logo
আপডেট : ৯ জুন, ২০২৩ ১১:৫০
লোডশেডিং ও দাবদাহ থেকে আপাতত স্বস্তি
শাহীন রহমান

লোডশেডিং ও দাবদাহ থেকে আপাতত স্বস্তি

শাহীন রহমান : প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দাবদাহ। তীব্র গরম আর লোডশেডিংয়ে জনজীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তবে এই লোডশেডিং ও ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে সাময়িক স্বস্তি মিলছে। ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে বাড়তি বিদ্যুৎ। ফলে গত বুধবার রাত থেকেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই রাজধানীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়। এতে গরম না কমলেও তাপপ্রবাহের হাত থেকে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে।

 

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। ফলে তাপমাত্রা কমে ভ্যাপসা গরম থেকেই রেহাই মিলবে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। জুনে ক্রমেই তা তীব্র আকার ধারণ করে। জুনের এই তাপপ্রবাহ ৪৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা উঠে যায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। তীব্র এই দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে লোডশেডিং। বিশেষ করে গত ৫ জুন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পায়রা। গরম আর লোডশেডিং মিলে এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে প্রতিদিন ৩ হাজার মেগাওয়াট করে লোডশেডিং দিতে হয়েছে। গ্রামের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

 

তবে বুধবার থেকে পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। বুধবার দুপুরের পর থেকে লোডশেডিং কমতে থাকে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, যা বিকেল পর্যন্ত চলে। যদিও হালকা বৃষ্টির কারণে আবহাওয়ায় এক ধরনের গুমোট ভাব রয়েছে। তবে আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ থেকে বৃষ্টিপাত বেড়ে স্বস্তি ফিরে আসবে। পাশাপাশি তারা এও জানান, দাবদাহ আরো কয়েকদিন চলবে।

 

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) মুখপাত্র এবিএম বদরুদ্দোজা খান জানান, সঞ্চালন লাইনের জটিলতায় ১৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বুধবার রাত ৩টা ৪৩ মিনিটে আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের পরিমাণ ছিল ৬০৭ মেগাওয়াট। বুধবার দুপুর ২টা ৪৬ মিনিটে সঞ্চালন লাইনে অনাকাঙ্ক্ষিত ট্রিপিংয়ের কারণে আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পিজিসিবির প্রকৌশলীদের দ্রুত পদক্ষেপে এদিন বিকেল ৩টা ৬ মিনিটে লাইনটি পুনরায় চালু করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের যাবতীয় কারিগরি প্রস্তুতি সম্পন্নের পর রাত ৩টা ৪৩ মিনিটে আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।

 

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এসএস পাওয়ারও উৎপাদন শুরু করছে। এতে পায়রা বন্ধের ফলে বিদ্যুতের যে ঘাটতি লোডশেডিং ও দাবদাহ তৈরি হয়েছে, তা কমতে পারে। পায়রা বন্ধের ফলে বিদ্যুতের বড় ঘাটতি তৈরি হয়। এখন এই ঘাটতি পূরণের জন্য ভারতের ঝাড়খন্ডে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাড়তি ৩০০ মেগাওয়াট নেয়া হচ্ছে। আর বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাওয়া যাবে ৫০০ মেগাওয়াট। এর সঙ্গে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে সব মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তে পারে। এতে লোডশেডিং কিছুটা সহনীয় হয়ে আসতে পারে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

 

জানা গেছে, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট আছে। দিনে তারা গড়ে ৭৪০ মেগাওয়াট সরবরাহ করছে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এ কেন্দ্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আর বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে (এস আলম গ্রুপ ও চীনের সেপকো থ্রির মালিকানাধীন) ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট আছে। এর প্রথমটিতে পরীক্ষামূলকভাবে এখন সর্বোচ্চ ২০০ মেগাওয়াট করে দিনে সরবরাহ করছে তারা। এটি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে এক সপ্তাহ পর। অন্যদিকে আগামী ২৫ জুন থেকে আবার উৎপাদনে ফিরতে পারে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আদানির বিদ্যুৎ বেড়ে এক হাজার মেগাওয়াট হবে। বাঁশখালী থেকে ৫০০ মেগাওয়াট আসবে ১৩ জুন। তেলচালিত কেন্দ্র থেকে এক হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। ফলে লোডশেডিং পরিস্থিতি এমেই স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

 

এদিকে আবহাওয়া পরিস্থিতিও ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। বুধবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে ৭৪ মিলিমিটার। এ ছাড়া সন্দ্বীপে ৪, ফেনীতে ১, হাতিয়ায় ১০, কক্সবাজারে ১২, কুতুবদিয়ায় ৫৫ ও টেকনাফে ৪ মিলিমিটার এবং মোংলা ও ভোলায় সামান্য পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে রাজধানীতেও সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।

 

তারা জানায়, সারা দেশেই মেঘলা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, মূলত বাতাস না থাকায় গুমোট গরমের অনুভূতি বাড়ছে। তারা জানায়, আজ শুক্রবারের মধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে। এতে স্বস্তি মিলতে পারে। এদিকে তারা জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে দেশের উপকূলে এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে, তাতে আস্তে আস্তে গরম কমে আসবে।

 

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, দেশের সব জায়গায় সমান দাবদাহ নেই। হালকা বা মাঝারি বৃষ্টি শুরু হলেও মুষলধারে বৃষ্টির জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/আসা