আঞ্চলিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণের প্রচারের জন্য মুজিব’স বাংলাদেশ ট্যুরিজম প্রোমোশন অ্যান্ড বিটুবি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিল বাংলাদশে ট্যুরিজম বোর্ড।
এই আয়োজনে অংশ নিতে নেপাল থেকে ১২ জন, ভুটান থেকে ১৪ জন, শ্রীলঙ্কা থেকে ১৯ জন এবং ভারত থেকে ৫২ জন ট্যুর অপারেটর আসেন। তারা কক্সবাজারের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন।
পূর্বদিকে পাহাড় আর পশ্চিমে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। কক্সবাজারে নরম বালু মাড়িয়ে এগিয়ে গেলে সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন, সঙ্গে হিমেল হাওয়া। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখে উচ্ছ¡সিত ভুটানের ট্যুরিজম বিভাগের কর্মকর্তা কেজাং চোদেন। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সমুদ্রসৈকত দেখে তার মতো অভিভ‚ত নেপালের ট্যুর অপারেটর তিলক ছত্রিও।
চার দেশের পর্যটন খাতের প্রায় ৯৭ জন প্রাণবন্ত হয়ে উপভোগ করেছেন সূর্যাস্তের মুহূর্ত। তবে সূর্য ঢোবার পর কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য আর কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা নেই দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন তারা।
আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে ২৭ মে চারটি দেশ থেকে আসা ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে বাংলাদেশের ১২৫ জন স্টেক হোল্ডারের বিজনেজ টু বিজনেজ (বিটুবি) মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ মে ৪ দেশের ট্যুর অপারেটর ও পর্যটন খাত-সংশ্লিষ্টদের পর্যটন রাজধানীখ্যাত কক্সবাজারে ভ্রমণে নেয়া হয়।
বাংলাদশে ট্যুরিজম বোর্ডের এ আয়োজন আঞ্চলিক পর্যায়ে পর্যটন সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে মত দিয়েছেন চার দেশের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশে পর্যটনের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যাপক হারে প্রচারের পরামর্শ দেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পর্যটনের প্যাকেজ করতে আগ্রহী হয়েছেন তারা। তবে পর্যটকদের জন্য কার্যকলাপ আরো বেশি করার পরামর্শ দিয়েছেন চারটি দেশের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশের বৌদ্ধ পুরাকীর্তি, স্থাপত্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য দর্শনীয় স্থান। বুদ্ধিস্ট হেরিটেজগুলো বিদেশে প্রচার হলে শ্রীলঙ্কা, ভুটান, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার থেকে পর্যটক বাংলাদেশ আসবে বলে মত দিয়েছেন বিদেশি ট্যুর অপারেটররা।
শ্রীলঙ্কা ট্যুরজিম প্রমোশন ব্যুরোর পরিচালক (জনসংযোগ) মাধুভানি পেরেরা বলেন, বাংলাদেশের বুদ্ধিস্ট হেরিটেজ পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সমুদ্র কিংবা পাহাড় অনেক দেশেই আছে। তবে বুদ্ধিস্ট হেরিটেজ সব জায়গায় নেই। ফলে এটি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে পর্যটক আর্কষণ করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে বুদ্ধিস্ট জনগোষ্ঠী ধর্মীয় আগ্রহের কারণেই বাংলাদেশে বেড়াতে আসবেন।
পরে রামু থেকে তাদের কক্সবাজারের পাটুয়ারটেক বিচে নেয়া হয়। মেরিন ড্রাইভে চলার পথে পূর্ব পাশের পাহাড় আর পশ্চিমের সমুদ্রে মুগ্ধ হন তারা। বিচে নেমেই অনেককেই পানিতে পা ভিজিয়ে উপভোগ করেন।
ভুটানের ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের সহকারী ট্যুরিজম অফিসার কেজাং চোদেন বলেন, এবারই প্রথম আমি বাংলাদেশে এসেছি। কক্সবাজারের সৌন্দর্য দেখে আমার বেশ ভালো লেগেছে। এত দীর্ঘ বিচ, সত্যি অসাধারণ। বাংলাদেশের সমুদ্র ভুটানের নাগরিকদের জন্য আর্কষণীয় স্থান হতে পারে।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের আটটি প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও অরুণাচল। এসব রাজ্য থেকে ৫২ জন ট্যুর অপারেটর যুক্ত ছিলেন এই আয়োজনে।
এ নিয়ে ভুটান গুরো অ্যাডভেঞ্চার্সের সিইও শ্রী প্যাল্ডেন বলেন, পর্যটকরা অল্প সময়ের জন্য বেড়াতে আসেন। তাদের কাছে প্রতিটি সময় মূল্যবান। সন্ধ্যার পর যদি পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে কেউ আগ্রহী হতে চাইবেন না। কক্সবাজারকে জনপ্রিয় করতে চাইলে সন্ধ্যার পর বিনোদনের আয়োজন করতে হবে বাংলাদেশকে।
চার দেশের ট্যুর অপারেটরদের নিয়ে ট্যুরজম বোর্ডের এ আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক (মিডিয়া) মো. ইউনুস।
তিনি বলেন, এ উদ্যোগের ফলে আমরা আমাদের দেশকে তাদের সামনে উপস্থাপনের সুযোগ পেলাম। এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো বাড়বে।
ভোরের আকাশ/নি