অনলাইনে এক জাতের আম অর্ডার দিয়ে অন্য জাতের আম সরবরাহ পাওয়া, নষ্ট বা পচা আম পাঠানো ও ওজনে কম দেয়াসহ ক্রেতাদের বিভিন্ন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব অনিয়ম দূর করতেই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।
সরকারি ওয়েবসাইট থেকেই অনলাইনে দেয়া যাবে আমের অর্ডার। এ বিষয়ে আমচাষি ও অনলাইনে আম বিক্রির সাথে জড়িত উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল ম্যাঙ্গো মার্কেটিং বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা করেছে উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রাথমিকভাবে আমচাষি ও উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে উপজেলা প্রশাসন।
এ উদ্যোগের ফলে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সরকারি ওয়েবসাইটে যুক্ত থাকবে ৩০ জন আম উদ্যোক্তার নাম-ঠিকানা, পরিচয়সহ যাবতীয় তথ্য। এখান থেকে আম কিনতে গিয়ে ক্রেতারা কোনো ধরনের অনিয়ম বা হয়রানির শিকার হলেই মিলবে প্রতিকার। উপজেলা প্রশাসন তদন্তসাপেক্ষে নিবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
এতে একদিকে যেমন কমবে ক্রেতা হয়রানি, তেমনি অন্যদিকে ন্যায্যমূল্য পাবে আমচাষি। থাকবে না মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হায়াত বলেন, অনলাইনে আম কিনতে গিয়ে ক্রেতারা নানাভাবে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হন। এই উদ্যোগের ফলে তা কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। এই মাধ্যমে ক্রেতারা সরাসরি আমচাষির সাথে কথা বলে আম নিতে পারবে। এতে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে।
তিনি আরো বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সরকারি ওয়েবসাইটে ৩০ জন আমচাষি, উদ্যোক্তা ও বিক্রেতার নাম-ঠিকানা, পরিচয়, ফেসবুক পেজের লিংক যুক্ত করা হবে।
এতে ভোক্তা বা ক্রেতারা ইচ্ছামতো দেখে যেকোনো জায়গা থেকে আম কিনতে পারবেন। অনলাইনে আম বিক্রির প্রসারে ও জেলার আমকে ব্র্যান্ডিং করতে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ধীরে ধীরে এর ব্যাপক সম্প্রসারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম জানান, সরকারি ওয়েবসাইটে আমচাষি বা বিক্রেতাদের ঠিকানা যুক্ত করার এমন অভিনব উদ্যোগ এটিই সম্ভবত প্রথম। এ উদ্যোগের ফলে ক্রেতারা যেমন নিশ্চিত হয়ে অনলাইনে আমের অর্ডার করতে পারবেন। তেমনি বিক্রেতারাও ভালো সেবা প্রদানে বাধ্য থাকবে।
কারণ তাদের সব কার্যক্রম উপজেলা প্রশাসন সার্বিকভাবে তদারকি করবে এবং অনিয়ম পেলেই ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু আগে এমনটা ছিল না। অনলাইনে আম অর্ডার করে প্রতারণার শিকার হলে প্রতিকার পাওয়া যেত না।
আমচাষি, উদ্যোক্তা ও বিদেশে রপ্তানিকারক আহসান হাবীব বলেন, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগটি সত্যিই অসাধারণ। সরকারি ওয়েবসাইটে আমচাষি ও বিক্রেতাদের নাম-ঠিকানা যুক্ত করার ফলে আরো বেশি আমের বাজার সম্প্রসারণ ঘটবে। আরো বেশি মানুষের কাছে বিশ্বস্ততার সাথে ছড়িয়ে যাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আমের বাজার।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছর ৩৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭১৬৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টন।
২০২১ সালে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ টন এবং তার আগের বছর ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার টন আম উৎপাদন হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি