logo
আপডেট : ১ জুন, ২০২৩ ১৩:১৮
গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের নামে বিষ বাণিজ্য
লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের নামে বিষ বাণিজ্য

কুমিল্লার লাকসামের একটি খামার

কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, লালমাই, বরুড়া, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের নামে অবৈধ বিষ বাণিজ্যের বিষয়টি এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বাড়ছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

 

জেলার ৫টি উপজেলার কতিপয় গরু খামারি অবৈধ বিষ বাণিজ্যে মোটা অংকের টাকার লাভবান হওয়ার টার্গেট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ ছাড়া এলাকার গৃহস্থ, খামারি ও ব্যবসায়ী এবং ছোট-বড় খামারিরা গরু মোটাতাজাকরণ করতে ব্যবহার করেছেন দেশি-বিদেশি কোম্পানির হরেকরকম ইনজেকশন, ট্যাবলেট ও পাউডার।

 

ওইসব গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে মারাত্মক ক্ষতিকর বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ যেন লোকজনের রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। অথচ ওইসব মোটাতাজাকরণ ওষুধ ব্যবহার কিংবা প্রয়োগে বৈজ্ঞানিক ধারণা ও প্রচলিত নিয়মকানুনের সাথে কোনো মিল নেই।

 

চলমান গ্রীষ্মের শেষ মুহূর্তে এ অঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা না থাকলেও সবুজ ঘাস পাওয়া যায় না। তার ওপর গো-খাদ্যোর মূল্য বৃদ্ধি ও সংকট তীব্রভাবে দেখা দেয়। ক্যাটেল কেয়ার, ইনজ্যাইভিট, এনোরা, সেটরন, ক্যাটাপস, বার্নাফেট, বায়োমিক্স, ভারমিক, কৃমিনাশক ওষুধ ও এডি-৩সহ বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করতে দেখা যায়।

 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ভারত সীমান্তের প্রায় অর্ধশতাধিক চোরা পথ দিয়ে আসা গরুগুলো বিভিন্ন রোগবহনকারী জীবাণু নিয়ে এলাকার লোকজন মারাত্মক আতংকে আছে। অ্যানথাক্স এমন একটি রোগ এ রোগের জীবাণু দীর্ঘদিন পরও আবার নতুন করে বিস্তার ঘটাতে পারে। গরু মোটাতাজাকরণে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সাধারণত হাঁপানি রোগে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

 

অথচ ডেক্সমেথাসন, ডেকাসন, বেটামেথাসন ও প্যারিয়্যাকটিন জাতীয় ভিটামিন অতিমাত্রা ব্যবহারেই গরু মোটা ও তাজায় পরিণত হয়ে উঠে বলে ওইসব পণ্য ব্যবহারে ধুম পড়েছে এলাকার গরু খামারি ও ব্যবসায়ীদের মাঝে।

 

এদিকে পাবনা ব্রিড, অস্ট্র্রেলিয়ান-ফ্রিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ানা ব্রিড, পাকিস্তানি সাহিয়াল ব্রিড ও হেকটোফিন জাতীয় ব্রেন্ড এবং স্থানীয় ব্রিডিং পদ্ধতি ছাড়াও লোকাল ক্রস ব্রিড নামে গরু বর্তমানে মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় বড় করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি ওষুধগুলোর মধ্যে মাইকোডিন, ডেক্সউইন, ডেক্সামিন, স্টেরন, ডি-কট, ডেক্সভেট, হিস্টানল, সিয়ামভেট, নিরাভেট, ডেক্সকট, ডেকাসন, ওরাডেক্স, ফিডভেট, ফিডেক্সানল-এস, প্রিডনিভেট, প্রেডনিসলন, প্যারিয়াকট্রিন, ভিটাভেটসহ হরেকরকম স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় ফার্মেসিগুলোতে বিক্রি হতে দেখা যায়।

 

কোরবানি ঈদে বিভিন্ন হাটবাজারে এসব গরু স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে বেচাকেনা করে থাকেন বড় বড় গরু ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসন গরুর বাজারগুলোতে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপত্তা বিধানে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। যাতে দেশি-বিদেশি গরু ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে এ অঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে গবাদিপশু বেচাকেনা করতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি