logo
আপডেট : ২৪ মে, ২০২৩ ১১:১৬
ফসল নষ্ট করছে বুনো শুয়োরের দল, আতঙ্কে কৃষক
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

ফসল নষ্ট করছে বুনো শুয়োরের দল, আতঙ্কে কৃষক

সন্ধ্যা হলেই সীমান্ত পেরিয়ে দলবেধে আসে ভারতীয় বুনো শুয়োরের দল। রাতভর নষ্ট করছে সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনকষা ইউনিয়নের তারাপুর ও ঠুঁঠাপাড়া গ্রামের মাঠে থাকা ধান, গম, ভুট্টা ও পাটসহ বিভিন্ন ফসল। সূর্যের আলো ফোটার আগেই সীমান্ত পেরিয়ে আবারো নিরাপদ স্থানে ফিরে যায় বুনো শুয়োরের দল। ফসল বাঁচাতে রাত জেগে পাহারা দিলেও মিলছে না ফলাফল।

 

রাতে পাহারা দিতে গিয়ে বুনো শুয়োরের হামলার শিকার হচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে বুনো শুয়োরের আতঙ্কে দিন পার করছেন মনকষা ইউনিয়নের ঠুঁঠাপাড়া গ্রামের মাঠে থাকা প্রায় তিন হাজার বিঘা জমি চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত কৃষক ও শ্রমিকরা। ওপায় না পেয়ে অনেকেই কাঁচা ধান কাটছেন। এমনকি কাটা ধান না শুকানোর আগেই তড়িঘড়ি করে ঘরে তুলছেন তারা।

 

কৃষকদের দাবি, বুনো শুয়োরের অত্যাচারে ফলন কমেছে ব্যাপক হারে। এতে লোকসানের ঝুঁকি বেড়েছে অনেক।

 

কৃষক, শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছর ধরে বুনো শুয়োরের অবাধ চলাচল থাকলেও চলতি বছরে এ পশুর আক্রমণ বেড়েছে ব্যাপক হারে। দৈনিক ২০-৩০টি শুয়োরের একেকটি দল সারা রাতে ফসলের মাঠে চরে বেড়ায়। এতে ধান, গম, ভুট্টা ঝরে পড়ছে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় রাতে পাহারা দিতে গিয়ে বিজিবি-বিএসএফের মাধ্যমে হয়রানির অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।

 

ঠুঁঠাপাড়া গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান বলেন, দিনে কখনো বুনো শুয়োর দেখতে পাওয়া যায় না। সন্ধ্যা হলেই ২০-৩০টি বুনো শুয়োর দলবেধে সীমান্ত পেরিয়ে ফসলের মাঠে আসে। সারা রাত থেকে আবারো ফজরের সময় সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যায়। বাধ্য হয়েই আমার দুই বিঘা জমিতে থাকা কাঁচা ধান কেটেছি।

 

কারণ একবার যে জমির ওপর দিয়ে শুয়োরের দল যায়, তা নষ্ট হয়ে যায়। সমস্ত ফলন ঝরে পড়ে। ধান কাটার পর শুকানোর জন্যও জমিতে রাখা যায় না। কেননা কাটা ধানের ওপর দিয়ে গেলে ফসল আরো বেশি নষ্ট হয়।

 

কৃষক আব্দুর রাকিব বলেন, এখনো মাঠজুড়ে ধানের আবাদ রয়েছে। ধানগুলো জমিতেই মাড়াই করে দিচ্ছে বুনো শুয়োরের দল। একেকটা বুনো শুয়োরের ওজন ৮০-১০০ কেজি। যে ফসলের ওপর দিয়ে ছোটাছুটি করে, সেখানকার সব শেষ করে দেয়। ধান ছাড়াও গম ও ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এই দুটি ফসল তাদের পছন্দের খাবার। কিন্তু ধান কখনো খায় না।

 

তবে বিশালদেহী শুয়োর ছোটাছুটি করার ফলে ধানের ফলন ঝরে যায়। এক সপ্তাহ ধরে সারা রাত জেগে ধান পাহারা দিয়েছেন রবিউল ইসলাম। এর আগে তিন বিঘা ভুট্টার জমিতেও কিছুদিন পাহারা দিয়েছেন।

 

তিনি বলেন, ২০-৩০টি বুনো শুয়োরের দল একসঙ্গে বেড়ায়। বুনো শুয়োরের উপস্থিতি টের পেয়ে রাতের অন্ধকারে লাইট দিয়ে দেখার পর নিজেরই ভয় লাগে। যেকোনো সময় আক্রমণ করতে পারে। এক রাতে আমার আট কাঠা ভুট্টার জমি নষ্ট করেছে।

 

শ্রমিক তাইজুল ইসলাম বলেন, ফসল নষ্ট হতে থাকায় আমরা গ্রামের প্রায় হাজারখানেক লোক এক রাতে মাঠে এসেছিলাম। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজনকেও ডেকেছিলাম, যারা বুনো শুয়োরের মাংস খায়। সেদিন রাতে কারেন্ট দিয়ে দুটি বুনো শুয়োর মারা হয়। এরপরও তাদের আক্রমণের পরিমাণ একটুও কমেনি।

 

স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বলেন, রাতের অন্ধকারে পাহারা দেয়াটাও নিরাপদ নয়। কারণ কয়েক গজ দূরত্বে জিরো লাইন। ওপারে বিএসএফ, এপারে বিজিবি। রাতের অন্ধকারে পাহারা দিতে এলেও নানা রকম হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়তে হয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দ্বারা। ঠুঁঠাপাড়া গ্রামের দুইজন কৃষক বুনো শুয়োরের হামলার শিকার হয়েছেন। এমনকি এই বুনো শুয়োরের হামলার শিকার হয়েছেন বিএসএফ সদস্যরাও।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুনো শুয়োরের হামলার শিকার হওয়া এক কৃষক বলেন, বুনো শুয়োর তাড়াতে গেলে আমার উপরই আক্রমণ করে। পিঠে, হাতে, পায়ে কামড় দেয়। আমি ছোটার জন্য তীব্র চেষ্টা করলে গড়াগড়ি খেতে খেতে জীবন বাঁচাতে পাশে থাকা একটি পুকুরে ঝাঁপ দেয়। এরপর আশপাশে থাকা কৃষকরা এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

 

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ফসলি জমিতে ভারতীয় বুনো শুয়োরের আক্রমণের বিষয়টি স্থানীয় কৃষকরা আমাদের জানিয়েছেন। আমরা বন বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করেছি। স্থানীয়ভাবে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। আশা করি, বন বিভাগ এ বিষয়ে শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

 

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হায়াত জানান, রাজশাহীতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয় রয়েছে। বিষয়টি তাদেরকে অবহিত করা হয়েছিল। তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি