ফরিদপুর হয়ে গোপালগঞ্জের আড়িয়াল খাঁ ও মধুমতি নদীতে মিশেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ কুমার নদ। নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৮ সালে কুমার নদ পুনর্খনন ও ৬১টি পাকা ঘাটলা নির্মাণকাজ শুরু করে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৫০ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
প্রকল্পের মাধ্যমে কুমার নদে ১০ কোটি ঘনমিটার পানিপ্রবাহের মাধ্যমে ২৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে সেচসুবিধা দিয়ে ৩৪ হাজার ১০৪ হেক্টর টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের কথা। তবে বিভিন্ন স্থানে খননের পরপরই নদী ভরাট হয়ে গেছে। দখল-দূষণে একসময়ের স্রোতঃস্বিনী কুমার নদ বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
ফরিদপুর শহরের বুকে কুমার নদের দুই পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ দখলদারদের নানা স্থাপনা। এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করতে না পারায় শহরের বুকে কুমার নদ পুনর্খনন করা যায়নি। দখল ও দুষণে জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় শহরবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পৌরসভার সব ড্রেনের ময়লা পানি ফেলা হচ্ছে কুমার নদে। এসব ড্রেন দিয়ে আসছে স্যুয়ারেজ লাইনের পয়ঃবর্জ্য। নদীর বুকজুড়ে এখন কচুরিপানা আর ময়লার স্ত‚প জমে এঁদো ডোবার মতো হয়ে গেছে। পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পরিণত হয়েছে মশার জন্মস্থানে। এই পানিতেই নিতান্ত বাধ্য হয়ে কিছু মানুষ গোসল করছেন।
প্রকল্পের ২৫০ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে পুনঃখনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও গতি ফিরেনি এই কুমার নদের। প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে কাক্সিক্ষত সুফল মিলেনি। নদী তীরের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি। শহরের বর্জ্য বুকে নিয়ে কুমার নদ এখন ময়লা-আবর্জনার এক ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
ফরিদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মনিরুল ইসলাম বলেন, শহরের বুকে কুমার নদে বাসাবাড়ি ও বাজারের বর্জ্য না ফেলার জন্য আমরা নদীর পাড়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছি। আর শহরের ড্রেনের মুখগুলোর বিকল্প পথ খুঁজে বের করার বিষয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, কুমার নদের পাড়ে বিভিন্ন অবকাঠামো থাকায় শহরের মধ্যকার দুই কিলোমিটার পুন:খনন করা সম্ভব হয়নি। তবে এখানে নদীর নাব্য রয়েছে। এ ছাড়া নদীর দূষণরোধে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।
ফরিদপুর পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বলেন, ফরিদপুরবাসীর প্রত্যাশা এই নদ সংস্কার দূষণমুক্ত করে নাব্য বজায় রেখে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা জরুরি। তা না হেেল এই অঞ্চলের কৃষি ও ব্যবসায় এর প্রভাব পড়বে ব্যাপকভাবে।
ফরিদপুর শহর গড়ে উঠেছে এই নদের দুই পারে। এই শহরকে টিকিয়ে রাখতে হলে কুমার নদকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। এজন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে এমনটিই দাবি জনগণের।
ভোরের আকাশ/নি