logo
আপডেট : ১৭ জুন, ২০২৩ ১১:৫৮
নতুন জাতের তরমুজ চাষে ভাগ্যবদল
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

নতুন জাতের তরমুজ চাষে ভাগ্যবদল

২০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন শামীম

হতাশা নিয়ে ওমান থেকে দেশে ফেরেন শামীম আহম্মেদ। এরপর কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। কয়েক মাস বেকার থাকার পর ইউটিউবে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদের ভিডিও দেখেন। কিছুদিন পর শুরু করেন হলুদ (গোল্ডেন ক্রাউন) ও কালো (ব্ল্যাক কুইন) জাতের তরমুজ চাষ। এ তরমুজ বিক্রি করে তিন মাসের ব্যবধানে খরচ বাদে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।

 

শামীম আহম্মেদ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের জংলী গ্রামের এলাহী মন্ডলের ছেলে। জংলী গ্রামে নিজেদের ২০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। অল্প সময়ে এমন ফসল চাষ করে সাড়া ফেলেছেন। তাকে দেখে এ জাতের তরমুজ আবাদের কথা ভাবছেন স্থানীয় কৃষকরা।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁশের চালার ওপর জাল দিয়ে মাচার ছাউনি দেয়া। পুরো মাচা ভরে আছে সবুজ পাতায়। মাচার নিচে ঝুলছে হলুদ ও কালো রংয়ের তরমুজ। তরমুজগুলো যাতে পড়ে না যায়, সে জন্য জাল দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। বাহারি তরমুজগুলো দেখেতে প্রতিনিয়ত ক্ষেতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা।

 

দীর্ঘ ৯ বছর ওমানে ছিলাম জানিয়ে শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘দেশের বাইরের জীবনটা ছিল অনেক কষ্টের। হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে কৃষিকাজ করার কথা ভাবি। উপজেলা কৃষি অফিসে গেলে তারা উচ্চফলনশীল ফসল চাষের কথা জানান। এরপর ইউটিউবে বিভিন্ন ফসলের আবাদ কীভাবে করতে হয়, সেগুলো দেখি। একসময় কৃষি কর্মকর্তা গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের কথা বলেন। পরে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০ শতক জমিতে হলুদ ও কালো জাতের তরমুজ চাষ করি। এতে ভাগ্যবদল হয়েছে।’

 

শামীম আরো বলেন, ‘প্রথমে বীজ সংগ্রহ করি। জমিতে কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। এ জন্য হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করেছি। সেইসঙ্গে মালচিং ব্যবহার করায় সেচ ও শ্রমিক খরচ অনেক কম হয়েছে। ২০ শতক জমিতে মাত্র ১৩ হাজার টাকা খরচ করেছি। এ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি।’

 

যখন চাষ শুরু করি তখন অনেকে বলেছিলেন এ এলাকায় তরমুজ হয় না, গাছ কেটে ফেলতে হবে উল্লেখ করে এই তরুণ কৃষক বলেন, ‘বীজ রোপণের ৬৫-৭০ দিনের মাথায় ফলন পেয়েছি। দেখতে বাঙ্গির মতো হলেও ভেতরটা টকটকে লাল এবং খেতে খুবই মিষ্টি। ক্ষেতে এখনো ১২০০-১৫০০ মতো তরমুজ আছে। একেকটির ওজন আড়াই থেকে তিন কেজি। ৭০ টাকা কেজি দরে ক্রেতারা ক্ষেত থেকেই নিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছি, দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারব।’

 

একই এলাকার কৃষক আলী আক্কাস আলী বলেন, ‘আমি কলা, বেগুন, ঝিঙা ও শসা চাষ করি। এর আগে এই এলাকায় এমন তরমুজ চাষ কখনো হয়নি। শামীম প্রথম চাষ করেছেন। খুবই অল্প সময়ে ফলন পেয়েছেন।’ স্থানীয় কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বিষমুক্ত হওয়ায় এই তরমুজ খুবই ভালো। আমি চাষ করার কথা ভাবছি। এর ওপর প্রশিক্ষণ নেব।’

 

একই এলাকার কৃষক শরীফ আলী বলেন, ‘মাচায় তরমুজ চাষের কথা জানতাম না। এখন চোখের সামনে দেখছি। আগামীকে আমিও আবাদ করব।’ শামীমের বাবা এলাহী মÐল বলেন, ‘প্রথমে মনে করেছিলাম ফলন হবে না। কিন্তু এখন দেখছি, আসলেই লাভজনক। কম সময়ে তরমুজ ধরেছে অনেক বেশি। আগামীতে আরো বেশি জমিতে চাষ করব।’

 

শামীমের চাষ দেখে এলাকার অনেক কৃষক এ জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়েছেন বলে জানালেন স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ অন্য ফসলের তুলনায় কম সময়ে অধিক লাভজনক। তবে এ এলাকায় চাষটা চ্যালেঞ্জিং। শামীমের সাফল্য দেখে অনেক কৃষক চাষাবাদে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আগামীতে চাষাবাদ বাড়বে।’

 

উপজেলা কৃষি অফিসার দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, ‘যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে শামীমকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। দুই মাসের মধ্যে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ অন্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি। আশা করছি, আগামীতে উপজেলায় ২০ বিঘা জমিতে এ তরমুজ আবাদ হবে।’

 

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘কৃষিকে লাভজনক ও বাণিজ্যিক করার লক্ষ্যে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আমরা তরমুজের মতো নিরাপদ বিভিন্ন সবজির ১৪ হাজার ৩১০টি প্রদর্শনী স্থাপন করব। এতে কৃষকরা চাষাবাদে আরো উদ্বুদ্ধ হবেন।’

 

ভোরের আকাশ/নি