logo
আপডেট : ৩ জুন, ২০২৩ ১০:৩৮
দেশের প্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র
পুকুরে একসঙ্গে মাছ চাষ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন
মো. নাদিম হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

পুকুরে একসঙ্গে মাছ চাষ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেশের প্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র

পাশাপাশি থাকা দুটি পুকুরের ওপরে সারি সারি সাজানো সোলার প্যানেল। বাতাস ও ঢেউ সামলাতে সক্ষম ফ্লোটারের ওপরে ভাসছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ সোলার প্যানেল। এর নিচেই রয়েছে বিভিন্ন জাতের মাছ। এভাবেই পুকুরের পানির ওপরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পানির নিচে মাছ চাষ করা হচ্ছে একই সঙ্গে।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চালু হয়েছে পুকুরের পানিতে দেশের প্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র। সদর উপজেলার আতাহার-বুলনপুরের নবাব অটো রাইস মিলের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করে এ ভাসমান সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যাচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।

 

নবাব অটো রাইস মিলের নবাব মৎস্য খামার প্রকল্পের পুকুরে স্থাপন করা হয়েছে এ ভাসমান সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র। সোমবার বিকেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি জুলস পাওয়ার লিমিটেড।

 

এই ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২.৩ মেগাওয়াট হলেও প্রাথমিকভাবে পিক আওয়ারে (সূর্যের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকাকালীন ৪ ঘণ্টা) গত তিন দিনে ঘণ্টাপ্রতি সর্বোচ্চ ১.৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।

 

এই প্রকল্পের মাধ্যমে সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে ও কোনো প্রকার জমির ব্যবহার না করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।

 

অন্যদিকে, সোলার প্যানেল পানির ওপরে ভাসমান অবস্থায় থাকায় টেকসই হয় বেশিদিন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে এক বছর এই ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

 

পরে মাছ চাষের কোনো ক্ষতি না হলে ব্যাপক হারে বাড়ানো হবে এমন প্রকল্প। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ১০ পয়সায় পাওয়ায় মিল মালিকের সাশ্রয় হচ্ছে প্রতি ইউনিটে আড়াই টাকা করে। পুকুরের অর্ধেক জায়গায় সোলার প্যানেল থাকায় ও সোলার প্যানেল সরানোর সুযোগ থাকায় মাছের পরিচর্যায় নেই কোনো সমস্যা।

 

জুলস পাওয়ার লিমিটেডের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ৬ একর আয়তনের একটি জলাশয়ের ৫০ শতাংশ জমি ব্যবহার করা হয়েছে।

 

এখানে যেহেতু মাছ চাষ হচ্ছে তাই ফুডগ্রেড প্লাস্টিকের ফ্লোটার ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে মাছের ক্ষতি না হয়। এর লাইফ টাইম হচ্ছে প্রায় ২৫ বছর। ঝড় কিংবা টর্নেডোর কথা বিবেচনায় অ্যাংকরিং সিস্টেমও রাখা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে কাজ করছি। এতদিন ধরে ঢাকায় কাজ করলেও এই প্রথম ঢাকার বাইরে এবং ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভিজ্ঞতা এই প্রথম। এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাপেক্ষ। আগামীতে আরো ব্যাপকভাবে এর বিস্তার ঘটাতে চাই আমরা।

 

মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, নবাব অটোরাইস মিলে দৈনিক ২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। দিনের বেলা সোলার বিদ্যুৎ থেকে চাহিদার প্রায় পুরোটাই সরবরাহ দেয়া যাবে। আর কারখানায় কোনো কারণে লোড না থাকলে বিদ্যুৎ চলে যাবে জাতীয় গ্রিডে।

 

জাতীয় গ্রিড থেকেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

 

নবাব গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার নাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মাছ চাষ। সেই পুকুরে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করেছি। ইতোমধ্যে গত ৩ দিন ধরে আমাদের পুকুরে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। ভালো ফলাফল এলে এটা বাংলাদেশের অন্যান্য মৎস্য খামারের জন্য একটা লাভজনক প্রকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হবে।

 

প্যানেলে মাছ চাষে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না জানিয়ে নাহিদ হোসেন আরো বলেন, আমরা এখানে আগে থেকেই রুই, কাতলার মতো দেশি মাছ চাষ করছি। আমরা কয়েকবার মাছও ধরেছি। পানির অংশে যেহেতু কোনো স্থাপনা নেই, তাই মাছ ধরতেও কোনো সমস্যা হয়নি। আবার চাইলে সৌর প্যানেলগুলো এদিক সেদিক স্থান পরিবর্তনও করা যায়।

 

প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ খরচ বাবদ কতটা সাশ্রয়ী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ আড়াই মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ প্রয়োজন রয়েছে। কারখানার জন্য মাসে গড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। প্রকল্প সফল হলে খরচের ৭০ শতাংশ সাশ্রয় হবে বলে আশা করছি।

 

জুলস পাওয়ার লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক হাসানুল জামি বলেন, প্রকল্পটি দেখভাল ও পর্যবেক্ষণের জন্য এখানে সর্বদায় আমাদের লোকজন থাকে। পুকুরে প্রায় ১৫০০ সৌর প্যানেল রয়েছে।

 

এছাড়াও নবাব অটো রাইস মিলের ছাদের ওপর রয়েছে আরো ২২০০ সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। পুকুরের ওপরে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করতে গত ৪ মাস ধরে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালানো হয়েছে।

 

উল্লেখ্য, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১২ বছর জুলস পাওয়ার লিমিটেডকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবে নবাব অটো রাইস মিল। এরপরের ১৫ বছর সম্পূর্ণ ফ্রিতে বিদ্যুৎ পাবে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি। আনুষ্ঠানিকভাবে শিগগিরই এর উদ্বোধন করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

 

ভোরের আকাশ/নি