logo
আপডেট : ১৭ জুন, ২০২৩ ১১:০৮
সম্পাদকীয়
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘটনায় আরো সতর্ক থাকতে হবে

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘটনায় আরো সতর্ক থাকতে হবে

সম্প্রতি একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত সাড়ে পাঁচ বছরে অন্তত ১৬৪টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত দুই বছরে এ সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের খবর। ক্যাম্পগুলোতে হত্যাকান্ড, অপহরণ, গোলাগুলি অনেকটা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই।

 

আমরা শুরু থেকেই এ বিষয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা। একসময়ের শান্তিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এখন অপহরণ আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয় সাধারণ মানুষের।

 

স্থানীয় বাসিন্দার পাশাপাশি সাধারণ রোহিঙ্গারাও অপহরণের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়-জঙ্গলে আস্তানা গড়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে সন্ত্রাসীরা। মুক্তিপণ দিলেও আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ফেলে লাশ মাটির গর্তে পুঁতে রাখা হচ্ছে। পরে সেসব কঙ্কাল উদ্ধার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরিস্থিতি কত ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে ভাবুন তো?

 

জানা গেছে, কক্সবাজারের সীমান্ত জনপদ টেকনাফে গত ৬ মাসে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়েছে অন্তত ৬২ জনকে। গত ৪ জুন অপহরণের শিকার হয়েছে হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ হোসাইন সূর্য। তার পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। গত ২ জুন লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পাঁচ রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণ করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। মুক্তিপণ না দেয়ায় পরের দিন শনিবার রাতে এক যুবকের হাতের কবজি কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলোকে প্রতিহত করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা।

 

থানার তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১ নভেম্বর থেকে এ বছরের ৩০ মে পর্যন্ত সাত মাসে টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে আটটি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত ৫০। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০ জনকে। একই সময়ে অপহৃত অনেককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। জাতিগত নির্মূল অভিযানের ফলে ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

 

এর আগেও এখানে অবস্থান করছিল ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আর্থসামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এবং এর দায়ভার বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে রাখা কঠিন কাজ বটে।

 

শুধু ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নয়, ক্যাম্পের বাইরেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গেও বিভিন্ন সময় সংঘর্ষ লেগে যায়। স্থানীয় অনেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর হাতে অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছে।

 

নানাভাবে তারা অপরাধ প্রবণতায় জড়িত। এরা আক্রোশী মনোভাবের। সব বিবেচনা করেই প্রশাসনকে অত্যন্ত কঠোর হতে হবে। অন্যথায় আরো অপরাধ বাড়তে পারে। যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বটে।

 

আশা করছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব ধরনের অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দক্ষতার পরিচয় দেবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে গোয়েন্দা নজরদারি। স্থায়ীভাবে পুলিশ ক্যাম্প বসাও এখন সময়ের দাবি।

 

ভোরের আকাশ/নি