logo
আপডেট : ৩ জুন, ২০২৩ ১৩:০৮
মুখিকচু চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা
যশোর প্রতিনিধি

মুখিকচু চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা

যশোরের শার্শায় মুখিকচুর চাষ বেড়েছে

যশোরের শার্শায় মুখিকচু (সারকচু) চাষ লাভজনক হওয়ায় এ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। কচু চাষে তুলনামূলক সার কম লাগে। এছাড়া রোগবালাই কম, উৎপাদন ভালো ও স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য পাইকারি বাজার আছে। তাই নিয়মিত কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের উৎসাহ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

 

মুখিকচু চাষে আগ্রহ বাড়ায় এ কাজে নিম্নআয়ের পরিবারের সদস্যদের খন্ড কালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। সব মিলিয়ে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় প্রতি মৌসুমে বৃদ্ধি পাচ্ছে মুখিকচু চাষ।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছর শার্শা উপজেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে মুখিকচু সবজি চাষ হয়েছে। অনুক‚ল আবহাওয়ায় রোগবালাই কম। কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় গত বছরের চেয়ে এ বছর ৫ হেক্টর বেশি জমিতে মুখিকচুর চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নে ৮৫ হেক্টর জমিতে।

 

এর মধ্যে কেরালখালী-বাসাবাড়ী, বসন্তপুর-পাড়িয়ারঘোপ, কন্দর্পপুর-ভায়না এলাকায়ই ৫০ হেক্টর জমিতে মুখিকচুর চাষ হয়েছে। উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, শত শত বিঘা জমিতে দেশি ও উচ্চফলনশীল জাতের মুখিকচু চাষ করা হয়েছে। সেই কচুর সবুজ পাতা-গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। বাসাবাড়ী বাজারে কথা হয় পাড়িয়ারঘোপ গ্রামের মুখিকচু চাষি সিদ্দিক বিশ্বাসের সঙ্গে।

 

তিনি বলেন, ‘এ বছর সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে মুখিকচু চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং তেমন কোনো রোগবালাই না হওয়ায় প্রতি বিঘায় ৭০-৮০ মণ কচু উৎপাদন হবে। কচু তোলার সময় বৈরি আবহাওয়া না হলে সব খরচ বাদ দিয়ে ২ লক্ষাধিক টাকা লাভ হবে।’

 

পাড়িয়ারঘোপের আবু জাফর ও আবদুল্লাহ, কেরালখালির বাবু, মিজান, তোতা, ইমরান, সালাম ও বিপ্লব, ভায়নার আজগার, বসন্তপুরের সাধন ও নৈহাটি গ্রামের তবিসহ বেশ কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা হয়।

 

তারা জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহ ও পরামর্শ অনুযায়ী মুখিকচু চাষ করে তারা গত বছর বেশ লাভবান হয়েছিলেন। এ বছরও চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন। সেই সঙ্গে ভালো দাম পাওয়ারও আশা করছেন। বিঘাপ্রতি ৪০-৪৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে মনে করছেন তারা।

 

এ কাজে এলাকার নিম্নআয়ের পরিবারের সদস্যরা কচুর পরিচর্যা, কচু তোলা, পরিষ্কারসহ পরিবহনে খন্ড কালীন কাজ করছেন। এ কাজ করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করে তারা কিছুটা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।ভায়না গ্রামের গোলাম হোসেন বলেন, ‘এ বছর দেড় বিঘা জমিতে মুখিকচু চাষ করেছি। আগাম কচু তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু করেছি। কেজিপ্রতি দাম ৮০-১০০ টাকা। প্রতি কাঠায় ৩ মণ কচু পাচ্ছি। কচুর দাম ও ভালো ফলন পেয়ে আমি খুশি।’

 

বাসাবাড়ী বাজারের হালিমা ট্রেডার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে চাষিরা পুরোদমে মাঠের মুখিকচু না উঠালেও স্থানীয় বাজারে কয়েকজন কৃষক কচু তুলতে শুরু করেছেন। শুরুতে দামও বেশ চড়া। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই পুরোদমে বাসাবাড়ী পাইকারি বাজারে শত শত মণ কচু উঠতে শুরু করবে।’

 

এ বাজারে শার্শা উপজেলা ছাড়াও ঝিকরগাছা উপজেলার চাষিরাও উৎপাদিত কচু গত বছরের ন্যায় এ বছরও পাইকারি হিসেবে বিক্রি করবেন। তখন প্রতিদিন এ বাজারের ৩০-৩৫টি আড়ত থেকে হাজার মণ কচু পাইকাররা ট্রাক-পিকআপযোগে সিলেট, ঢাকা, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, মাগুরা, যশোর ও সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাবেন।

 

বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষক ভ্যান, ইজিবাইক, নসিমনযোগে কচু বাজারে নিয়ে আসবেন। এ সময় চাষি, আড়তদার ও পাইকারদের হাকডাকে মুখরিত হয়ে উঠবে বাসাবাড়ী পাইকারি বাজার। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অসিত কুমার মন্ডল বলেন, ‘মুখিকচু চাষে উদ্বুদ্ধ করা ও নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হয়। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে কচু চাষ। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে পুরোদমে কচু উঠতে শুরু করবে।

 

নিজামপুর ইউনিয়নের মধ্যে আমার ব্লক এলাকায়ই সবচেয়ে বেশি ৫০ হেক্টর জমিতে কচু চাষ করা হয়েছে।’ শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মন্ডল বলেন, ‘মুখিকচু চাষে কোনো মাঠ প্রদর্শনী নেই। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা থাকবে। সবসময় সরকার সবকিছু দেন না। যখন যেটা দেন, আমরা সেটা চাষিদের দিয়ে থাকি।’

 

ভোরের আকাশ/নি