টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভার পশ্চিম পাড়ায় ওষুধি ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ‘ব্ল্যাক রাইস’ ধান চাষে করে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা নাহিদ মিয়া সফল হয়েছেন। তিনি সরকারি সা’দত কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র ও বাসাইল পশ্চিম পাড়ার নাছির উদ্দিনের ছেলে। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি শখের বসে ৫০ শতাংশ জমিতে এ ধানের চাষ করেছেন। এতে বাম্পার ফলন হয়েছে। বাসাইল উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের সেহরাইল গ্রামে নাহিদ মিয়ার ধান ক্ষেতে ব্ল্যাক রাইস এখন হাওয়ায় দোল খাচ্ছে।
পৈতৃক ৫০ শতাংশ জমিতে নিজ উদ্যোগে ‘ব্ল্যাক রাইস’ ধান চাষ করেছেন নাহিদ। ধানগুলো অনেকটা পরিপক্ব হয়েছে- ক’দিন পরই কেটে ঘরে তুলবেন। ক্ষেতে বাতাসের সাথে দোল খাচ্ছে ‘ব্ল্যাক রাইস’ ধানগুলো। দেখতেও খুব সুন্দর লাগছে। তার ধান ক্ষেত দেখতে অনেকেই ভিড় করছেন। তার জমির ধান দেখে অনেক কৃষক ‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। ভিয়েতনামি ‘ব্ল্যাক রাইস’ ধানের বীজ অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার করে নিয়ে আসেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালো চাল (বেগুনি চাল হিসেবেও পরিচিত) হচ্ছে- ধানের এক জাতীয় বিশেষ ধরনের প্রজাতি। এ ধরনের ধান কৃষি মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত নয়। পৃথিবীতে ৭-৮ জাতের ব্ল্যাক রাইস ধান চাষ হয়ে থাকে।
এর বিভিন্ন প্রকরণের মধ্যে কয়েকটি বেশ আঠালো বা চটচটে চাল উৎপাদন হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের প্রকরণের মধ্যে রয়েছে- ইন্দোনেশীয় কালো চাল, ভিয়েতনামি চাল, ফিলিপাইনের বালাতিনা চাল, চায়না ব্ল্যাক রাইস এবং থাই জুঁই (জেসমিন) কালো চাল। মণিপুরে এ জাতীয় কালো চাল চক-হাও নামে পরিচিত। সে অঞ্চলে কালো চাল থেকে তৈরি নানা জাতীয় মিষ্টান্ন অনুষ্ঠানাদিতে মূল ভোজনপর্বে পরিবেশন করা হয়।
কালো চাল বা ব্ল্যাক রাইস অনেকের কাছে বেশ অপরিচিত হলেও এর ইতিহাস প্রাচীন। হাজার বছর ধরে এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই চালের চাষ হচ্ছে। চীন দেশের ইতিহাসে এই চাল নিয়ে অদ্ভুত এক নিয়ম লোকমুখে শোনা যায়। আগে চীনে শুধু রাজ পরিবারের সদস্যরাই এই চাল খেতে পারতেন। সাধারণ মানুষের জন্য এই কালো চাল নিষিদ্ধ ছিল। অনেকের ধারণা, পুষ্টিগুণ বিবেচনা করে এই চালকে রাজকীয় খাবার হিসেবে সংরক্ষণ করাই ছিল এই নিয়মের মূল উদ্দেশ্য।
দেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতেও কয়েক ধরনের কালো ও বাদামি ধানের চাষ হয়ে থাকে। কৃষকরা এতকাল এর গুরুত্ব অনুধাবন করে চাষ করছেন। এ ধরনের উচ্চ আঁশযুক্ত চালের ভাত সাধারণত বাংলার কৃষকরা খেতেন। এই ভাত খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। ফলে শুধু সকালে আর বিকেলে খেলেই তাদের চলে যেত।
ব্ল্যাক রাইসের পুষ্টিগুণ সাধারণ চালের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। এই চাল কালো হওয়ার মূল কারণ অ্যান্থোসায়ানিন নামক এক প্রকার উপাদান। এটি মূলত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে- যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অন্যান্য চালের তুলনায় এর আমিষের পরিমাণ বেশি। এতে চিনির পরিমাণ কম এবং আঁশের পরিমাণ বেশি। এ ছাড়া ভিটামিন-ই যুক্ত থাকায় এ চালের বিশেষ রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে।
এতে ফাইবার অনেক বেশি থাকে। তাই এ চালের ভাত শরীরে খুব ধীরগতিতে গ্লুকোজ তৈরি করে। ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ কারণে এ চালকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব কার্যকর বলা হয়। এ ধান বছরে শীত ও গ্রীষ্মকালে একই জমিতে বছরে দুইবার চাষ করা যায়।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা নাহিদ মিয়া জানান, ইউটিউবে প্রথম এ ধানের চাষাবাদের বিষয়ে দেখে বিস্তারিত জানতে পারেন। পরে অনলাইনে থেকে ‘ব্ল্যাক রাইস’ ধানের বীজ সংগ্রহ করেন। ৫০০ টাকা কেজি দরে ভিয়েতনামি ব্ল্যাক রাইসের পাঁচ কেজি ধান বীজ সংগ্রহ করেন। ৫০ শতাংশ জমিতে এ ধানের চাষ করতে তার মোট খরচ হয়েছে ৬-৭ হাজার টাকা। এ ধান তিন মাসের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। তিনি আশা করছেন ৫০ শতাংশ জমিতে ৪০-৪৫ মণ ধান পাবেন।
তিনি জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি শখের বসে তিনি এই ধান প্রথমবারের মতো চাষ করেছেন। প্রথমবার চাষ করে সাফলতা পেয়েছেন। জমিতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আশা করছেন এই ধান চাষ করে লাভবান হবেন। সামনের বছর আরো বেশি চাষ করবেন।
এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা কৃষি অফিসার শাহজাহান আলী জানান, এক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা এই প্রথম বাসাইলে ব্ল্যাক রাইস ধান চাষ করেছেন বলে জানতে পেরেছেন। ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধানের এই জাত দেশে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত না।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাসার জানান, খুব ভালো উদ্যোগ। তরুণরা এগিয়ে এলে দেশের কৃষি খাত অনেক এগিয়ে যাবে।
ভোরের আকাশ/নি