logo
আপডেট : ৩১ মে, ২০২৩ ১০:৩০
সম্পাদকীয়
মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতন বন্ধ হোক

মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতন বন্ধ হোক

দেশের অলিতে-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো দেখা যায় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র। এগুলোর কাজ নেশাজাতীয় দ্রব্যের আসক্তি থেকে মানুষদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা। এখন পর্যন্ত কতজন সেখান থেকে সুস্থ হয়েছে সেই পরিসংখ্যান না পেলেও প্রতিবছরই বিভিন্নভাবে আলোচনায় আসে কেন্দ্রগুলো। যার মূল বিষয়বস্তু থাকে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন।

 

এসব নিরাময় কেন্দ্রে রয়েছে আলাদা টর্চার সেল। সুস্থ করার নামে সেখানে যেভাবে নির্যাতন করা হয়, তাতে যেকোনো মানুষ শিউরে উঠবে। এতে অনেকেরই পিঠে, কোমর ও হাঁটুতে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। বস্ত্রহীন করে আঘাত করা হয়। অত্যাচারের মাধ্যমে মৃত্যুকে চালিয়ে দেয় অপমৃত্যু বলে। ফলে, যারা চিকিৎসা নিতে আসে অনেকেই পালিয়ে যায়।

 

ধারণক্ষমতার অধিক ও জনাকীর্ণ পরিবেশে রাখা হয় মাদকাসক্তদের।

 

সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত বগুড়ার রান রিহ্যাব মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে এক রাতেই পালিয়ে গেছে ১১ জন। তারা বগুড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে (ডিএনসি) লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পায়নি। উল্টো ডিএনসির কর্মকর্তারা পুনর্বাসন কেন্দ্রের পক্ষে কথা বলেছেন। কোনো তদন্ত ছাড়া এভাবে সাফাই অত্যন্ত দুঃখজনক।

 

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে গাজীপুর সদরের ভাওয়াল এলাকায় অবস্থিত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে গোপনে মাদক ব্যবসা, রোগীদের শারীরিক নির্যাতন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ভর্তি রেখে অর্থ আদায় এবং অনৈতিক কার্যক্রমের ঘটনা গণমাধ্যমে আসে। পুনর্বাসন কেন্দ্র হলেও প্রতিষ্ঠানটির মালিক থেকে কর্মচারী সবাই ছিল মাদকাসক্ত। সে সময়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

 

বেশিরভাগ নিরাময় কেন্দ্রে মাদকাসক্তি শনাক্তে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা নেই, যা থাকা বাধ্যতামূলক। অভিভাবকদের কথার ভিত্তিতেই রোগী ভর্তি করা হয়। অনেক কেন্দ্রেই রয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীনরা।

 

চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন হলেও একই সঙ্গে রাখা হয় মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগীদের। মাদকাসক্তি নিরাময়ের জন্য আন্তর্জাতিক চিকিৎসা প্রটোকল প্রতিপালনের বিধান থাকলেও সেগুলোর কোনো কিছু মানা হয় না। এত অনিয়ম জেনেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

 

প্রতিটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসক-নার্স রাখার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে অধিকাংশ কেন্দ্রেই নেই। মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নানাভাবে হয়রানি করা হয় মাদকাসক্ত ব্যক্তির অভিভাবকদের। চিকিৎসার নামে নির্যাতন এটা কোনো সভ্য সমাজের নিয়ম হতে পারে না।

 

সেখানে থাকবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাউন্সেলর, যারা একক কাউন্সেলিং, গ্রুপ কাউন্সেলিং, গ্রুপ থেরাপি প্রদান করবে। অথচ মাদকাসক্ত নিরাময়ের নামে চলছে অপচিকিৎসা। যারা মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা করছে, তারা সঠিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিনা সে বিষয়ে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

 

বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি পাঁচটি এবং বেসরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে ৩৫৬টি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। যা প্রয়োজনের তুলানায় নিতান্ত কম। জানা যায় দেশে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ মাদকাসক্ত। থানা-পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ নানা অনিয়ম সত্তেও মাদক নিরাময় কেন্দ্র বন্ধ না করে সংশোধনের সুযোগ দিচ্ছে।

 

এ বিষয়ে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে মাদকাসক্তি যেন না বাড়ে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি