এক দশক আগে লক্ষীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান জসিমকে গুলি করে হত্যার দায়ে আটজনের ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আমিনা ফারহিন সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন বলে সরকারি কৌঁসুলি জসিম উদ্দিন জানান।
তিনি বলেন, এ মামলায় মোট ১২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। তাদের মধ্যে চারজন বিচার চলাকালে মারা যান। বাকি আট আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। আসামিদের মধ্যে সাতজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। হিজবুর রহমান স্বপন (৪৫) নামে এক আসামি পলাতক রয়েছেন।
দন্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন: সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের বাগবাড়ির মৃত ওবায়েদ উল্যার ছেলে মোবারক উল্যা (৬৬), আলী হোসেন বাচ্চু (৫০), মোবারকের ছেলে কবির হোসেন রিপন (৩০), একই বাড়ির মৃত রুহুল আমিনের ছেলে মো. খোকন (৫০), মো. মোস্তফা (৭০), আবুল হোসেন (৫০) ও করইতোলা গ্রামের বাগবাড়ির আবদুল্যা মাস্টারের ছেলে জাফর আহম্মদ (৫৫)। নিহত মেহেদী হাসান জসিম লক্ষীপুর চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মফিজ উল্যার ছেলে। ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ঘরে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, সদর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের বাগবাড়ির মফিজ উল্যার সঙ্গে একই বাড়ির মোবারক উল্যা ও আলী হোসেন বাচ্চুদের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জেরে মোবারকরা ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন।
এ ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। এরপর থেকে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য মফিজ উল্যাকে হুমকি দেয় প্রতিপক্ষ। মামলা প্রত্যাহার না করলে হত্যারও হুমকি দেয়া হয়। এজন্য মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িছাড়া হয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকতেন।
এর মধ্যে প্রতিপক্ষ মোবারকদের করা মামলাটি দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সেই সময়ের এসআই মো. নুরনবী তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে মফিজের ছেলে মেহেদী হাসান জসিমের নাম বাদ দেয়ায় মোবারকরা ক্ষিপ্ত হন। এর মধ্যে জসিম সৌদি আরবে চলে যান। সেখান থেকে ছুটিতে বাড়িতে আসেন তিনি।
মোবারকরা তাদের হুমকি দিলে সে বাড়িতে না থেকে সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের রাধাপুর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে যান। ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে জসিমের সঙ্গে তার বড় ভাই আবদুল হাই ও গোলাম মাওলার ভাই মাসুদ একই কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই রাতে প্রতিপক্ষ জানালার গ্রিল ভেঙে ঘরে ঢুকে।
এ সময় তারা জসিমের বুকে গুলি চালায়। তাকে বাঁচানোর জন্য অন্যরা এগিয়ে এলে আসামিরা গুলি করার হুমকি দিয়ে তাদের পিটিয়ে আহত করে। পরে গুলিবিদ্ধ জসিমকে উদ্ধার করে লক্ষীপুর সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরের দিন জসিমের বাবা মফিজ উল্যা বাদী হয়ে সদর থানায় মোবারকসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আদালতের পিপি জানান, ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লক্ষীপুর সদর থানার সে সময়ের এসআই আবু নাছের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পরে আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণে মোবারক উল্যা, আলী হোসেন বাচ্চু, অজি উল্যা, কবির হোসেন রিপন, হিজবুর রহমান স্বপন, আবুল কাশেম, সফিক উল্যাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
পরে সিআইডি কর্তৃক মামলাটি আবারো তদন্ত হয়। লক্ষীপুর জেলা সিআইডি পুলিশের সেই সময়ের এসআই আফসার আহমেদ ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর পুনরায় আদালতে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেন। এতে ওই ১২ জনকেই অভিযুক্ত করা হয়।
বিচার চলাকালে আসামি আবুল কাশেম, সফিক উল্যা, আমির হোসেন ও অজি উল্যা মারা যান। মামলার বাদী মফিজ উল্যা বলেন, ‘আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে মৃত্যদন্ডের রায় হয়েছে। মামলার রায়ে আমি সন্তুষ্ট।’
ভোরের আকাশ/নি