logo
আপডেট : ৩ জুন, ২০২৩ ১০:৫৯
নয়নাভিরাম মারমেইড রিসোর্ট ও সুইমিংপুল
এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার

নয়নাভিরাম মারমেইড রিসোর্ট ও সুইমিংপুল

মারমেইড রিসোর্ট ও সুইমিংপুল

সব ঋতুতে প্রাণবন্ত ও সজীব কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণে মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন রেজুখাল লাগোয়া মারমেইড রিসোর্ট এবং সুইমিংপুল। দেখতে যেমন অসাধারণ ঠিক তেমনি প্রাকৃতিক সম্পদ ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ভরপুর।

 

সাগরের জলতরঙ্গ বিশাল বিস্তৃত সি বিচ, শ্রাবণের বৃষ্টিভেজা নরম তুলতুলে বালু ও দো-আঁশ মাটির মিশ্রণে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য, জোৎস্না রাতের আলোআঁধারি পরিবেশ, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত এবং প্রকৃতি ও মানুষের তৈরি সাজসজ্জায় অনন্য চির যৌবনা প্রমীলাদেবী পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে অবিরত। নির্জন পরিবেশে সব সৌন্দর্য একসঙ্গে উপভোগ করতে চাইলে চলে যেতে হবে মারমেইড রিসোর্ট ও সুইমিংপুলে।

 

আবদুর রাজ্জাক পেশায় একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। বাড়ি দিনাজপুর, থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে।

 

সম্প্রতি স্বপরিবারে কক্সবাজার ঘুরে গেছেন। নির্জন পরিবেশ খুঁজতে গিয়ে চলে আসেন মারমেইড রিসোর্টে। সেখানে টানা পাঁচ দিন।

 

তিনি মারমেইড রিসোর্টের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, চোখের সামনে অপূর্ব এই দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় বুঝতেও পারা যায় না। সকালে ওঠে শুনলাম কিছুটা দূর থেকে ভেসে আসছে সমুদ্রের গর্জন।

 

কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম সমুদ্র এসে গেছে চোখের সামনে। দুপা হাঁটলেই নীল সমুদ্র আপনার পা ভিজিয়ে দিয়ে যাবে। সমুদ্র দেখতে দেখতে যখন নাস্তা বা বিকেলের চা খাচ্ছেন, তখন পেছনে বেজে চলেছে সুরের মূর্ছনা।

 

মারমেইড বিচ রিসোর্টটি যেহেতু কক্সবাজার মূল শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে। সেখানে সাগরের পাড় ঘেঁষে যে পথ দিয়ে যেতে হয় তার একদিকে ঢেউ, সমুদ্রের গর্জন, ঝাউ-নারকেলের সারি, অন্য পাশে পাহাড়। এই রিসোর্টে ঢোকার পর আপনি ভুলেই যাবেন কোথা থেকে, কতটা পথ পাড়ি দিয়ে আপনি এখানে এসেছেন। পৃথিবীর কোনো কোলাহল, চিন্তা-ভাবনা আপনাকে আর স্পর্শ করতে পারবে না। ফুল, লতাপাতা দিয়ে ঘেরা বারান্দায় আপনাকে অভ্যর্থনা জানানো হবে ডাব আর ফুল দিয়ে।

 

শুনশান নীরব এই রিসোর্টটিতে রয়েছে অনেকগুলো কটেজ। সাজানোর ঢংটা থাই ও ইন্দোনেশীয় স্টাইলে হলেও, কটেজগুলো সাজানো হয়েছে সম্পূর্ণ দেশীয় জিনিস দিয়ে। দারুণ সব হারিকেন ও কাগজে মোড়ানো বাতি, চারিদিকে বড় বড় গাছ, ফুলের গাছ, সবজি বাগান এক কথায় বলতে হয় এলাকাটি ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড়।

 

ঘরের ভেতরের ডেকোরেশনও ফাটাফাটি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে-তকতকে। পুরো রিসোর্ট জুড়ে অসংখ্য ফ্রেসকো ও দেয়াল চিত্র। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট ছোট জলাধার। তাতে ফুটে আছে নীলপদ্ম। কটেজের সঙ্গে লাগোয়া সুইমিংপুল। কোনোকিছুরই অভাব বোধ করবেন না ট্যুরিস্টরা।

 

সুন্দরের পাশাপাশি আর যে দিকটি মোহিত করবে, তা হচ্ছে এই রিসোর্টের ফ্যাসিলিটিগুলো। পর্যটকদের সুবিধার কথা ভেবে ছোট ছোট কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ের দিকে নজর দেয়া হয়েছে, যা অন্য কোথাও পাবেন না। যেমন, এখানে-সেখানে অনেক বসার জায়গা, সাগরের পাশ ঘেঁষে ছোট ছোট তাকিয়া, সাগরের মধ্যে জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন আকৃতির বসার জায়গা তৈরি করা আছে।

 

এর মানে হচ্ছে আপনি যেন যেখান থেকে ইচ্ছে, যেভাবে ইচ্ছে, যখন ইচ্ছা সাগর দেখতে পারেন। শুধু কি চেয়ার? আছে লেখার টেবিল, ছবি আঁকার জন্য ইজেল এবং সবচেয়ে বড় কথা পানির বোতল, যাতে হঠাৎ পানির পিপাসা পেলে হাতের কাছেই পাওয়া যাবে পানি। আর আছে জায়গায় জায়গায় অসংখ্য প্লাগ পয়েন্ট, যেন কোনোকিছুতে চার্জ দিতে হবে বলে আড্ডায় বা গল্পে বিঘ্ন না ঘটে।

 

দূরের কটেজে যাওয়ার জন্য টুকটুক রাখা আছে এবং সেই টুকটুকে সহজে ওঠার জন্য আছে ছোট টুলের ব্যবস্থাও। রিসোর্টের ঠিক মাঝখানে ও সমুদ্রের ধারে রয়েছে বাচ্চাদের জন্য দুটো খেলার জায়গা। রয়েছে ছোটদের ও বড়দের জন্য বাইসাইকেল। মন চাইলে সাইকেল নিয়ে পুরো জায়গাটা টহল দেয়া যাবে, সাগরের পাশ ঘেঁষে ঘুরে আসতে পারবেন আপনি।

 

কীভাবে যাবেন: কক্সবাজার শহর থেকে প্রাইভেট গাড়ি ও সিএনজি অটোরিকশায় গেলে মাত্র ১৫/২০ মিনিটের পথ। যেতে যেতে দেখা মিলবে দরিয়ানগর, হিমছড়ি পর্যটন স্পট। চাইলে সেখানেও কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পারেন। নির্জন মেরিনড্রাইভ সড়ক এখন কিছুটা হলেও ব্যস্ত সড়ক। তবে ভারি যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ রয়েছে এ সড়কে।

 

হাতের বায়ে পাহাড় আর ডানে বিশাল বিস্তৃত সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি ও ঢেউয়ের উর্মিমালা। রাস্তার সারিসারি গাছ, মাঝে মাঝে দেখা মিলবে সারিবদ্ধ ঝাউবীথি। হিমছড়ি ও আশপাশের পাহাড়ে বহমান একাধিক ঝর্ণাধারা।

 

ভোরের আকাশ/নি