logo
আপডেট : ১৪ জুন, ২০২৩ ১১:৩৭
বিবিএসের প্রতিবেদন
মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক

মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে

দেশের মানুষের গড় আয়ু আবারো বাড়ার খবর দিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। একইসঙ্গে বেড়েছে মানুষের জন্মহারও।

 

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০২১ সালের তুলনায় দেশের মানুষের গড় আয়ু কিছুটা বেড়েছে। ২০২২ সালের চূড়ান্ত হিসাবে দেশের মানুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭২.৪ বছর, যা ২০২১ সালে ছিল ৭২.৩ বছর। ২০২০ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২.৮ বছর। অন্যদিকে ২০২২ সালে দেশে স্থল জন্মহার বেড়ে ১৯.৩ জন হয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, দেশের মানুষ এখন গড়ে ৭২ বছর ৫ মাস বেঁচে থাকছে। বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অনুযায়ী ২০২২ প্রবিদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

 

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস ভবনে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স-২০২২-এর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএস ডিজি (চলতি দায়িত্ব) পরিমল চন্দ্র বসু।

 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন। বিবিএস প্রকাশিত প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়, আগের বছরের চেয়ে মানুষের গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে জন্মহার বাড়ার খবর দিয়েছে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। জন্মনিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপের মধ্যেও এ হার বেড়ে যাওয়ার জন্য কোভিড মহামারিকালে সবার ঘরবন্দি থাকাকে কারণ মনে করছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। বাংলাদেশ স্যাম্পল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, ২০২২ সালে দেশে স্থল জন্মহার বেড়ে ১৯.৩ জন হয়েছে।

 

অর্থাৎ প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে গত এক বছরে ১৯.৩টি শিশু জন্ম নিয়েছে। এ স্থল জন্মহার ২০২১ সালের তুলনায় কিছুটা বেশি। ওই বছর দেশে স্থ‚ল জন্মহার ছিল ১৮.৮ জন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সাল থেকে টানা চার বছর দেশে স্থ‚ল জন্মহার বৃদ্ধি ঘটেছে। গত বছরের জন্মহার ছিল প্রতি হাজারে ১৮.৮ জন। ২০২০ ও ২০১৯ সালে জন্মহার ছিল যথাক্রমে ১৮.১ জন এবং ২০১৮ সালে ছিল ১৮.৩ জন।

 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সারা দেশে ২ হাজার ১২টি ইউনিট, ৩ লাখ ৬ হাজার ৯৫৪টি খানা এবং ১৩ লাখ ২ হাজার ৭৮৮ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে প্রতি বছর এ প্রতিবেদন তৈরি করে বিবিএস।

 

জরিপের তথ্যানুযায়ী, গতবারের মতো এবারো পুরুষের তুলনায় নারীর গড় আয়ু বেশি। পুরুষের গড় আয়ু যেখানে ৭০.৮ বছর, সেখানে নারীরা গড়ে ৭৪.২ বছর বাঁচেন। ২০২১ সালে দেশে পুরুষের গড় আয়ু ছিল ৭০.৬ বছর, আর নারীর ৭৪.১ বছর। এ হিসাবে পুরুষের গড় আয়ু বেড়েছে ০.২ বছর, নারীর বেড়েছ ০.১ বছর।

 

এতে বলা হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার বছরে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৭.২ বছর। এতে আরো দেখানো হয়, গত দুই বছরে দেশে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের লোক বাড়েনি।

 

বিবিএস থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২ সালে দেশে মুসলমানদের সংখ্যা ৮৯ শতাংশ, যা ২০২১ সালেও ছিল ৮৯ শতাংশ। ২০২০, ২০১৯, ২০১৮ সালেও মুসলমানদের হার ছিল ৮৮.৪ শতাংশ। এছাড়া ২০২২ এবং ২০২১ সালে অন্যান্য ধর্মের লোকের হার দাঁড়িয়েছে ১১ শতাংশ, যা ২০২০, ২০১৯, ২০১৮ সালে এ হার ছিল ১১.৬ শতাংশ।

 

অনুষ্ঠানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ে শামসুল আলম বলেন, ‘গত বছর কেন জন্মহার বেড়েছে, এ বিষয়ে আর হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। কোনো গবেষণাও নেই। তবে অনুমান, করোনা মহামারির সময় দেশের সাধারণ মানুষ বেশিরভাগ সময় ঘরে কাটিয়েছে। একই সময়ে বিদেশ থেকে বেশিহারে প্রবাসীরা দেশে এসেছে। এ দুই কারণে জন্মহার বাড়তে পারে। এ দুটি জন্মহার বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ হতে পারে।

 

বাংলাদেশ স্যাম্পল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২ জরিপে বলা হয়, ২০২২ সালে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার (যত জন জন্মেছে, তা থেকে মৃত্যুর সংখ্যা বাদ দিয়ে) প্রতি হাজারে ১.৩৫ জন। তার আগের বছর ২০২১ সালে এ হার ছিল ১.৩০ জন। গত বছর প্রতি হাজার প্রজননক্ষম নারীর বিপরীতে প্রজনন হার ছিল ৬৮ জন। ২০২১ সালে এ হার ছিল ৬৬ জন।

 

আলমগীর হোসেন বলেন, গত বছর স্থল মৃত্যুহার ছিল (প্রতি হাজারে) ৫.৮ জন। এর মধ্যে প্রতি হাজার জীবিত শিশু জন্মের বিপরীতে শিশু মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। এ হার ২০২১ সালে ছিল ২২ জন এবং ২০২০ ও ১৯ সালে ছিল ২১ জন। এর মধ্যে এক মাসের কম বয়সি শিশু মারা গেছে প্রতি হাজারে ১৭ জন। আবার ১ মাস থেকে ১১ মাস বয়সি শিশুর মৃত্যু হয়েছে ৮ জন। ১ থেকে ৪ বছর বয়সি শিশুর মৃত্যু হয়েছে প্রতি হাজার ১.৮ জনের।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগামী অর্থবছর থেকে আর প্রকল্প নেয়া হবে না বলে জানান। এটা সরকারের বার্ষিক স্বাভাবিক কাজ হিসেবে রাজস্ব বাজেটের আওতায় বরাদ্দ দিয়ে এ জরিপের কাজ পরিচালনা করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি