logo
আপডেট : ৮ জুন, ২০২৩ ১৪:৪৫
যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ডিঙ্গি নৌকা
মাদারীপুর প্রতিনিধি

যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ডিঙ্গি নৌকা

ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ডিঙ্গি নৌকা

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ চলবল এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় দুটি বিদ্যালয় ও এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ডিঙ্গি নৌকা।

 

নবগ্রাম-গির্জাবাড়ী-দক্ষিণ চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা। এ সড়কের গীর্জাবাড়ী খালে নেই কোনো ব্রিজ। জরাজীর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণকে।

 

শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকেই সড়কটি পানিতে ডুবে যায়। আর কার্তিক মাসের প্রথম দিকে জেগে ওঠে। সড়কটির বেহাল দশা হওয়ায় দক্ষিণ চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয় ও দক্ষিণ চলবল খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী ও দক্ষিণ চলবল এলাকার প্রায় দেড় হাজার জনগণের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হচ্ছে ডিঙ্গি নৌকা।

 

বছরের ৬ থেকে ৮ মাস ডিঙ্গি নৌকা আর বাকি মাসগুলো জল কাদা ও ধান ক্ষেতের আল দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে যথাসময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাতায়াত করতে না পারায় ঘটছে দুর্ঘটনা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বিদ্যালয় দুটিতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে।

 

জানা যায়, মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চলের অবহেলিত দক্ষিণ চলবল গ্রামের বিপুলসংখ্যক জনগণের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও জনসাধারণের উদ্যোগে ১৯৪৩ সালে ৩৭নং চলবল খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে দান করা হয় এক একর জমি।

 

বিদ্যালয় দুটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অবহেলিত এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে বিদ্যাপীঠ দুটি। ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বছরের পরীক্ষার ফলও সন্তোষজনক। দক্ষিণ চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ১৩। পাশেই রয়েছে ৩৭নং দক্ষিণ চলবল খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি হরেকৃষ্ণ পাগলের আশ্রম।

 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২১ এবং শিক্ষক রয়েছে ৫ জন। বিদ্যালয় দুটির লেখাপড়ার মান সন্তোষজনক হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা নিজ উপজেলা ও অন্যান্য উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বিদ্যালয় দুটি ও হরেকৃঞ্চ পাগলের আশ্রমটি মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এবং স্কুলের পড়ালেখার মান ভালো থাকায় গোপালগঞ্জ এলাকার অনেক শিক্ষার্থীরাও দক্ষিণ চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে আসে এবং অভিভাবকদের অনেকেরই তাদের সন্তানদের অত্র বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করানোর আগ্রহ থাকলেও বাঁধ সাধে নাজুক যোগাযোগ অবস্থা।

 

যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আশ্রমে প্রার্থনা করার জন্য আসা ভক্তদের আসা যাওয়ায় বিঘ্ন ঘটছে। যাতায়াতের রাস্তা না থাকার কারণে প্রতিদিনই ছোট ডিঙ্গি নৌকা বেয়ে স্কুলে যেতে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়টিতে নৌকায় যাতায়াতে মাঝে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। বর্ষা মৌসুমে ছোট ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় পানিতে পড়ে গিয়ে বই, খাতা ও পোশাক পরিচ্ছদ ভিজে যায়। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ারও শঙ্কা থাকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময় শিক্ষার্থীরা জমির আইল দিয়ে আসতে গিয়ে ধানক্ষেতে পড়ে বইখাতা ভিজে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

 

এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বলেন, আমাদের দুটি বিদ্যালয় ও এলাকায় যাতায়াতের জন্য যোগাযোগ অবস্থা খুবই খারাপ। নবগ্রাম থেকে দক্ষিণ চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কটি সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যায়। এতে এলাকার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণকে আষাঢ় মাস থেকেই ডিঙ্গি নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা নির্মাণ করা প্রয়োজন।

 

হরেকৃঞ্চ পাগল সেবাশ্রম সংঘের সভাপতি হরিপদ হালদার বলেন, প্রতিবছর আশ্রমে অনেক বড় বড় অনুষ্ঠান হয়। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ভক্তবৃন্দ আসে। কিন্তু রাস্তা না থাকায় আসা যাওয়ায় ভক্তদের অনেক সমস্যা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সড়ক নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

 

দক্ষিণ চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজন চন্দ্র হালদার বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবদি অত্যন্ত সুনামের সাথে পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রতিবারই শতভাগ পাশ।

 

এখানে অত্যন্ত মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় একটি চারতলা ভবন বরাদ্দ হলেও তা বাতিল হয়ে যায়। নবগ্রাম মিশন বাড়ি থেকে দক্ষিণ চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে সাবেক ইউপি সদস্য ভরত চন্দ্র সরকারের বাড়ি এবং ভক্তবাড়ির ব্রিজ থেকে মেজর জয়ধরের বাড়ির ব্রিজ পর্যন্ত একটি রাস্তা নির্মাণ খুবই প্রয়োজন।

 

ভোরের আকাশ/নি