logo
আপডেট : ২৩ মে, ২০২৩ ১১:১৬
বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে হার্ডলাইনে আওয়ামী লীগ
নিখিল মানখিন

বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে হার্ডলাইনে আওয়ামী লীগ

নিখিল মানখিন: দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বেড়েই চলেছে রাজনৈতিক উত্তাপ। হার্ডলাইনে চলে এসেছে আওয়ামী লীগ। যেকোনো উপায়ে দখলে রাখবে রাজনৈতিক মাঠ। নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিদিন মাঠে অবস্থান এবং কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।

 

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাময়িক আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে আওয়ামী লীগ। কূটনৈতিক চাপের পাশাপাশি সরকার পতন ঘটাতে বিএনপির এক দফা আন্দোলনের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত আওয়ামী লীগ। গত বছরের শেষ দিকে শুরু হওয়া বিএনপির আন্দোলনের বিপরীতে এতদিন শান্তি সমাবেশ করে আসছে দলটি। অবশেষে শান্তি সমাবেশকে প্রতিরোধ সমাবেশে রূপ দেয়ার ঘোষণা দিল দলটির হাইকমান্ড।

 

এখন থেকে প্রতিরোধ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে গত রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেক শান্তি সমাবেশ করেছি। এবার খুনি, অপশক্তির আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে হবে। তাদের ষড়যন্ত্রের দুর্গ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেব। বিএনপিকে ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিহত করতে হবে।

 

ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন শেখ হাসিনার সরকারকে পতনের জন্য এক দফা ঘোষণা দিয়েছেন। আর গত ১৯ মে রাজশাহীর পুঠিয়ায় দলটির জেলা আহব্বায়ক বললেন, শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। আমরা অনেক শান্তি সমাবেশ করেছি।

 

নেতাকর্মীদের বলব, আর শান্তি সমাবেশ নয়, তাদের প্রতিরোধ করা হবে। শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে সারাবাংলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করা হবে।

 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, নির্বাচন ঠেকাতে এলে বাংলার জনগণকে নিয়ে আমরা প্রতিহত করব। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে বাধা দিতে দেব না। সংবিধানের বাইরে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। হতে দেয়া হবে না।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নিজ নিজ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অটল থাকার মাঝে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাতের শঙ্কার গন্ধ পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল।

 

তারা বলছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী লীগকে চাপে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনের আগেই নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করছে তারা। সরকার পতন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে এক দফা আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এজন্য আগে থেকে পর্যায়ক্রমে কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা। একই ধরনের কর্মসূচিতে আছে সমমনা আরো অনেক দল।

 

এসব দলকে নিয়ে চলমান যুগপৎ আন্দোলনকে এক দফার আন্দোলনে পরিণত করে দাবি আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির। দলটির বিভিন্ন সূত্রের দাবি এক দফার আন্দোলন সফল করতে এখন পর্যায়ক্রমে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এক দফার আন্দোলন হবে চ‚ড়ান্ত আন্দোলন। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

 

এদিকে, আওয়ামী লীগের শীর্য পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ভোরের আকাশকে বলেন, বিএনপিসহ সব বিরোধী দলের কর্মকান্ড অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চাপ সামাল দিয়ে সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে অনড় রয়েছে দলটি। বিএনপির এক দফা দাবি মানতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কিন্তু সাংবিধানের বাইরে গিয়ে বিএনপির কোনো দাবিই আমলে আনা হবে না।

 

উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই হবে আগামী নির্বাচন। এ নিয়ে বিএনপি আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে রাজপথেই তাদের মোকাবিলা করা হবে। অবশেষে ব্যাপক পরিসরে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক মাঠে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের বিএনপি প্রতিরোধ কর্মসূচি।

 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা মাঠে আছি, মাঠে থাকব। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব। কেউ অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব। বিএনপির গতিবিধি ভালো মনে হচ্ছে না। তারা আবার নাশকতার দিকে এগোচ্ছে। তাই রাজনৈতিক মাঠে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কর্মসূচি গড়ে তোলা হবে।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, বিএনপিকে অনেক ছাড়া দিয়েছি, আর নয়। সংবিধানবিরোধী দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের নামে তারা যা ইচ্ছা তাই করে যাবে, তা হতে পারে না। তাদের ধ্বংসাত্মক আন্দোলন দেশের মানুষের জানমালের জন্য চরম হুমকি।

 

তাই এবার প্রতিটি স্থানে বিএনপিকে প্রতিরোধ করা হবে। রাজনৈতিক মাঠে তাদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে। দেশের মানুষ শান্তি চায়, সাংবিধানিকভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ করতে চায়। কিন্তু শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নস্যাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি।

 

আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, দেশ ও জনগণবিরোধ কর্মকান্ডে নেমেছে বিএনপি। তাদের ষড়যন্ত্রের শিকড় অনেক গভীরে।

 

আন্তর্জাতিক মহলকে উস্কিয়ে দিয়েই তারা থেমে থাকছে না, তারা মাঠে আন্দোলনের নামে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের লালসায় দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে আওয়ামী লীগ।

 

ভোরের আকাশ/নি