দেশের অন্যতম বড় আমবাজার কানসাটে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। দিনে দুই থেকে চার ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব আম পাঠাতে মৌসুমজুড়ে ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিকের ক্যারেট। আম নষ্টরোধে বিগত কয়েক বছর ধরে বেড়েছে ক্যারেট ব্যবহার। অধিক মুনাফা লুটতে জেলাজুড়ে তৈরি হয়েছে ক্যারেট সিন্ডিকেট।
এক বছরের ব্যবধানে একটি ক্যারেটের দাম বাড়িয়েছে ১০০ টাকা। এতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন আম ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে আম বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আলোচনাও হয়েছে। তারপরও এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি প্রশাসন।
প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, দ্রুত অভিযান চালিয়ে সিন্ডিকেট ভাঙা হবে। কানসাট বাজারের আম আড়তদার ইয়াকুব আলী বলেন, কাঁচা ও পাকা আম পরিবহনের সময় নিরাপদ রাখতে প্লাস্টিকের ক্যারেট ব্যবহার করা হয়। এতে আমের গুণগত মান ঠিক থাকে। বাজারে বিক্রি করতেও সুবিধা হয়।
তিনি জানান, গত আম মৌসুমে কানসাট বাজারে একটি খালি ক্যারেট কিনেছেন ৯০-৯৫ টাকায়। এবার একই ক্যারেট কিনতে হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এতে আমের অধিকাংশ টাকা ক্যারেটেই চলে যাচ্ছে।
আম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, আম পরিবহনে বিগত বছরগুলোতে বাঁশের তৈরি খাঁচি ব্যবহার করা হতো। এতে আম নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা নিরাপদ হিসেবে ক্যারেট ব্যবহার করছেন। আমও নিরাপদ থাকছে। ব্যবসায়ীদের চাহিদা দেখে জেলায় ক্যারেট সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। গুটিকয়েক ব্যবসায়ী অধিক লাভের আশায় লাখ লাখ ক্যারেট মজুদ করে রেখে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
এতে মজুদদাররা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি আম ব্যবসায়ীরা। অপর ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ক্যারেট সিন্ডিকেটের সদস্যরা শক্তিশালী। তারা জেলা নিয়ন্ত্রণ করে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে একেকটি ক্যারেটের কেনা দাম ১০০ টাকার উপরে না। তারপরও দ্বিগুণ দামে এখানে বিক্রি করছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে ক্যারেটের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
ক্যারেট ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্যারেট সংগ্রহ করতে হয়। কেনা এবং পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি ক্যারেটে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ টাকা লাভ করে বিক্রি করা হয়।
অপর ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, দেশে আমদানি কমে যাওয়ায় মোকামে ক্যারেটের দাম বেড়ে গেছে। যার কারণে এখন একটি ক্যারেট কিনতে হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। খরচ বাদ দিয়ে সামান্য লাভ রেখে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করি। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক ট্রাক নিয়ন্ত্রক (দালাল) বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে প্রতি মৌসুমে চার মাস প্রায় ৬০ হাজার গাড়ি আম দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। প্রতি গাড়ির আমে ক্যারেট ব্যবহার হয় ৫০০টি। এসব ক্যারেট স্থানীয় বাজার থেকেই কিনতে হয়। সব মিলিয়ে জেলায় শত কোটি টাকার ক্যারেট বাণিজ্য হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, ক্যারেট মজুদদারদের সভা করে সতর্ক করা হয়েছে। অধিক দামে ক্যারেট বিক্রি করলে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভোরের আকাশ/নি