মুম্বাইয়ের হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের ধনাঢ্য পরিচালক - প্রযোজক আদিত্য চোপড়া এবং জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী রানি মুখার্জি বিয়ের আগে টানা পাঁচ বছর প্রেম করেছেন। বিয়ের পর তাদের নয় বছরের সংসার। এই জুটির প্রেমকাহিনী কিন্তু চলচ্চিত্রের কাহিনীর চেয়ে কোনও অংশে কম কিছু নয়।
প্রেমের টানে রানীর সঙ্গে থাকবেন বলে ঘরও ছেড়েছিলেন আদিত্য চোপড়া। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির সেটে প্রথম আলাপ হয় তাদের। রানীকে অবশ্য আগে থেকেই চিনতেন আদিত্য। তবে আদিত্যকে নাকি এড়িয়ে যেতেন রানী।
১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাজা কি আয়েগি বারাত’ ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের মনে জায়গা করেছিলেন কলকাতার বঙ্গললনা রানী মুখার্জি । একই সঙ্গে নজর কেড়েছিলেন আদিত্যেরও। ছবি মুক্তির পর এক রেস্তরাঁয় রানীকে দেখতে পান তিনি। প্রথম ঝলকেই নায়িকাকে দেখে পছন্দ হয় তার ।
আর ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির সাফল্যের পর হিন্দি ফিল্মজগতে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন আদিত্য। তিনি এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানান, তখন বলিউডের অধিকাংশ তারকাই দেখা হলে তার সঙ্গে আলাপ জমাতেন। কিন্তু রানীর ক্ষেত্রে সেটা ছিল বিপরীত।
ভারতীয় গণমাধ্যমকে এক সাক্ষাৎকারে আদিত্য জানান, দেখার পরেও রানী এড়িয়ে যান তাকে। ওর এমন আচরণ দেখে অবাক হয়ে যান আদিত্য। পরে আদিত্য তার বন্ধু করন জোহরের সঙ্গে দেখা করেন। করন তখন ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির জন্য নতুন মুখের সন্ধানে ছিলেন। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির জন্য করনের কাছে রানীর নাম প্রস্তাব করেন আদিত্য। বন্ধুর কথায় রানীকে অভিনয়ের প্রস্তাবও দিয়ে ফেলেন করন। শেষ পর্যন্ত ছবির সেটে রানীর সঙ্গে পরিচয় হয় আদিত্য'র।
রেস্তরাঁয় দেখা হওয়ার পরেও রানী যে আদিত্যকে দেখে এড়িয়ে চলে যান সে কথা তাকে জানান আদিত্য। রানী সব শুনে আদিত্যকে জানান, তাকে নাকি চিনতেই পারেননি তিনি। চিনতে পারলে নিশ্চয়ই আদিত্যর সঙ্গে কথা বলতেন বলেও জানান। এরপর ধীরে ধীরে রানী এবং আদিত্য'র মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। ২০০১ সাল থেকে যশরাজ ব্যানারের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন রানী। একই বছর দীর্ঘকালীন প্রেমিকা পায়েল খান্নাকে বিয়ে করেন আদিত্য।
জানা যায়, স্কুলে পড়ার সময় থেকেই একে অপরকে চিনতেন আদিত্য এবং পায়েল। আদিত্য'র বাবা যশ চোপড়া এবং মা পামেলা চোপড়া শুরু থেকেই পায়েলকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। দুই পরিবারের সম্মতিতে আদিত্য এবং পায়েলের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। পায়েল ছিলেন পেশায় ইন্টিরিয়র ডিজাইনার। জানা গেছে, যশরাজ স্টুডিওর সাজসজ্জার দায়িত্বে ছিলেন পায়েল নিজেই। আদিত্য এবং পায়েলের বন্ধুত্ব থাকলেও তাদের বিয়ে বেশি দিন টেকেনি।
২০০৯ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় দু'জনের। পায়েলের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছু দিন পরেই বলিউড জুড়ে জোর কানাঘুষা শুরু হয় রানীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন আদিত্য। খবর পাঁচ কান হওয়া মাত্রই সকলে আদিত্য'র বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য রানীকে দায়ী করতে শুরু করেন।
জানা যায়, রানীর সঙ্গে আদিত্য'র মেলামেশাও পছন্দ করতেন না যশ এবং পামেলা। তবুও সব কটাক্ষ উপেক্ষা করে পাঁচ বছর সম্পর্কে ছিলেন তারা। রানীকে বিয়ে করার কথা বাড়িতে জানান আদিত্য। তারপরেই শুরু হয় অশান্তি। জানা গেছে, যশ ও পামেলার মধ্যে কেউই পুত্রবধূ হিসেবে রানীকে মেনে নিতে পারেননি। সে কথা আদিত্যকেও জানান তারা। কিন্তু রানীকে ছাড়া অন্য কাউকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে ভাবতে রাজি ছিলেন না আদিত্য।
পরিবারের অমত থাকায় বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান আদিত্য। এমনও শোনা যায়, ওই সময় রানীকে নিয়ে হোটেলে ওঠেন আদিত্য। এমনকী এক বছর নাকি হোটেলেই কাটিয়েছিলেন তারা। পুত্র বাড়ি ছেড়ে এত দিন বাইরে রয়েছে, মা হিসেবে মেনে নিতে পারছিলেন না পামেলা। তিনি আদিত্যকে বাড়ি ফিরে আসার অনুরোধ করেন।
কিন্তু আদিত্য শর্ত রাখেন, তার ব্যক্তিগত জীবনের কোনও রকম সিদ্ধান্তে বাবা - মা হস্তক্ষেপ না করলে তবেই তিনি বাড়ি ফিরে যাবেন। আদিত্য'র সেই শর্তে রাজি হয়ে যান যশ এবং পামেলা। ধীরে ধীরে চোপড়াদের বাড়িতে যাওয়া - আসা বাড়িয়ে দেন রানী। অভিনেত্রী হিসেবে রানীকে পছন্দ করতেন যশ ও পামেলা। মেলামেশা বাড়লে ছেলে আদিত্য'র জীবনসঙ্গিনী হিসেবেও তাকে মেনে নেন তারা।
পাঁচ বছর সম্পর্কে থাকার পর ২০১৪ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়েন আদিত্য এবং রানী। ইতালিতে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং কয়েক জন বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। বিয়ের এক বছর পর কন্যাসন্তান আদিরা'র জন্ম দেন রানী।
আদিত্য'র সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে রানী এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি কোনওভাবেই আদিত্য'র ঘর ভাঙিনি। ওর বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার অনেক পরে আমরা মেলামেশা শুরু করেছিলাম। এমনকি, সেই সময় ও আমার প্রযোজকও ছিল না। চলতি বছরের ২০ এপ্রিল ৭৪ বছর বয়সে প্রয়াত হন পামেলা। ২০১২ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন যশ। এখন যশরাজ প্রযোজনা সংস্থার চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন আদিত্য।
ভোরের আকাশ/নি