logo
আপডেট : ২২ মে, ২০২৩ ১১:৪৯
গোসাইরহাটে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে অনিয়ম-দুর্নীতি
মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর

গোসাইরহাটে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে অনিয়ম-দুর্নীতি

শরীয়তপুরে গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

 

সরকারি প্রকল্পে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচির (ইজিপিপি) সরকারি বরাদ্দের টাকা নয়ছয় হচ্ছে।

 

এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নভুক্ত গ্রামাঞ্চলের স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশানঘাট, গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট স্থাপন, মেরামত ও সংস্কারের জন্য সরকারি এবং বিভিন্ন সংস্থার বরাদ্দ অর্থের সিংহভাগ তছরুপ হচ্ছে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে।

 

এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের একাংশ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন।

 

জানা গেছে, দেশের তৃণমূলে উন্নয়ন ও দরিদ্রদের সহায়ক হিসেবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার নানা শিরোনামে অর্থ বরাদ্দ হয় উপজেলা ও জাতীয় সংসদ সদস্যের অনুক‚লে। উন্নয়নের জন্য ত্রাণ, দুর্যোগ ও পুনর্বাসন এবং স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে বরাদ্দ, সাধারণ ও বিশেষ বরাদ্দ নামে পরিচিত।

 

একইভাবে বরাদ্দ হয় প্রত্যেক সংসদ সদস্যের অনুকূলে। উপজেলার অনুকূলে বরাদ্দ অর্থ সমন্বয় কমিটির সভার মাধ্যমে বণ্টন হয় বিভিন্ন ইউনিয়নভুক্ত এলাকার প্রকল্পের নামে। যা বাস্তবায়নের দায়িত্বে জনপ্রতিনিধিরা থাকলেও দেখভালের দায়িত্ব থাকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার ওপর।

 

জানা গেছে, গোসাইরহাট উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৯৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এ প্রকল্পের কাজগুলো উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণের সমন্বয়ে গ্রামাঞ্চলের অতিদরিদ্র লোকজন দিয়ে করানোর কথা যা ৪০ দিনের কর্মসূচি (ইজিপিপি) নামে পরিচিত।

 

কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টো। শ্রমিকের পরিবর্তে ভেকু দিয়ে কাজ করা ও নির্ধারিত শ্রমিকের চেয়ে অনেক কম নামমাত্র শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের কাজ যেনতেনভাবে শেষ করে সরকারের এ বরাদ্দের টাকা হরিলুট হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম এ হরিলুটের মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।

 

জানা গেছে, গোসাইরহাট উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নে আইনি জটিলতায় নির্বাচন না হওয়ায় চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য রয়েছে। অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচি (ইজিপিপি) চলমান রয়েছে এখানে। কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকার কারণে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম একক কর্তৃত্ব স্থাপন করে ছলচাতুরির মাধ্যমে প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইদিলপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মাছুয়াখালীর রব মাঝির বাড়ি থেকে জলিল মাদবরের বাড়ির ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এবং একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের নাছির দপ্তরির বাড়ি থেকে আবুল বাশার শিকদারের কার্পেটিং রাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের কাজ ৬০ জন করে শ্রমিক দিয়ে করানোর কথা থাকলেও সেখানে মাত্র ২৫-৩০ শ্রমিকের কাজ করতে দেখা গেছে।

 

শ্রমিকদের কর্ম তালিকায় নারী-পুরুষ মিলে ৬০ জনের নাম থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে নারীদের কোনো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তালিকায় স্থানীয় মহিলা শ্রমিক হিসেবে খুখুমনি, সুমি বেগম, পারভীন বেগম, আম্বিয়া, মুকুল, রোকসানাসহ অনেকের নাম থাকলেও তারা কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত নেই।

 

স্থানীয় কুদ্দুস বেপারী, শাহেদ আলমসহ অনেকেই জানান, তালিকায় ভুয়া নাম ব্যবহার করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পছন্দের লোকজনের মোবাইল সিমের মাধ্যমে ওইসব অনুপস্থিতি শ্রমিকদের টাকা তারা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে।

 

এ ব্যাপারে ইদিলপুর ইউনিয়নের ১নং প্রকল্পের সভাপতি ইদিলপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মামুন মিয়া বলেন, আমাকে ওই প্রকল্পের সভাপতি করা হলেও আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। সবকিছু দেখভাল করেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম।

 

একই ইউনিয়নের ২নং প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মো. মাসুম আলম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সবকিছুর দায়দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার। কাগজে কলমে শুধু আমরা আছি।

 

প্রকল্পের ট্যাগ অফিসার মাইনুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের সভাপতিকে জিজ্ঞাসা করব, কেন শ্রমিক কম ছিল। যতজন শ্রমিক পাই তাদের বিল দেয়া হবে।

 

গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলামের কার্যালয়ে গেলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইউএনওর অনুমতি ছাড়া আমি কিছু বলতে পারব না।

 

ভোরের আকাশ/নি