logo
আপডেট : ২২ মে, ২০২৩ ১১:২৮
উজার হচ্ছে বন বিভাগের গাছ, বেদখল হচ্ছে জমি
ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি

উজার হচ্ছে বন বিভাগের গাছ, বেদখল হচ্ছে জমি

ডোমার বন বিভাগের আওতাধীন এলাকার জমি দখল করে এভাবেই নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়ি

নীলফামারীর ডোমারে উজার হচ্ছে বন বিভাগের গাছ ও জমি। বনের জমি দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা স্থাপনা ও ঘরবাড়ি। ইতোমধ্যে বেদখল হয়ে গেছে ৫৮৫.১৭ একর জমি।

 

ডোমার বন বিভাগের আওতায় ডোমার ও ডিমলা উপজেলার ডোমার সদর বিট, ডিমলা বিট, গোমনাতী বিট, গোসাইগঞ্জ বিট, সুন্দর খাতা বিট, সাতজান বিট ও ছাতুনামা বিটসহ মোট ৭টি বিটের আওতায় ৩ হাজার ৫১ একর জমিতে রয়েছে সংরক্ষিত বন, বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও খালি মাঠের জমি। বন বিভাগের জনবল সংকট, মামলার ঝামেলা, কর্মকর্তাদের উদাসীনতা এবং তদারকির অভাবে দিনে দিনে উজার হচ্ছে বন। বেদখল হচ্ছে মাঠের জমি।

 

৩ হাজার ৫১ একর জমির মধ্যে ইতোমধ্যে ৫৮৫.১৭ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত চুরি যাচ্ছে বনের গাছ। এমনকি বনের মাঝখানে জমি জবরদখল করে পাকা ঘরবাড়ি তৈরি করছেন অনেকে। বেদখলকৃত জমি এবং চুরি যাওয়া গাছের বিষয়ে গত কয়েক বছরে মামলা হয়েছে শতাধিক।

 

একটি সূত্র জানায়, বনের গাছ চুরি করে মামলার খরচ চালায় বিবাদীরা। ডোমার রেঞ্জের ৭টি বিটের আওতায় মোট ২০টি পদের বিপরীতে জনবল রয়েছে মাত্র ৯ জন।

 

ডোমার বনবিভাগের তথ্যানুযায়ী, ৭টি বিটের মধ্যে গোসাইগঞ্জ বিটের আওতায় গোসাইগঞ্জ মৌজায় ৪১ ব্যক্তি জমি দখল করেছেন ৬১.৬৭ একর। ডোমার সদর বিটের আওতায় ছোট রাউতা মৌজায় ১৮ ব্যক্তি দখল করেছেন ৬.২৮ একর জমি। পূর্ব বোড়াগাড়ী মৌজায় ৪৩ ব্যক্তি দখল করেছেন ২৫.৪২ একর জমি। মটুকপুর মৌজায় ৬৬ ব্যক্তি দখল করেছেন ১৫.৮২ একর জমি।

 

গোমনাতী বিটের আওতায় দক্ষিণ গোমনাতী মৌজায় ৬২ ব্যক্তি দখল করেছেন ১৯.৫১ একর জমি। বামুনিয়া মৌজায় ৬২ ব্যক্তি দখল করেছেন ১২.৯৮ একর জমি। উত্তর গোমনাতী মৌজায় ২১ ব্যক্তি দখল করেছেন ৯.১৬ একর জমি এবং গোমনাতী মৌজায় ৩০ ব্যক্তি দখল করেছেন ১০.৮৯ একর জমি। সুন্দর খাতা বিটের আওতায় পাঙ্গা মৌজায় ৪৩ ব্যক্তি দখল করেছেন ৪৫.৬২ একর জমি।

 

মেলা পাঙ্গা মৌজায় ১১২ ব্যক্তি দখল করেছেন ৮৯.৫৫ একর জমি। ছাতুনামা বিটের মধ্য সুন্দর খাতা মৌজায় ৫৬ ব্যক্তি দখল করেছেন ৪৭.৪১ একর জমি। নিজ সুন্দর খাতা মৌজায় ৪৮ ব্যক্তি দখল করেছেন ১৬.৫৭ একর জমি। পশ্চিম ছাতনাই মৌজায় ৩৭ ব্যক্তি দখল করেছেন ১১.৩৩ একর জমি এবং শোভাগঞ্জ বালাপাড়া মৌজায় ১৩ ব্যক্তি দখল করেছেন ৪.০৭ একর জমি।

 

সাতজান বিটের আওতায় সাতজান মৌজায় ১৩ ব্যক্তি দখল করেছেন ১৬.১৫ একর জমি। নাউতারা মৌজায় ৯ ব্যক্তি দখল করেছেন ৬.০২ একর জমি। ডিমলা বিটের আওতায় কুটির ডাংগা মৌজায় ১১৩ ব্যক্তি দখল করেছেন ১১৫.৪৯ একর জমি। রামডাংগা মৌজায় ৬৩ ব্যক্তি দখল করেছেন ২০.৫৬ একর জমি। ছোটখাতা মৌজায় ২ ব্যক্তি দখল করেছেন ০.২৮ একর জমি।

 

পচার হাট মৌজায় ৬ ব্যক্তি দখল করেছেন ১১ একর জমি এবং দক্ষিণ সুন্দর খাতা মৌজায় ১০০ ব্যক্তি দখল করেছেন ৩৯.৩৭ একর জমি। এসব জমি গত কয়েক বছর ধরে দখল করে তাতে চাষাবাদ করে আসছেন উল্লেখিত ব্যক্তিরা।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গোমনাতী বিট অফিসের আঙ্গিনায় আবাদ করা হয়েছে ভুট্টাক্ষেত। গোমনাতী বিট কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম দায়িত্বে থাকলেও তিনি কোনোদিনও সেখানে অবস্থান করেননি। গোমনাতী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজার রহমান গত ৮ মাস আগে গোমনাতী বন বিভাগের মাঝখানে প্রায় ৮ বিঘা জমি দখল করে চাষাবাদ করে আসছেন। সেখানে তিনি পাকা ঘরবাড়ি তৈরি করছেন।

 

সেখানেই স্থায়ী নিবাস গড়ার চেষ্টা করছেন। এ জমি দখল করায় তাদের নামে তিনটি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। এ বিটের প্রায় ৬০ শতাংশ জমি বেদখল হয়ে গেছে। বেদখলকৃত জমির এক শতাংশ জমিও উদ্ধার করতে পারেনি বন কর্তৃপক্ষ। শুধুমাত্র মামলা দিয়েই খালাস।

 

মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এখানে আমাদের ব্যাক্তি মালিকানা ২.৫৪ একর জমি রয়েছে। সিএস, এসএ ও বিএস রেকর্ড আমাদের নামে রয়েছে। আমরা ওই জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। বর্তমানে ওই জমি আমাদের দখলে রয়েছে।

 

ডোমার রেঞ্জ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুল হাকিম বলেন, জমি বেদখলের বিষয়ে আমরা আদালতে একাধিক মামলা করেছি। বেদখল করা জমি বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত রয়েছে। উদয়ানকুর সেবা সংস্থা নামের একটি এনজিও বনের জমি বেদখল করতে তাদেরকে সহায়তা করছে।

 

বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আমাদের উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। বিবাদীরা সংখ্যায় বেশি। জনবল সংকট থাকায় আমরা অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছি।

 

ভোরের আকাশ/নি