logo
আপডেট : ২০ মে, ২০২৩ ১৯:৪৪
সিসিক নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষনা বিএনপির আরিফুলের
নিজস্ব প্রতিবেদক

সিসিক নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষনা বিএনপির আরিফুলের

ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা ও নাটকীয়তার পর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের(সিসিক) মেয়র পদে নির্বাচন না করার ঘোষনা দিয়েছেন সিসিকের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। শনিবার বিকালে নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় এ ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষনার মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটল।

 

বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেবে না বিএনপি-এই সিদ্ধান্তের বাইরে যেয়ে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র পদে ভোট করবেন কিনা তা নিয়ে গত বেশ কিছুদিন ধরেই সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছিল। সাধারণ ভোটার তো বটেই; দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও এ নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে ছিলেন। এই ধোঁয়াশার সৃস্টি করেছিলেন খোদ আরিফুল। তিনি বিভিন্ন সময়ে বলেছিলেন, ২০ মে তার অবস্থান পরিস্কার করবেন। আরিফুল হকের পূর্ব নির্ধারিত এই ঘোষনার অপেক্ষায় ছিলেন অন্যান্য প্রার্থীরা। এসময়ের মধ্যে তিনি ঢাকায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সিলেটের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন। একইসঙ্গে গত একমাস ধরে সিলেটে দলের নেতাকর্মী শুধু না, প্রতিটি মহল্লার পঞ্চায়েত প্রধান, মুরুব্বি, সামাজিক সংগঠন, দলের ওয়ার্ড কমিটির নেতা, নিজের শুভানুধ্যায়ীর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে নিবিড়ভাবে কথা বলেছেন। বিভিন্ন সময় তাকে নানাভাবে হয়রানির অভিযোগও করেছেন।

 

বিষয়টি নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনার জন্য রোজার সময় আরিফ লন্ডনে যান। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক ও ইফতার পার্টিতে অংশ নেন। দেশে ফিরেও তিনি প্রার্থিতার বিষয়ে খোলাসা করেননি। মে মাসের শুরু থেকে সিলেটে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু হয় বলে দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ। ফলে তার পর থেকে সিলেট বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর নির্বাচনের মাঠে থাকার ব্যাপারে কিছুটা চাপে পড়ে যান আরিফ। বর্তমান মেয়র আরিফুর হক নির্বাচনের মাষ্টার মাইন্ড হিসাবে পরিচিত। নির্বাচনের পরিস্থিতি যেকোন সময় পরিবর্তন করে দেয়ার যোগ্যতা রয়েছে দুইবারের মেয়রের। গতকাল দুপুরে এক জনসভায় বিষয়টি স্পষ্ঠ করলেন আরিফুল হক।

 

জনসভায় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বিএনপি আমার প্রাণের সংগঠন। যে সংগঠনকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছি, সেই সংগঠনের ক্ষতি হোক আমি এটা চাই না। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের রক্তের সঙ্গে আমি বেইমানি করতে চাই না। তিনি বলেন, আমি বিএনপির একজন কর্মী। আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবো না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এ আমি নির্বাচনে অংশ নেবো না। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমার অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে প্রশাসনের লোক জন। আমি আমার নেতাকর্মীদের এভাবে বিপদে ফেলতে পারিনা। সুষ্ঠ নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। দেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আপনারা সিলেটের সাধারণ মানুষ আমাকে ভোট দিবেন। আমি নির্বাচন করলে আপনারা দলে দলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আমাকে ভোট দিবেন। কিন্তু সেই ভোট অন্ধকারে কার কাছে যাবে সেটা আপনারা সবাই জানেন। আমি আপনাদের এই আমানত অন্ধকারে নিয়ে যেতে চাই না। কিন্তু সরকার দলের প্রার্থী বিজয়ী হবে। এরকম প্রহসনের নির্বাচনে আমরা অংশ নিবো না। তিনি বলেন, আমি আপনাদের আরিফ, আমি অন্ধকারে হারিয়ে যাব না। মেয়র থাকলেও কাজ করব, না থাকলেও করব।

 

আরিফুল হক চৌধুরী আরো বলেন, নির্বাচনকে বানচাল করতে এরই মধ্যে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল সম্পন্ন করা হয়েছে। আমি মনোনয়ন কেনার আগেই আমার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যারা আমার সঙ্গ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যান, ছবি দেখে তাদের গ্রপ্তার করা হচ্ছে। এটা কীসের আলামত? সিলেটে যে ভোট ডাকাতি হবে সেটার ইঙ্গিত আপনারা দেখছেন। নির্বাচনের মাত্র এক মাস বাকি কিন্তু এখনও ভোটাররা ইভিএম কী জানে না। তিনি বলেন, ইসি সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচন চায় না। তারা চায় ভোট ডাকাতি। এজন্য তারা ভোটারদের ইভিএম কী জানাচ্ছে না। ইভিএম নিয়ে জরিপ চালিয়ে দেখেন শতকরা ৯৯ শতাংশ মানুষ ইভিএম চায় না।

 

তিনি দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এখন আমাকে ফাঁসাতে নানা ষড়যন্ত্র করা হবে। আমি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, আমি আরিফুল হক চৌধুরী আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না।

 

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী বদর উদ্দিন কামরান ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।

 

২১ জুন অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তখন থেকেই দুইবারের মেয়র আরিফের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা চলছিল।

 

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। ভোট হবে ২১ জুন।

 

ভোরের আকাশ/আসা