logo
আপডেট : ২৭ মে, ২০২৩ ১৫:১০
উপকূলের জেলেরা ঘাটে বসে থাকলেও সাগরে মাছ শিকারে বসে নেই অন্যরা
রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

উপকূলের জেলেরা ঘাটে বসে থাকলেও সাগরে মাছ শিকারে বসে নেই অন্যরা

ঘাটে নৌকা বেঁধে অলস সময় কাটাচ্ছে সাগর উপকূলের জেলেরা

একই সাগরে দুই নিয়ম চলছে। বাংলাদেশিরা ঘাটে নোঙর করে থাকলেও বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করবে ভারতীয়রা। তাই সামুদ্রিক মাছের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞা কাজে আসছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

এদিকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় নাকাল জেলেরা। কর্মহীন জেলে পরিবারগুলোতে চলছে হাহাকার। তাই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা কমিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে জেলেরা।

 

জানা গেছে, সমুদ্রে মাছ শিকারের ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ২০ মে থেকে শুরু হওয়া এ নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত। এই সময়কালে সমুদ্রে মাছ শিকারি কোনো ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারবে না। তাই ঘাটে বসে আছেন জেলেরা। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে পাশর্^বর্তী দেশের জেলেরা মাছ শিকার করছে।

 

জেলেদের অভিযোগ, প্রতিবারই বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞার সুযোগে সমুদ্র দাপিয়ে বেড়ায় ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কর্মহীন বাংলাদেশি জেলেরা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করলেও সমুদ্র থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে অন্যরা। তাই শুরু থেকেই এ নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে আসছেন জেলে ও মৎস্যজীবিরা।

 

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন ফিশারিজ একোয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী জানান, একই সাগরে দুই নিয়ম চলতে পারে না। পার্শ্ববর্তী অন্য দেশের জেলেরা মাছ ধরায় বঙ্গোপসাগর জালমুক্ত থাকছে না। তাই এই নিষেধাজ্ঞার উপকারিতা দেখছেন না তারা।

 

সামুদ্রিক মাছের নিরাপদ প্রজননের জন্য সমুদ্র জালমুক্ত রাখতে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে সমন্বয় করে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণের পরামর্শ তাদের।

 

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশের গবেষক সাগরিকা স্মৃতি জানান, বঙ্গোপসাগর একটা। কিন্তু নিয়ম দুইটা। এটা কীভাবে সম্ভব?

 

বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও অন্য দেশের জেলেরা মাছ ধরছে। তাতে সাগর জালমুক্ত থাকছে না। সাগরে যদি মাছ শিকার চলেই তাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লাভ কি?

 

যদি উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে সমন্বয় করে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়াও সামুদ্রিক মাছের প্রজননের সঠিক সময় চিহ্নিত করতে নতুন করে গবেষণা করা দরকার বলেও জানান এই মৎস বিশেষজ্ঞ।

 

রাঙ্গাবালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বাবুল জানান, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে একইসঙ্গে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণের জন্য উভয় দেশের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। আগামী দিনে সমন্বয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৪৭ দিন ঘাটে নোঙর করে থাকতে হয় উপকূলের জেলেদের। নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণে আট মাস, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস অভায়শ্রমে এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাসহ বছরে ১৪৭ দিন সাগর ও নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকে।

 

এ সময় বেকার কাটাতে হয় সাগর উপকূলের জেলেদের। যার কারণে ঋণের বোঝা পিছু ছাড়ছে না তাদের।

 

ভোরের আকাশ/নি