logo
আপডেট : ১৮ জুন, ২০২৩ ১০:২৭
সম্পাদকীয়
বকশীগঞ্জে সাংবাদিক হত্যা, কোনোভাবেই অপরাধী যেন ছাড় না পায়

বকশীগঞ্জে সাংবাদিক হত্যা, 
কোনোভাবেই অপরাধী যেন ছাড় না পায়

আমাদের দেশে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। এবার জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর প্রতিনিধি ও একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন।

 

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ১০ বছরে এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন ৩০ সাংবাদিক। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ৫৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, মামলা, হুমকি ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচার হওয়ার নজির খুব কমই। সাংবাদিক হত্যাকান্ডের কোনোটার বিচারই শুরু হয় না, কোনোটা চার্জশিটে আবদ্ধ, কোনোটা আবার তথ্যপ্রমাণের অভাবে লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে আটকে যায়। ফলে বিচার না হওয়ায় একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটেই চলছে।

 

জানা গেছে, বুধবার অফিসের কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন গোলাম রাব্বানী নাদিম ও তার সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু। পথে বকশীগঞ্জ পাথাটিয়ায় পৌঁছালে সামনে থেকে অতর্কিত আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে ফেলে দেয়া হয়। এরপর দেশীয় অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তাকে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায় এবং তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। সে সময় সহকর্মী মুজাহিদ তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।

 

এর আগে গত ১৪ মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জামালপুরে নাদিমসহ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহামুদুল আলম বাবু। ১৪ জুন মামলাটি খারিজ করেন আদালত।

 

নিহত গোলাম রব্বানীর স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আগেও তিনি নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই হামলা করে আমার স্বামীকে হত্যা করেছেন।

 

এ ঘটনায় পুলিশ ৬ জনকে আটক করেছে। বলাই বাহুল্য, বর্তমানে সাংবাদিকদের জীবন চরম অনিরাপদ। দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হিসেবে সাংবাদিকতায় নিয়োজিতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’। একদিকে এমন আইন ও নানারকম ভয়ভীতি-হুমকির কারণে সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত হয়ে উঠছে; অন্যদিকে শারীরিকভাবে হামলা ও হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের।

 

এসব হামলা-নির্যাতন সাংবাদিকতা পেশাকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে এবং তথ্য প্রকাশে বাধা দেয়ার মধ্য দিয়ে তা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকেও খর্ব করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি এটা দুঃখজনক। এটা আমাদের ব্যর্থতা, তদন্ত যারা করছেন তাদের ব্যর্থতা। গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যাকান্ডের জড়িতদের চিহ্নিত করে ত্বরিত বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি