logo
আপডেট : ২০ জুন, ২০২৩ ১১:২১
দেশজুড়ে বৃক্ষ রোপন, জলাভূমি রক্ষা ও বনায়ন-নদী খননে দুর্নীতি বন্ধের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশজুড়ে বৃক্ষ রোপন, জলাভূমি রক্ষা ও বনায়ন-নদী খননে দুর্নীতি বন্ধের দাবি

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের উষ্ণায়নের ফলে তীব্র তাপদাহের যন্ত্রণা থেকে জনজীবন ও কৃষিখাতসহ প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীসহ গণমাধ্যম নেতারা।

 

এজন্য দেশজুড়ে বৃক্ষ রোপন, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওড়সহ সব জলাভূমি ও বনাঞ্চল সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

 

বিশ্ব খরা ও উষ্ণতা দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) চত্বরে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তাঁরা এসব দাবি জানান।

 

ঢাকার গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং এ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ) এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

 

মানববন্ধনে বক্তারা বেদখল ও বিলুপ্ত নদ-নদীসহ প্রাকৃতিক জলাভূমি উদ্ধার, নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নের নামে বৃক্ষ নিধনসহ নদী খনন ও বনায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের আহ্বান জানান।

 

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল বলেন, আগামী বছরগুলোতে খরা ও তাপদাহের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নদীসহ সকল প্রাকৃতিক জলাভূমি ও বনাঞ্চল রক্ষা করতে হবে। বেদখল ও বিলুপ্ত সকল নদী-খাল খনন করে দুই তীরে পর্যাপ্ত গাছ লাগাতে হবে।

 

বিশিষ্ট এই পরিবেশকর্মী আরো বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হলে নদ-নদীগুলো রক্ষা করা যাবে না।

 

এ বিষয়ে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক এবং নৌখাতে পর্যাপ্ত অর্থবরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু নদী খননে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিলুপ্ত নৌপথ পুনরুদ্ধারে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জিত হয়নি। ফলে জনগণের প্রত্যাশা ও প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না।

 

একইভাবে দেশজুড়ে বনায়ন প্রকল্পের টাকাও হরিলুট হচ্ছে। সুতরাং নদী খনন ও বৃক্ষ রোপন প্রকল্পের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে বলে দাবি করেন আমিনুর রসুল বাবুল।

 

ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, এখন নিয়মিত বৃষ্টি হয় না, ঠান্ডা বাতাসও নেই। আগে শহর ও গ্রামে সড়কের দুই পাশে বড় বড় গাছ ছিল। এখন শহরের মধ্যে কিংবা দূরপাল্লার সড়কের পাশেও বড় গাছ দেখা যায় না।

 

তীব্র গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। এর কারণ ঢাকাসহ বড় শহরগুলো দিন দিন বৃক্ষশুন্য হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বৃক্ষ নিধন বন্ধ, সারা দেশে ব্যাপকহারে গাছের চারা রোপন এবং প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রক্ষা করতে হবে।

 

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে উপকূলীয় জনপদ।

 

তিনি বলেন, সাতক্ষীরাসহ সুন্দরবন উপকূলের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গেছে। তারা হিটস্ট্রোকে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক জলাভূমি ও বনাঞ্চল রক্ষার তাগিদ দেন তিনি।

 

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশ ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ বলেন, শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলো আমাদের রক্ষা করবে না। সংকট মোকাবিলায় আমাদেরই পথ খুঁজে নিতে হবে।

 

ডিআরইউর সিনিয়র সদস্য মশিউর রহমান বলেন, বর্তমান সংকট নিরসনের জন্য প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে। এজন্য সকল নদ-নদী, খাল-বিল খনন রক্ষা, ভরাট ও দখল হওয়া নদী ও নৌপথ উদ্ধার এবং নদীসহ সকল প্রাকৃতিক জলাভূমির পাশে পর্যাপ্ত বৃক্ষচারা লাগাতে হবে।

 

তিনি বলেন, নদীগুলো খননের জন্য সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে এবং এসব প্রকল্পে নদীগুলোর দুই পারে গাছ লাগানোর কথাও বলা আছে। কিন্তু নদী খনন না করে প্রকল্প কর্মকর্তারা শত শত কোটি টাকা লুটে নিচ্ছেন। ফলে সেখানে গাছ লাগানো হচ্ছে না।

 

এসসিআরএফ সভাপতি আশীষ কুমার দের সভাপতিত্বে এবং প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক মশিউর রহমান রুবেলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক লায়ন জাহাঙ্গীর আলম।

 

অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন এসসিআরএফের সহসভাপতি অমরেশ রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক জিলানী মিল্টন, অর্থ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক মশিউর রহমান রুবেল, প্রকাশনা ও দপ্তর সম্পাদক শেখ কালিমউল্ল্যাহ নয়ন প্রমুখ।

 

ভোরের আকাশ/নি