এক পাশে মেঘনায় জেগে ওঠা নতুন চর, নদীর স্বচ্ছ জলরাশি, বিশাল ঢেউ আর জেলেদের মাছ শিকার, অন্যপাশে সবুজ গ্রামের চিত্র (সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ) ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মেঘনার তীর রক্ষার বাঁধকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। হিমেল হাওয়া, চরাঞ্চলের গরু-মহিষ ও ভেড়ার বিচরণ দৃশ্য এবং তাদের সঙ্গে রাখালের বন্ধুত্বই যেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্র।
এছাড়া যেমনি করে তুলছে প্রকৃতিপ্রেমী কাছে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। তেমনি এ অঞ্চলে রয়েছে ইলিশের দীর্ঘতম অভয়াশ্রম। মেঘনার বুক চিড়ে পণ্যবাহী সারি সারি লাইটারেজ জাহাজ, মাছ শিকারি ছোট ও পালতোলা নৌকার দোলা আর নারকেল-সুপারির সাজানো বাগান। মেঘনার বেড়িবাঁধ ঘিরে এই উপকূলের অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে যাবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্ট মহলের।
অপার সম্ভাবনাময়ী নদী আর প্রকৃতি লক্ষীপুরের উপকূলকে করে তুলেছে অপরূপা। এর ফলে দিন দিন এ জেলার পুরো উপকূল হয়ে উঠছে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের মনের খোরাক। এতে এ উপকূল ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।
প্রকৃতি প্রেমীদের মতে, মেঘনার তীর রক্ষার বাঁধকে ঘিরে পর্যটন সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে এখন এ জেলায়।
হাজারো প্রকৃতিপ্রেমীকে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি এখানে সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বিকল্প কর্মসংস্থানের। তবে এখনো গড়ে উঠেনি হোটেল-মোটেল, পয়ঃনিষ্কাশন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সচেতন মহল মনে করছেন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণে বদলে যেতে পারে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা।
মেঘনার উপকূল ঘুরে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ১৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রামগতি বাজার সংলগ্ন, আলেকজান্ডার ও কমলনগরে মাতাব্বরহাট এলাকায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বর্তমান সরকার। বর্তমানে এসব বাঁধ ঘিরে উপকূলের অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে রূপ নিয়েছে। জোয়ার-ভাটার খেলা চলে নিত্য। মেঘনার উঁচু ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জেলেরা শিকার করেন রুপালি ইলিশসহ সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছ।
রামগতি পৌর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা নদী। উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র একশ গজ দূরত্বে ভাঙনরোধে বাঁধ দেয়া হয়েছে। সারাদিন ওই বাঁধে ঢল নামে ভ্রমণপিপাসু মানুষের। কমলনগর উপজেলার মতিরহাট ও মাতাব্বরহাট জেলার আরেক দর্শনীয় স্থান। এটি দেশের সর্ববৃহৎ মাছ ঘাটগুলোর অন্যতম। এখানে রয়েছে নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সমারোহ।
প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার ইলিশ কেনা-বেচা হয় এ ঘাটে। এ ছাড়া মেঘনা তীরের রামগতির চরগাজী ইউনিয়নের তেগাছিয়া বাজার সুইস গেট থেকে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। এখানে রয়েছে কয়েক হাজার ঝাউগাছের গভীর বন। ফলে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এটি অন্যতম বিনোদন স্পট। প্রায় সারাবছরই এখানে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বনভোজন ছাড়াও সাধারণ মানুষের আনাগোনো থাকে।
এ ছাড়া মেঘনার জেগে উঠা বেশকিছু চরে রয়েছে শত শত মহিষের পাল। পাওয়া যায় মহিষের দুধের ঐতিহ্যবাহী দই। এসব স্থান রক্ষায় বøক দেয়ায় পলি জমে বেলাভূমির সৃষ্টি হয়েছে। পাশেই জেগেছে নতুন চর। ফলে ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ওই চরে ভিড় জমায় ভ্রমণপ্রেমীরা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে নতুন করে যোগ হচ্ছে রামগতির আলেকজান্ডার ও কমলনগর উপকূলে বর্তমান সরকারের ৩১শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদী তীর রক্ষা বাঁধ।
রামগতি ও কমলনগর উপজেলার এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আশাবাদী স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে আশপাশে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট দোকান ঘর ও শিশুদের খেলনা সামগ্রী বিক্রির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।
বেচা বিক্রিও বেড়েছে দাবি করে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ হাজার ও বিশেষ দিনে লাখ টাকারও বেশি বেচা-বিক্রি হচ্ছে বলে জানান দোকানিরা। কেউ কেউ বলছেন ঘুরতে আসা তরুণ-তরুণীদের ছবি তুলেও পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়তি আয় করছেন তরুণরা।
আবার কেউ বলছেন, উপকূল ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও পর্যটকদের জন্য এখনো এখানে গড়ে উঠেনি হোটেল-মোটেল, পয়োঃনিষ্কাশন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে পর্যটনের সব সুবিধা নিশ্চিত করা হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে যাবে বলে দাবি জানান সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে লক্ষীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন অকন্দ জানান, মেঘনার বেড়িবাঁধকে ঘিরে পর্যটন সম্ভাবনা রয়েছে। বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, পর্যটকদের সব সুবিধা নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন এ কর্মকর্তা। সরকারিভাবে লক্ষীপুরের উপকূলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থানের। সেইসঙ্গে বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন হবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নেও এগিয়ে যাবে এ অঞ্চল, এমনটাই মনে করে সচেতন মহল।
ভোরের আকাশ/নি