এম সাইফুল ইসলাম: বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার স্বার্থে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পদক্ষেপ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে বিএনপি। মার্কিন এই নীতিকে স্বাগত জানিয়েছে দলটি।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ে মার্কিন এই পলিসিকে স্বাগত জানালেও এটি দেশের জন্য লজ্জার। তবে ক্ষতাসীন ও ভোট কারচুপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য চিন্তার।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলটির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মার্কিন এই সিদ্ধান্তকে বিএনপি স্বাগত জানিয়েছে। এটি দেশের মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে মার্কিন এই পদক্ষেপ সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে। এবার তারা ভোট চুরির বিষয়টি আগেই সামনে এনেছে। তারা জানে, এখানে ভোট চুরি আবারো শুরু হয়ে গেছে। মানুষকে প্রতিদিন অত্যাচার করা হচ্ছে। এটাকে মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত এসেছে।
সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তারই প্রতিফলন মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা। ভোট চুরি এখন থেকেই চলছে। তাই আগেই পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এ বিষয়ে ৩ মে জানানো হলেও কেন এত বড় ঘটনা দেশের জনগণকে জানানো হলো না, তা সরকারকেই জবাব দিতে হবে বলেও জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি বিএনপির জন্য সফলতা কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, এটা সফলতার বিষয় না। সফলতা হবে বাংলাদেশের মানুষ যেদিন ভোট প্রয়োগ করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে।
সেই উদ্দেশ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপের মধ্যে এটা হয়তো ভালো পদক্ষেপ। এটার মাধ্যমে যারা ভোট চুরির সঙ্গে এখন থেকে জড়িত হয়ে গেছে সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হোক, সেটা গণমাধ্যম হোক, সেটা সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে হোক, সবার প্রতি এটা একটা পরিষ্কার বার্তা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশকে অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশে মানবাধিকার, বাংলাদেশে আইনের শাসন, জনগণের নিরাপত্তার মুক্তির সংগ্রামের পথে এটা একটা পদক্ষেপ।
আমীর খসরু বলেন, অলরেডি ভোট চুরি চলছে। এই যে বিএনপির ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা এটা কি ভোট চুরি না, মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এটা কি ভোট চুরি না, এই যে বিএনপির নেতাকর্মীদের গুলি করছে, গ্রেপ্তার করছে এটা কি ভোট চুরি না। ভোট চুরি চলছে, গণহত্যা চলছে।
সরকারি দল যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন নয়, বিএনপি কি উদ্বিগ্ন এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, সরকার উদ্বিগ্ন না হলে ভালো কথা। তাহলে তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার, আইনের শাসন, জীবনের নিরাপত্তা এগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে।
তা না দিলে তাদেরকে উদ্বিগ্ন হতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে না দিয়ে আবার যদি মানুষের ভোট কেড়ে নেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে, তাহলে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকবে। তারা যাই বলুক না কেন, এটি এখন তাদের জন্য চিন্তার।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এই গাজীপুরে সামান্য একজন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে তারা সহ্য করতে পারছে না। তাকে নির্বাচন করতে দেয়নি।
লোকজন ভোট কাকে দেবে?
ভোটের ওপর কোনো আস্থা আছে?
সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে সেখানে একটা নিরপেক্ষ সরকার লাগবে। তা না হলে ভোট চুরি অব্যাহত থাকবে।
এ সময়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু ও মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন। এর আগে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসায় একটি বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দৈনিক ভোরের আকাশকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, পার্টিকুলার একটি দেশের জন্য মার্কিন এই ভিসা নীতি লজ্জার। এটি একপ্রকার নিষেধাজ্ঞা। এটি প্রমাণ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগ কাউকে এখন কোনোকিছু মনে করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এটি কীভাবে দেখবে তা দেখতে হবে। এই নীতির ফলে বিএনপির আন্দোলনে গতি বৃদ্ধি পাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে দেখার পরামর্শ দেন।
এদিকে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেছেন, নতুন মার্কিন ভিসানীতিতে যেসব বিষয় আমাদের সামনে এসেছে, তা আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর ও লজ্জার।
বর্তমান অবৈধ সরকারের কারণে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। তবে এই ভিসানীতি দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে সহায়তা হবে বলেও জানান তিনি। আন্দোলনের নামে যারা বাসে আগুন দেয়, তাদের খবর আছে বলে বিএনপিকে উদ্দেশ করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এবার পাল্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির বলেন, আমাদের না, আওয়ামী লীগের খবর আছে, কারণ জনগণ ফুঁসে উঠেছে।
ভোরের আকাশ/নি