সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে ওই হাসপাতালে গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহাকেও বিশেষজ্ঞ সেবা প্রদানে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমতি ছাড়া তিনি কোনো প্রকার বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি দল সেন্ট্রাল হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে এসব নির্দেশনা দেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, সেন্টাল হাসপাতালের আইসিইউ ও জরুরী সেবার মানে যথেষ্ঠ ঘাটতি রয়েছে। সেজন্য ওটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডা. শেখ আদনান বলেন, ‘হাসপাতালের ওটি যদি ভালো হয়, তাহলে অনেককে আইসিইউতে নেওয়া লাগে না। ওটি থেকে রোগী আইসিইউতে গেল আইসিইউতে সেই স্ট্যান্ডার্ড নাই, তখন কী হবে? তখন ওই রোগীকে আরেক হাসপাতালে রেফার করা, দৌড়াদৌড়ি করা, পেশেন্ট এক্সপায়ার হওয়া, খারাপ হওয়া। আইসিইউর স্ট্যান্ডার্ড নাই, সো আইসিইউর স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করো, তারপর ওটি স্টার্ট করো।’
নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আরো কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যা আজ থেকেই কার্যকর হবে। এসব নির্দেশনার কোনটির ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সম্প্রতি কুমিল্লা থেকে প্রসব বেদনা নিয়ে সেন্টাল হাসপাতালে আসা প্রসূতি মাহবুবুর রহমান আঁখি চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ওঠে। তিনি ডা. সংযুক্তা সাহার কাছে কয়েকমাস ধরে চিকিৎসা নিয়ে আসছিলেন। ঘটনার দিনে সংযুক্তা সাহা উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে জানানো হয় ডা. সংযুক্তা সাহা আছেন। তার অবর্তমানে অন্য চিকিৎসকরা আখির অস্ত্রোপচার করেন। পরে আখির সন্তানটি মারা যায়। আখির অবস্থাও সংকটাপন্ন। তাকে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চিতিৎসা চলছে। এঘটনায় আখির স্বামী ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। আসামীরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আসামীপক্ষের আইনজীবীরা জামিন চাইলে আদালত শুনানি শেষে জামিন নাকচ করে বৃহস্পতিবার তাদের কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন।
মাহবুবুর রহমান আখির চিকিৎসা জনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার সেন্ট্রাল হাসপাতালে পরিদর্শনে যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গঠিত পরিদর্শন টিম। এরপর তারা ওটি বন্ধের নিদের্শ দেয়।
পরিদর্শন টিমের পরিদর্শন পরবর্তী নির্দেশনা বলা হয়েছে- ডা. সংযুক্তা সাহা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিখিত অনুমোদন ছাড়া পরবর্তীতে সেন্ট্রাল হাসপাতালে কোন বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না।
আইসিইউ ও জরুরি সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে- মাহবুবুর রহমান আখির পরিবারের নিকট থেকে গৃহীত চিকিৎসা বাবদ সকল খরচ এবং চিকিৎসা জনিত জটিলতার যাবতীয় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবেন।
বর্ণিত রোগীর চিকিৎসায় জড়িত সকল চিকিৎসকের এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র বিএমডিসিতে প্রেরণ করা হবে বিএমডিসি হতে চিকিৎসকের নিবন্ধন বিষয়ক সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদালতে চলমান মামলায় অভিযুক্ত ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা যাবতীয় খরচ সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বহনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করলে বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়ায় নিস্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্রাদি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য পরিবার মন্ত্রণালয় প্রেরণ করা হবে পরবর্তীতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/আসা