এজাজ কায়েস, খুলনা: অব্যাহত লোকসান ও ব্যাংক ঋণসহ বহুমুখী সমস্যার ভারে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে খুলনার লবণশিল্প। নানামুখী সমস্যার দায়ে ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের ৩৮ কারখানার মধ্যে ২৪টিই বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন লবণশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ২২ হাজার শ্রমিক। সচল থাকা ১৪টি কারখানার ৯টি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললেও বাকি ৫টি বিকলপ্রায়।
একসময় এ অঞ্চলের উৎপাদিত লবণ দিয়ে দেশের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ পূরণ হলেও বর্তমানে এ শিল্পে সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো লবণনীতি না থাকায় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতায় এ শিল্প আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৮২ সালে খুলনা অঞ্চলে লবণশিল্পের যাত্রা শুরু হয়। আর তখন থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এ শিল্পে অগ্রগতি হতে থাকে। একইসঙ্গে খুলনার লবণ কারখানাগুলো থেকে উৎপাদিত লবণ দেশের মোট চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশ পূরণ করতে সক্ষম হয়। ১৯৮২-৮৩ সালে খুলনায় গড়ে ওঠে খুলনা সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, রূপসা সল্ট ও সুন্দরবন সল্ট নামের তিনটি লবণ কারখানা।
এরপর ধীরে ধীরে এ শিল্পের অগ্রগতি হতে থাকে। এরই ফলে গড়ে ওঠে আরো ৩৫টি লবণ কারখানা। সেগুলোর মধ্যে পদ্মা সল্ট, মধুমতি সল্ট, তিতাস সল্ট, যমুনা সল্ট, রাজাপুর সল্ট, গফফার সল্ট, রমনা সল্ট, সাউদিয়া সল্ট, ভৈরব সল্ট, ইছামতি সল্ট, রূপালী সল্ট, শাপলা সল্ট, মিতালী সল্ট, ইমাম সল্ট, জাহানাবাদ সল্ট, বরিশাল সল্ট, শেখ সল্ট, জাহিদ সল্ট, মেঘনা সল্ট উল্লেখযোগ্য।
জানা যায়, সহজ নদী যোগাযোগের কারণে এসব কারখানার অধিকাংশ খুলনার রূপসা ও ভৈরব নদের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠে। এখানকার উৎপাদিত লবণ দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌ-সড়ক লাইনে পাঠানো হতো। এ শিল্পে ২২ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছিল। লবণ উৎপাদনের কাঁচামাল ‘ক্রুড লবণ’ সংগ্রহ করা হতো কক্সবাজার হতে। আর তা দিয়েই চলত পরিশোধন বা রিফাইরিং ক্রাশিং ও আয়োডাইসড করণ প্রক্রিয়া।
উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ায় দামও ছিল কম। এখানকার লবণের মান ভালো হওয়ায় সারা দেশে সমাদৃত হয়ও অনেক বেশি। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এখানকার লবণশিল্পের সুনাম। এ শিল্প থেকে অর্থনৈতিকভাবে সরকারের অনেকটা অগ্রগতি সাধিত হয়। কিন্তু এমন একসময় দাঁড়ায় ব্যাংক ঋণের অভাব, ক্রমাগত লোকসান ও সঠিক নীতিমালার অভাবসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে এ শিল্পের উদ্যোক্তারা দিন দিন অনুৎসাহিত হয়ে পড়ে।
একইসঙ্গে ১৯৯১-এর সাইক্লোন, ১৯৯৭-৯৮ সালের বন্যায় কক্সবাজারের লবণ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামালের ক্ষেত্রগুলো লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ফলে লবণ ক্রুড সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে এখানকার লবণ কারখানায় ধস নামে। এরপর শুরু হয় প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে দেদার লবণ আমদানি। ফলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে ধরা দেয় এ শিল্প।
এতে করে একের পর এক বন্ধ হতে থাকে লবণ কারখানাগুলো। পরপর ২৪টি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এ শিল্প ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়েছে।
যে ৯টি কারখানা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে, তা হলো রাজাপুর সল্ট, সুন্দরবন সল্ট, মধুমতি সল্ট, তিতাস সল্ট, রমনা সল্ট, গফফার সল্ট, যমুনা সল্ট, পদ্মা সল্ট ও পূরবী সল্ট। হাতেগোনা এ কারখানাগুলো টিকে থাকলেও সরকারিভাবে কোনো নিয়মনীতি না থাকায় এখন এর তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।
ভোরের আকাশ/নি