দা ও করাত। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে গ্রামের মানুষের হাতে টাকা-পয়সা না থাকার কারণে কেউ বাঁশের কাজ করান না। কিছু গৃহস্থের ফসল কেটে গোলায় তুললেও কিক্রি না হওয়ার কারণে গ্রামের মানুষ সচ্ছল হচ্ছেন না।

 

কাজ হলে হাজিরা কত পান জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যা দাম তাতে ৫০০ টাকার নিচে কাজ করা সম্ভব নয়। গত কয়েকদিন শহরের একজনের গরুর গোয়াল ঘরের বেড়ার নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে মজুরি পেয়েছেন। আজকেও হয়তো কাজ পাবেন বলে তিনি আশা করেন।

 

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিচালক ওবায়দুর রহমান জানান, এখনো অনেক জায়গায় ধান কাটার কাজ সেভাবে শুরু হয়নি। কিছুদিন পরে পুরোদমে ফসল কাটার কাজ শুরু হবে। তখন এই সংকট কেটে যাবে।

 

ভোরের আকাশ/নি