logo
আপডেট : ২৪ মে, ২০২৩ ১৩:২৭
সম্পাদকীয়
মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের কথা মনে রাখতে হবে

মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের কথা মনে রাখতে হবে

সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন ও টেকসই মৎস্য আহরণে ৬৫ দিন দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গত শনিবার থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। জীবিকার একমাত্র মাধ্যম মাছ ধরা বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অন্তত এক লাখের বেশি জেলে।

 

জেলেরা বলছেন, বন্ধের এই দিনগুলোতে জেলেদের জনপ্রতি সরকারি যে সহায়তা দেয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। নিত্যপণ্যের দুর্মূল্যের বাজারে সরকারি সহায়তা বাড়ানোর দাবি জেলেদের। জানা গেছে, দেশের মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও মাছের বংশবিস্তারে ২০১৫ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রতি বছর ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ।

 

শুরুতে শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও ২০১৯ সালে সব ধরনের নৌযানকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারি হিসাবে এতে সমুদ্রে মৎস্য প্রজনন বেড়েছে। তবে বছরে এই ৬৫ দিনের বাইরে মা ইলিশ ধরায় ২২ দিন, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিলের দুই মাসের অভয়ারণ্যের নিষেধাজ্ঞাসহ মোট ১৪৭ দিন নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হয় সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার জেলেদের।

 

এমন অবস্থায় ভালো সাফল্যও আসছে। অপেক্ষার পর হাসি ফোটে উপক‚লীয় জেলেদের মুখে। সাগরে ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ। ভাগ্য বদলে যায় জেলেদের। কিন্তু ভাগ্য বদলের জন্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণও দরকার। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, একক প্রাকৃতিক পণ্য হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান ইলিশের। ইলিশ ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদও পেয়েছে।

 

গত মার্চ ও এপ্রিল ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। প্রতি বছরই এই সময়ে ইলিশ শিকার বন্ধ থাকে। উদ্দেশ্য জাটকা সংরক্ষণ। ইলিশের পোনা জাটকার জন্য পরিবেশ তৈরি করতেই মার্চ ও এপ্রিল এই দুই মাস বেছে নেয়া হয়েছে। এর ইতিবাচক ফলও পাওয়া গেছে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২১ হাজার টন করে ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

তারই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ সংরক্ষণে ৬৫ দিনের এ উদ্যোগ। মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের পুনর্বাসন বিষয়টি সামনে আসে। কিন্তু আমরা প্রায় প্রতি বছরই দেখছি, এই পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়নে গড়িমসি চলে। নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর সপ্তাহ বা মাস পেরিয়ে গেলেও অনেক অঞ্চলে জেলেদের কাছে ত্রাণের চাল পৌঁছে না।

 

ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালীর জেলেদের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা মনে করি, মাছ শিকার পেশার ওপর নির্ভরশীল দেশের উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ জেলের জন্য বিকল্প আয়ের বা আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা খুবই দরকার।

 

এ ছাড়া দরকার এ ব্যাপারে গণসচেতনতা তৈরি করা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন মানুষের নজরদারি নিশ্চিত করা। এখন প্রস্তুতিমূলক এ কাজগুলোতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দেয়া উচিত। সামুদ্রিক মাছ রক্ষার পদক্ষেপ পুরোপুরি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে মাছের সুদিন আমাদের হাতছাড়া হবে না।

 

এর জন্য মাছ আহরণকারী, ব্যবসায়ী, ভোক্তা সবার সচেতনতা ও সংযমী ভূমিকা প্রত্যাশিত।

 

ভোরের আকাশ/নি