ইমরান খান: রাজধানীর তুরাগে ফাতেমা আক্তার মুক্তা নামে এক নারী খুনের ঘটনায় ওই বাড়ির কেয়ারটেকার আলাল উদ্দিনকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর গত ১০ জুন আদালতকে জানিয়ে তাকে প্রথমে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে শুক্রবার নেয়া হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। ওই দিন রাতেই ফোনে স্বজনদের জানানো হয়, তিনি মারা গেছেন।
আলালের স্বজনদের অভিযোগ, বাসা থেকে তুলে নেয়ার সময় সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন তিনি। ডিবির নির্যাতনেই আলালের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে তুরাগ থানার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আলালকে আটকের বিষয়টি তাদের জানানো হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলাল উদ্দিন তুরাগের বাউনিয়া মহিষাগার এলাকার একটি সাততলা ভবনে কেয়ারটেকারের কাজ করতেন।
গত ৫ জুন ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় ফাতেমা আক্তার নামে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরের দিন আলালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ডিবি উত্তরা বিভাগের একটি টিম। এরপর থেকে তার বিষয়ে আর কিছুই জানানো হয়নি তার পরিবারকে। শুক্রবার রাতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, আলালের মৃত্যু হয়েছে।
পরিবারের অভিযোগ, ডিবির নির্যাতনে আলালের মৃত্যু হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলেন, তাকে বিনা কারণে ফাতেমা আক্তারের হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আটক করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ডিবি যখন আলালকে আটক করে তখনই তার পা ভাঙা ছিল। পরে আদালতের আদেশের ভিত্তিতে তাকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পঙ্গু হাসপাতালে ৫-৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার এক পর্যায়ে তার রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যায়। তখন পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বুকে ব্যথা অনুভব করায় ১৬ জুন বিকেলে চিকিৎসকের পরামর্শে পঙ্গু হাসপাতাল থেকে আলালকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭টা ১০ মিনিটে চিকিৎসক কার্ডিয়াক ফেইলিউরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
আলালের ডেথনোটে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের চিকিৎসক উম্মে হাবিবা উল্লেখ করেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিট থেকে ১০ মিনিট তিনি আলাল উদ্দিনকে পরীক্ষা করেন। এ সময় তার পালস (নাড়ির স্পন্দন) ও বিপি (রক্তচাপ) ছিল না।’ ওই হাসপাতালে নেয়ার পর এই চিকিৎসকই আলালকে প্রথম পরীক্ষা করেন।
এদিকে আলালের চাচাতো ভাই জাহিদ বলেন, আলাল যে বাসার কেয়ারটেকার ছিলেন, সেই বাসার দ্বিতীয় তলায় এক নারী খুন হয়েছেন। ঘটনার পর থানা পুলিশ আলালকে গ্রেপ্তার করেনি। কিন্তু ৬ জুন ডিবির একটি টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যায়।
ডিএমপির তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ফাতেমা আক্তারের হত্যার ঘটনায় তার স্বামীকে ইসমাইল হোসেন আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। ফাতেমার ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় ফাতেমার স্বামী আর অজ্ঞাত দুইজনকে আসামি করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করি।
এ ঘটনার সঙ্গে ওই বাসার কেয়ারটেকার আলাল কোনোভাবে সম্পৃক্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা আলালের কিছু সংশ্লিষ্টতা পেয়েছিলাম। পরে মামলাটি ডিবিতে চলে যায়। ডিবি আলালকে আটক করেছিল কিনা সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। ডিবি পুলিশ আলালকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। ডিএমপি ডিবি উত্তরের যুগ্ম কমিশনার খন্দকার নুরুন্নবী বলেন, তুরাগ থানা এলাকায় এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় জড়িত বাড়ির কেয়ারটেকার আলাল উদ্দিন। হত্যা করার সময় ওই নারীর সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে পায়ে আঘাত পান আলাল। তাকে গ্রেপ্তারের পর হত্যার দায় স্বীকারও করেছিলেন তিনি। শনিবার রাত ৮টার দিকে আলালের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ৬ জুন রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়া মহিষাগার এলাকার একটি ভবন থেকে ফাতেমা আক্তার মুক্তা নামে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্বামীসহ গত চার মাস ধরে ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করছিলেন তিনি। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার সন্দেহে ওই বাড়ির কেয়ারটেকার আলাল উদ্দিনকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ভোরের আকাশ/নি